শিরোনাম: লামা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত শতশত বসতবাড়ি জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারিঃ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার

সেই সেনাবাহিনী এই সেনাবাহিনী,ওপারে তান্ডব-এপারে সেবা


প্রকাশের সময় :৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ২:৩১ : পূর্বাহ্ণ 639 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-কুলসুম মিয়াদা।রোহিঙ্গা নারী।মধ্যবয়সী এই নারী গতকাল বুধবার সকালে দাঁড়িয়ে ছিলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌচনী নয়াপাড়া ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে।গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তার চেহারায় ছিল না কোনো অস্বস্তি।হাতে ছিল রিলিফ কার্ড।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকেই সেখানে বিরামহীন ত্রাণ বিতরণ করছিলেন।কুলসুম জানান,তার বাড়ি মিয়ানমারের মংডুর হাসসুরাতা এলাকায়।আট সন্তান, স্বামী,আপন দুই ভাই সবাইকে আগুনে পুড়িয়ে ও গুলি করে মেরেছে মিয়ানমারের সেনারা।তিনিই তার পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য।সব সন্তান হারানোর বেদনায় প্রতি মুহূর্তেই মোচড় দিয়ে ওঠে তার হূদয়।সদ্য ফেলে আসা সেই দুঃসহ স্ট্মৃতি তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। সারাজীবন এই নিদারুণ যন্ত্রণার স্ট্মৃতিটুকু নিয়ে তাকে বাঁচতে হবে।একটুখানি বাঁচার আশায় প্রিয় স্বামী আর নাড়িছেঁড়া ধন সন্তানদের লাশ পেছনে ফেলে ক্ষুৎপীড়িত অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তাকে বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে হয়েছে।তীব্র ক্ষুধায় কাতর যখন তিনি,ঠিক তখনই গতকাল সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন রিলিফ কার্ড।তাকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন ত্রাণের লাইনে।খাবার পাবেন বলে তিনি ভীষণ খুশি।অকপটে বললেন,ওপারে ওরাও তো সেনাবাহিনীর লোক,তারা অমানুষ।আমাদের কুকুরের মতো গুলি করে মারতে চেয়েছে।আর এপারে এরা আমাদের খাবার দিয়ে,পানি দিয়ে,আশ্রয়ের জন্য তাঁবু তৈরি করে দিয়ে প্রাণে বাঁচিয়েছে।কুলসুম মিয়াদার কথায় সমর্থন জানালেন ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় সবাই। লাইনের দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়ানো আবুল রহমান বললেন, প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে নৌকায় উঠে উত্তাল বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে যখন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে এসে পৌঁছলেন,তখন তিনি মৃতপ্রায়।প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে ট্রাকে করে নয়াপাড়া অস্থায়ী ক্যাল্ফেপ নিয়ে আসেন এ দেশের সেনাসদস্যরা।তাকে থাকার জন্য একটি তাঁবু দেন।এ যেন তার নতুন জন্ম।তিনি আরও বলেন,তার আপন ভাই আবুল হারিসের তিন যুবতী কন্যাকে তাদের সামনে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সেনারা।শত আকুতি আর হাতে-পায়ে ধরেও তিনি ঠেকাতে পারেননি।দু’দিন পর তাদের লাশ পান রাস্তার ধারে।তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।পরে তারা পালিয়ে চলে আসেন।তিনি বলেন,ওপারে সেনারা নারী ধর্ষণ করছে,ধর্ষিতাদের নির্মমভাবে জবাই করছে আর এপারের সেনারা নারীদের সম্মান দিচ্ছে, অন্তঃস্বত্ত্বা নারীদের ত্রাণের লাইনেও দাঁড়াতে হচ্ছে না। তাদের খাবার আর ত্রাণ সেনারা তাঁবুতে পৌঁছে দিচ্ছেন।
এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর মেজর রেজাউল করিম জানালেন,প্রতিদিন এ কেন্দ্র থেকে তারা সাড়ে তিন থেকে চার হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন।সরেজমিনে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাল্ফপ আর ত্রাণ বিতরণের স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল একাধারে তীব্র গরম আবার দুপুরের পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়েই সেনাসদস্যরা আপ্রাণ পরিশ্রম করছেন।উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে সারাদেশ থেকে আসা ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জাকী এবং সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার নবী।তারা ত্রাণ সামগ্রী গুলো বুঝে নিয়ে সেগুলো স্থানীয় কন্ট্রোল রুমে পৌঁছুচ্ছিলেন।উখিয়ার বালুখালী ক্যাল্ফপ-২-এর ৪ নম্বর বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কাজ তদারক করছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর নাজমুস সাকীব।তিনি জানালেন,তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর ত্রাণ শৃগ্ধখলা ফিরেছে।প্রতিটি পরিবার যেন সহায়তা পায়,সেদিকে তারা লক্ষ্য রাখছেন।সেনাসদস্যদের এই তৎপরতায় খুশি স্থানীয় সাধারণ মানুষও।তাদের মধ্যে যুবক ও তরুণদের অনেকেই সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।সরেজমিনে দেখা গেছে,বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ হয়ে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাল্ফপগুলোতে।শিশুদের মুখে তুলে বনরুটি খাইয়ে দিয়েছেন সেনাসদস্যরা।তাদের জন্য ত্রাণ হিসেবে গুঁড়ো দুধ দিয়েছেন।গতকাল টেকনাফের মৌচনী নয়াপাড়া ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন কক্সবাজারের রামু ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা সেনাবাহিনীর ‘রণজয়ী বীর আটত্রিশ’ ইউনিটের সদস্যরা। আর লেদা শরণার্থী ক্যাল্ফেপ দিনভর ত্রাণ বিতরণ করেছেন ‘অগ্রণী সাঁইত্রিশ’ ইউনিটের সদস্যরা।আর হোয়াইক্যং ক্যাল্ফেপ ত্রাণ বিতরণ করেছেন ‘সুদৃঢ় ত্রিশ’ ইউনিটের সদস্যরা।রাখাইন রাজ্যে নিরীহ বেসামরিক রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনার নিন্দায় মুখর এখন সারাবিশ্ব। কেবল সেনাবাহিনী ও পুলিশ নয়,রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণ থেকে রেহাই পেতে পলায়নরত রোহিঙ্গাবাহী নৌকায় গুলিও চালিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি)।গুলিতে নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত তিন হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ছয় হাজার নিখোঁজ রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।এখনও নাফ নদের তীরে মাঝেমধ্যেই শিশু ও নারীর মরদেহ ভেসে আসছে।মানুষ কতটা নির্দয় হতে পারে এসব ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করছে,মিয়ানমারের বিশেষ করে উত্তর মংডুর রাইমাবিল গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ অধিবাসীকে সে দেশের রাখাইনদের সহায়তায় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা আগুনে পুড়িয়ে খুন করেছে।শিশুদের জবাই করেছে। নারীদের ধর্ষণ করে হত্যা করছে।আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এসব অপকর্ম ফলাও করে প্রচার হয়েছে।গতকাল টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের পুথিন পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী নূরজাহান জানালেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও এ দেশের জনগণকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। আজ যদি এ দেশে আশ্রয় না পেতাম তাহলে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা হতো না।’ কথা বলার সময় তিনি হাত উঁচিয়ে সেনাসদস্যদের দেখিয়ে বললেন, ‘দেখুন এ দেশের সেনাবাহিনী আমাদের ত্রাণ দিচ্ছে, খাবার দিচ্ছে, দেখাশোনা করছে আর ওপারের সেনাবাহিনী আমাদের পুড়িয়ে মেরেছে,জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।ওপারের সেনারা আমাদের মা,বাবা,ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনকে আগুনে জ্বালিয়ে,গুলি ও জবাই করে হত্যা করেছে। এমনকি আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ করে ক্ষান্ত হয়নি, বেশিরভাগকে মেরে ফেলেছে।’ নূরজাহানের বাড়ি মিয়ানমারের গজবিল গ্রামে। ২০ দিন আগে মিয়ানমার সেনাদের অভিযানের মুখে এপারে পালিয়ে আসেন তিনি। এ সময় মো. আয়েজ নামে আরেক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ জানালেন, ‘বাংলাদেশের সেনারা মানুষ।মিয়ানমারের সেনারা জানোয়ার,অমানুষ।’ এদিকে, টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আবারও ধোঁয়া দেখা গেছে।নাফ নদীর ওপারে মিয়ামারের ওই এলাকার নাম ঢেকুবুনিয়া,ওখানে রোহিঙ্গা গ্রাম রয়েছে। অন্যদিকে,রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা এখনও অব্যাহত রয়েছে।গতকালও প্রায় তিন হাজার পরিবার বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে বিভিম্ন সূত্রে জানা গেছে।(((সমকাল অনলাইন ভার্সন,সাব্বির নেওয়াজ ও আবদুর রহমান, টেকনাফ থেকে)))

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!