সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-সরওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত গণসংবর্ধনায় দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে তাঁকে একটি মানপত্র দেয়া হয়। মানপত্রটি পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
যুগ-যুগান্তের প্রতীক্ষা শেষে কোটি মানুষের তপস্যায় যে-মহামানবের জন্ম হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ায় ঘৃণিত হত্যাকারীর নির্মম বুলেটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে তিনি শাহাদাত বরণ করেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে। টুঙ্গিপাড়ার সেই নিভৃত পল্লীর সবুজ ঘাস, ৩২ নম্বরের বাড়ির রক্তাপ্লুত সিঁড়ি শাশ্বত বাঙালির চিরতীর্থ হয়ে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা মানপত্রে আরও বলা হয়েছে- ‘পঁচাত্তরের সেই ঘোর অমানিশা কাটিয়ে স্বজনহারা আপনিই মৃত্যুর ঝুঁকিকে পরোয়া না করে বাংলার নিপীড়িত মানুষকে আপন হৃদয়ে ঠাঁই দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় নিয়ে ১৯৮১’র ১৭ মে এক ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ বৃষ্টিস্নাত দিনে স্বদেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন। যেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন পিতা-মাতা-স্বজনের প্রতিভূ রক্তস্নাত দেশটির মৃতদেহ। সেই থেকে ‘দুর্গম গিরি, কান্তার মরু’ পারাবার হলো শুরু।
কত দুস্তর, কত কণ্টকাকীর্ণ ছিল এই পথ- অসংখ্যবার আপনার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় ও দেশবাসীর দোয়ায় প্রতিবারই আপনি বিপদমুক্ত হয়েছেন। বাধার পাহার অতিক্রম করে সম্মুখবর্তী হয়েছেন- সেই কঠিন যাত্রায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আজ আপনি আলোকোজ্জ্বল মধ্যাহ্নে দাঁড়িয়ে। অনন্ত বিম্ময় হয়ে- গোটা বিশ্বকে আলোকিত করেছেন। মানবতার জননী তুমি সবার হৃদয় করেছো জয়।’
এতে আরও বলা হয়েছে- ‘আপনি আমাদের অযুত সাহস, অনন্ত বিস্ময়-উন্নয়নে অর্জনে আপনি আজ গোটা বিশ্বের রোলমডেল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপ্ত একের পর এক সম্মাননা, ডক্টরেট পদক হাতে তুলে নিয়ে আপনি আপনার প্রাণপ্রিয় দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছেন।
আপনার অকুতোভয়, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যে আমাদের জীবন ও রাষ্ট্রের যে গুণগত পরিবর্তন সূচিত করেছে তার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।আপনার রোপিত বীজ যে একদিন পত্রে-ফুলে ফুলে বিকশিত হয়ে পরিপূর্ণ জীবনবৃক্ষে পরিণত হবে, সেদিন আর বেশি দূরে নয় উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হবার সেই আনন্দঘন স্বপ্ন-মুহূর্ত অতিনিকটে। আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মানপত্রে আরও বলা হয়- ‘আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে অশান্ত জনপদে শান্তি ফিরে এসেছে। আপনার দৃঢ়তা ও অটল সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বকে দেখিয়েছে সততার শক্তি- নিজস্ব অর্থ ও জনগণের অংশগ্রহণে পদ্মা সেতুসহ দেশের বৃহৎ স্থাপনাগুলো- রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, কর্ণফুলী ট্যানেল, পায়রা বন্দর, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হওয়ার পথে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে আপনি দূরসমুদ্রবিস্তারী করেছেন, যার আয়তন বর্তমান রাষ্ট্রসীমার প্রায় সমপরিমাণ। বঙ্গবন্ধুর সবুজ বাংলা, বঙ্গবন্ধুর কন্যার সুনীল বাংলা, এই সবুজে সুনীলেই আজ আমাদের সোনার বাংলাদেশ। স্থলসীমানা চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রবাসী কল্যাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি, প্রযুক্তিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নে আপনার অন্তরশক্তি, বিচক্ষণ দৃষ্টি নিক্ষেপের ফলে অর্জিত সাফল্যে গোটাবিশ্বের কাছে আজ দৃষ্টান্ত।
এতে বলা হয়- ‘আপনার হাতে অবসান ঘটে স্বৈরশাসন ও ছদ্মবেশী গণতন্ত্রের। এই জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে যারা উল্টোপথে নিয়ে গিয়েছিল সেই অশুভ শক্তিকে বিচারের আওতায় এনে ঘৃণ্য হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির বিধান করে জাতির কলঙ্ক মোচনে আপনি রাষ্ট্রনায়কোচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদৃপ্ত যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নবাহু, কেবল জল-স্থল না, অন্তরিক্ষেও আজ আমাদের গৌরবময় বিচরণ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশেরও আপনি এক টুকরো বাংলাদেশ স্থাপন করে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও সাহসকে গগনচুম্বী করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার সুযোগ্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিচক্ষণ ভূমিকারও প্রশংসার দাবিদার। পিতা-কন্যার পরম্পরা এই শুভক্রম আমাদের বিস্ময়। আপনার হাত ধরেই আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব ইনশাল্লাহ।’