শিরোনাম: লামা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত শতশত বসতবাড়ি জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারিঃ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বলাভের পথে


অমিত গোস্বামী (সিএইচটি টাইমস অনলাইন) প্রকাশের সময় :২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ৮:২৬ : অপরাহ্ণ 539 Views

২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। জানি, আজ সারা বাংলাদেশ জুড়ে স্তুতিগাঁথা চলবে। স্বাভাবিক ঘটনা। তাঁর সম্পর্কে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস যেমন আছে ঠিক তেমনই আছে তীব্র বিরোধিতা। যারা বিরোধিতা করেন তারা না বুঝেই করেন। তাই ক্রমশ স্তিমিত হচ্ছে ব্যাক্তি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধাচরণ। আজ তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর সবচেয়ে ভাল উপায় তার কীর্তি নিয়ে কথা বলা। কথা বলা উচিত কেন তাকে এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ও পৃথিবীর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান বলা হয়।

এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেছেন- বিভিন্ন সামাজিক মাপকাঠিতে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে এগিয়ে, এর পিছনে অনেকে মিলে কাজ করার এই ধারাটি খুব বড় ভূমিকা নিয়েছে এবং এটাই আবার বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে একজোট হতে সাহায্য করেছে।
এর আগেও তিনি বলেছিলেন- মানব উন্নয়নের প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। মানব উন্নয়ন সূচকে লৈঙ্গিক সমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্মত্য সেন আরো বলেন, কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সূচকে ভারতের পেছনে ছিল। অথচ অল্প সময়ে এ চিত্র পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এখন একমাত্র দেশ যেখানে স্কুলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশের গড় আয়ু বেড়েছে। মৃত্যুহার কমেছে এবং কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ বেশি। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও লৈঙ্গিক সমতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
এসব কঠিন সূচকে বাংলাদেশকে এগিয়ে দিলেই হবে? অন্যান্য সব ব্যাপারে ভারতই এগিয়ে। আচ্ছা দেখা যাক কতটা সত্যি এই বিবৃতি। সহজবোধ্য কয়েকটি ক্ষেত্রে নজর দেওয়া যাক।
‘অন্তর্ভুক্তিকর’ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে ভারতের থেকে ২৪ ধাপ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের ‘ইনক্লোসিভ গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই)’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
ফোরামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিক উন্নয়নের মানদণ্ডে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। অন্যদিকে ভারতের অবস্থান ৬০ ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘অন্তর্ভুক্তিকর’ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অবস্থান ১৫ তম।
ইকোনমিক ফোরাম ১২টি ‘নির্দেশক’কে ভিত্তি করে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন তৈরি করে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার জন্য জিডিপি ছাড়াও তিনটি মূল মানদণ্ড -‘প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন’, ‘অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং প্রজন্ম প্রতিনিধিত্বমূলক সমতা’ এবং টেকসই উন্নয়ন’- এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

স্বাস্থ্যসেবায় ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫২তম হলেও ভারতের অবস্থান ১৫৪তম।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিকেল জার্নাল ল্যান্সেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় সম্প্রতি এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পরেও স্বাস্থ্যসেবায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভারত ব্যর্থ হয়েছে। গত ২৫ বছরে আশানুরূপ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারেনি ভারত।
১৯৭১ সালে অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পার্শ্ববর্তী ভারতের নিচে। কিন্তু আজ, ওইসব সামাজিক সূচকে শুধু ভারত নয়, অনেক স্বল্প এবং নিম্নমধ্যম আয়ের (লোয়ার মিডল ইনকাম) দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এরপর বেশ কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারত ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর, ওই সময়ে ভারতের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫০ বছর। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছরে উন্নীত হয়েছে যেখানে ভারতের মানুষের গড় আয়ু ৬৬ বছর। একইভাবে ১৯৭১ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় আয়ু ৫২ বছর থেকে ২০১৩ সালে ৬৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় আয়ুর সীমা ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৪৯ জন। ওই সময় ভারতে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১৪১ জন এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ১২৪ জন। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে ৩৩ জনে নামিয়ে আনে। অথচ ভারতে এখনো প্রতি হাজারে ৪১ জন এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রতি হাজারে ৪৪ জন শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।এ ক্ষেত্রেও ভারতসহ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর চেয়ে প্রভূত উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে জন্মহার (প্রতি নারীর) ছিল ৬ দশমিক ৯ জন শিশু। যা ভারতে ৫ দশমিক ৪ এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৫ দশমিক ৬টি শিশু ছিল। বর্তমানে সেটি কমে বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২টি শিশু (প্রতি নারী), যা ভারতে এখনো ৪ দশমিক ৪ এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে ২ দশমিক ৯টি শিশু।

শিক্ষার ক্ষেত্রেও অনেক সূচকে ভারত ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তুলনায় ভালো করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের (২৫ বছর বা তার বেশি) স্কুলে শিক্ষা নেওয়ার গড় সময় ছিল ২ দশমিক ৪ বছর। বর্তমানে সেটি বেড়ে ৫ দশমিক ১ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর ভারতে এখন প্রাপ্ত বয়স্কদের গড় শিক্ষা বছর ৪ দশমিক ৪ বছর যা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ৪ বছর রয়েছে। এক্ষেত্রেও ভারতকে ছাড়িয়ে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর পঙক্তিতে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।

শিশুর টিকাদানে বাংলাদেশের অগ্রগতির হার উন্নত দেশগুলোকেও বিস্মিত করেছে। ১৯৭১ সালে প্রতি ১০০ জনে মাত্র ২ জন শিশুর টিকাদান নিশ্চিত হতো। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৯৭ শতাংশ শিশু টিকা নিচ্ছে। আর ভারতে শিশুদের টিকা নেওয়ার হার ৭২ এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৭৬ শতাংশ। উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালে দেশের ৩৫ শতাংশ মানুষ উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় ছিল। বর্তমানে দেশের প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছে। আর ভারতের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রে ৪৭ শতাংশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৩৪ জন শিশু জন্মের পর অপুষ্টির শিকার হতো। এটি কমে বর্তমানে ১৬ জনে নেমে এসেছে। ভারতে এই হার এখনো ১৭ আর নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর অপুষ্টির গড় হার ১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর সমমানে পৌঁছেছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, দ্রুত প্রবৃদ্ধির ফলে ২০১৪ অর্থবছরে দেশটির মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৬ ডলারে পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসির ‘দ্য লং ভিউ: হাউ উইল দ্য গ্লোবাল ইকোনমিক অর্ডার চেঞ্জ ইন ২০৫০’ (ফেব্রুয়ারি, ২০১৭) প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে, আগামী তিন দশকে সবচেয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি করতে যাওয়া তিনটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। অনুমান অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, ২০৫০ সালের মধ্যে হবে ২৩তম। মুক্ত ও সম্পৃক্ত অর্থনীতি এবং একই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ম্যানুফ্যাকচারিং ও ডিস্ট্রিবিউশন হাব হিসেবে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে।

এক দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। দীর্ঘমেয়াদি ‘সামষ্টিক-অর্থনৈতিক’ পূর্বাভাস বলছে, ঋণ স্থায়িত্ব (ডেট সাসটেইনেবিলিটি) ‘মডারেট’ পর্যায়ে বজায় থাকবে এবং মুদ্রার মান স্থিতিশীল থাকবে।
বর্তমানে তৈরি পোশাকে চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। যখন তৈরি পোশাক খাত বার্ষিক রফতানির চার-পঞ্চমাংশ, তখন চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ, আইটি/আইটিইএস, হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি খাতগুলোর রফতানি বহুমুখীকরণে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

এখানে দুটি বিষয় মনোযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে। এক. স্থানীয় অর্থনীতির বলিষ্ঠ কাঁধে চড়েই বাংলাদেশের উন্নয়নের বেশির ভাগটা এসেছে, এজন্য কৃষির যুগোপযোগী রূপান্তর অবশ্যই কৃতিত্বের দাবী রাখে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা— এফএও (২০১৫) বলছে, উদ্যান (ফল), অভ্যন্তরীণ মত্স্য, ফসল (ভাত, আলু প্রভৃতি) উত্পাদনের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটি বাংলাদেশ। কৃষি উদ্ভাবন, যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছোট ও প্রান্তিক চাষীরা, এ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। দুই. বিদেশে থাকা প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশী— এদের মধ্যে কেউ নাগরিক আবার কেউ বিদেশে কাজ করেন— প্রতি বছর দেশে গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। এ রেমিট্যান্সের বড় অংশ যায় গ্রামে, যা সেখানে একটি ভোগভিত্তিক স্থানীয় অর্থনীতি তৈরি করেছে এবং একই সঙ্গে অর্থনীতির জন্য চলতি হিসাব উদ্বৃত্তও সৃষ্টি করেছে।

বর্তমানে পদ্মা সেতুর মতো সংযোগ অবকাঠামোর মতো প্রকল্পে সরকার বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় করছে। পদ্মা সেতু, নির্মাণাধীন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ আঞ্চলিক সংযোগ ও পরবর্তীতে এশিয়ান হাইওয়ের ক্ষেত্রে প্রধান যুক্তকারী হিসেবে কাজ করবে। ধারণা করা হচ্ছে, পদ্মা সেতু একাই বার্ষিক জিডিপিতে বাড়তি ১ শতাংশ যোগ করবে।বাংলাদেশে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শহুরে জনসংখ্যা ভোক্তা ব্যয় কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। এটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর মনোযোগ কেড়েছে। যেমন— কোকা-কোলা বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরো অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছে। শ্রীলংকা, ভারত ও ইউরোপের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এফএমসিজি (ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস) ব্র্যান্ড একই রকম পরিকল্পনা করছে। আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ভোক্তাবাজার বাড়ছে। বিভিন্ন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্সের প্রসার তর তর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুব উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্টার্ট-আপ সংস্কৃতি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেলফোন, রেফ্রিজারেটর, এলইডি টিভি প্রভৃতি পণ্য ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে আরো বেশি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। ওয়ালটন গ্রুপের মতো কিছু স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সাফল্যের দেখা পেয়েছে।

কিন্তু কেন এই সাফল্য? এককথায় বলা যায় গত প্রায় এক দশকের সুশাসন। অথচ কি ছিল বাংলাদেশে ? সুশাসনের অভাব, জনসংখ্যার আধিক্য, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতার অভাব, শাসক দলের জবাবদিহিতার ঘাটতি, দুর্বল প্রশাসন বা বিচার বিভাগ। সবচেয়ে বড় কথা জঙ্গিবাদে সরকারী মদত। আজ অনেকেই বলতে পারেন যে বর্তমান সরকার তো ইসলামপন্থী কিছু দলের সাথে আঁতাত করছে। এটা কি ঠিক? এই প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে দেওয়া অমর্ত্য সেনের সাক্ষাৎকার থেকে উল্লেখ করছি। তিনি ভারতে হিন্দু প্রভাব বিস্তার প্রসঙ্গে বলেছেন “আমি মনে করি গাঁধী আসলে চেষ্টা করেছিলেন, কিছু কিছু ব্যাপারে উঁচু জাতের হিন্দুদের সঙ্গে আপস করে অন্য কিছু বিষয়ে সংস্কারে তাদের রাজি করাতে, যেমন জাতিভেদের তেজ কমানো, রিজার্ভেশন বা সংরক্ষণ চালু করা, এবং সর্বত্র ‘নিচু’ জাতের মানুষের প্রবেশাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আসলে গাঁধীর রাজনীতির জটিলতাটা বোঝা দরকার। কী করে আমরা এত দিন সাম্প্রদায়িকতার বিপদটাকে অনেক দূর ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছি, এখানেই তার উত্তর আছে বলে আমি মনে করি।“

একই ভাবে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের রাজনীতির জটিলতা সে দেশের মানুষকে বুঝতে হবে। সাম্প্রদায়িকতাকে ঠেকাতে গেলে কিছু আপস এড়ানো অসম্ভব। কাজেই শেখ হাসিনা সঠিক পথ বেছে নিয়েছেন।

হজম হোক বা না হোক ভারতীয়দের এই কঠিন ভবিষ্যৎকে মেনে নিতে হবে। অবশ্য কিছু বাংলাদেশি এই প্রতিবেদনের অন্য অর্থ খুঁজবেন তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতে কিন্তু তাতে ভবিতব্য পালটাবে না। যদি শেখ হাসিনা আরো দশ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকেন তাহলে এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেরই বাংলাদেশের তীব্র অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করতে হবে এবং এটাই কালের লিখন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!