শিরোনাম: জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারিঃ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার যৌথ বাহিনীর অভিযানঃ তিন উপজেলায় স্থগিত হলো ভোট

বঙ্গবন্ধু,মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশঃ-(হাসান রাইয়ান)


প্রকাশের সময় :৮ আগস্ট, ২০১৭ ৮:৪৭ : অপরাহ্ণ 1439 Views

জিহানুর রহমান চৌধুরী (চট্রগ্রাম):-বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মেছিলেন,ধীরে ধীরে বেড়ে উঠলেন,একটি হারানো জাতিকে উদ্ধারের জন্য,জাতিকে একটি দেশ দেবার জন্য লড়ে গেলেন,জেলে গেলেন,তাঁর বাংলার জন্য-তাঁর বাঙালীর জন্য।একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ তিনি চেয়েছিলেন,সে দেশই হলো এই বাংলাদেশ।আর এই দেশের স্থপতিকে হত্যা করা হলো ১৫ আগস্ট’ ৭৫-এ। সেই থেকে জাতি হারালো তার পিতা,আর আমরা হারালাম তাঁর আদর্শ।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হচ্ছে-ভাষা আমাদের বাংলা,জাতিতে আমরা বাঙালী,ধর্মে আমরা নিরপেক্ষ। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল-এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী তথা শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের উন্নতি। তাদের ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের গ্যারান্টিসহ বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। শান্তি, স্বস্তি, শৃঙ্খলা ও জান-মালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা তথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাঙালীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর উপরি উক্ত আদর্শ-লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহত্তম ও গৌরবময় ঘটনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে যদিও বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অনুপস্থিত ছিলেন তবুও তাঁর প্রেরণা মুক্তিযুদ্ধে কার্যকর ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী জাতির বিজয় সূচিত হয়। কিন্তু জাতির জন্যে খুবই পরিতাপের বিষয় যে, স্বাধীনতা লাভের ৪৪ মাস না যেতেই নির্মমভাবে হত্যা করা হলো স্বাধীনতার নায়ককে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই কালো রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে শাহাদাত বরণ করেছিলেন তাঁর সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর দুই মুক্তিযোদ্ধাপুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, কনিষ্ঠ ভ্রাতা শেখ নাসের, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে ঘাতকরা হত্যা করে। বিশ্বে মানবজাতির ইতিহাসে এই হত্যাকান্ড একটি কলংকজনক অধ্যায় বলে পরিচিত হয়। এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের শাস্তি বা বিচার খুবই স্বাভাবিক ছিল কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার করতো দূরের কথা বরং খুনীদের রক্ষা করার জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল পাস করে খুনীদের নিরাপত্তা বিধান করল। হত্যাকান্ডের বিচার না করা চরম মানবতাবিরোধী ও গর্হিত কাজ। কিন্তু ১৯৭৫ থেকে পরবর্তী ২১ বছর কোনো উদ্যোগ ছিল না ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যার বিচারের। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ও ২৩ জুন সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল পাস হওয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধা অপসারিত হয়। ফলে ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর এই হত্যাকান্ডের মামলা দায়ের করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সহকারী আ.ফ.ম মহিতুল ইসলাম। ১৯৭৫ সালেই মহিতুল ইসলাম লালবাগ থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। থানার পুলিশ তখন এই বলে তার মামলা নেননি ‘যা বেটা ভাগ, নিজে মরবি, আমাদেরকেও মারবি’, সুদীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা বিচারের রায় আংশিক কার্যকর করতে পেরেছে। অবশিষ্ট পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় ঘোষণা ও আংশিক সম্পন্ন হওয়ায় এটা প্রমাণিত হয় যে, অপরাধীকে তার কৃতকর্মের জন্যে শাস্তি পেতেই হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এই ঐতিহাসিক রায় গণতন্ত্রের এক বিরাট জয়। জাতি দীর্ঘকাল যাবৎ যে কলঙ্কের বোঝা বহন করে আসছিলো, তা এই রায়ের ফলে কিছুটা হলেও মোচন হয়েছে। বাকী পলাতক খুনীদের ফাঁসি অবিলম্বে কার্যকর করে বাঙালী জাতি পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত হবে এমনটিই আজ জাতির প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধু, বাঙালী ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। বাঙালী জাতির ভাবমূর্তি ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র, কিংবদন্তীর মহানায়ক । যার সুদীর্ঘ আত্মত্যাগ, আন্দোলন, কারাবরণ, সংগ্রাম ও নেতৃত্বের ফলে বাঙালী জাতি তাদের নিজস্ব একটি আবাসভূমি-একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছে। তিনি হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জীবন একটি ইতিহাস, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ মুজিব শুধু একজন মানুষের নাম নয়, একটি দেশের নাম। একটি ভূ-খন্ডের নাম। একটি মানচিত্রের নাম। একটি জাতির নাম। শেখ মুজিব তোমার মৃত্যু নেই। তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী। তুমি আমাদের অভিবাদন ও সালাম গ্রহণ করো।বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা কিংবা বঙ্গবন্ধুচর্চা এদেশে যথেষ্ট হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার চেতনা দেশের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করতে বঙ্গবন্ধুচর্চা বাড়াতে হবে। সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধুর নামে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। তাই সরকারি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু গবেষণা বা চর্চার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য দাবী করছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সুখী- সুন্দর- সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে তার আদর্শকে সকলের হৃদয়ে ধারণ করে তা সর্বস্তরে বিস্তার করতে হবে।বঙ্গবন্ধু কোনদিন কোন লোভে বা ভয়ে বাঙালী জাতির কল্যাণ চিন্তা ত্যাগ করেননি। এমনকি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি আপন জনগণের কল্যাণ চিন্তা ত্যাগ করেননি কিংবা তিনি আপননীতি আদর্শ থেকে এতোটুকুও বিচ্যুতি হননি।এমন নেতা, এমন বন্ধু পাবার ভাগ্য পৃথিবীতে খুব কম জাতিরই ঘটেছে। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু কোন অংশেই কম শক্তিমান বা কম জনপ্রিয় নন।

“মৃত্যুর চেয়ে জীবন অনেক বড়ো,
এ কথা সবাই জানে,
কিন্তু কখনো মৃত্যুও বড়ো হয়
জীবনের শেষ দানে”

১৯৭১ সালে বন্দী বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে এদেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে। আবার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও আদর্শ নিয়েই বাঙালী জাতি একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলার প্রতিষ্ঠা করবেই-করবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!