প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও কিছু নবীনের প্রতিভার সংমিশ্রণ ঘটিয়েই চমক সৃষ্টি করেছে এবারের নতুন মন্ত্রিসভা। দেশবাসীকে এমন তারুণ্য নির্ভর মন্ত্রিসভা উপহার দিয়ে আগামীর পথে যাত্রা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবীন-প্রবীণের এ সংমিশ্রণকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন দেশের সাধারণ জনগণ। সবচেয়ে বেশি চমক দেখা গেছে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চার মন্ত্রণালয়ে। অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রীদের বরণ করতে প্রস্তুত নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ও।
এবারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ জানান নতুন নির্দেশনা আসা মাত্র সেভাবেই কাজও করতে প্রস্তুত তারা। ইতোমধ্যেই নতুন অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এতদিন অর্থ মন্ত্রণালয় যেভাবে চলছিল সেভাবে আর নয় বদলে যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পরিসরও অনেক বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে, সদ্য বিদায়ী অর্থমন্ত্রীর আবুল মাল আবদুল মুহিত, শেখ হাসিনার সরকারে দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর অবসর চাইছিলেন। শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী অনুষ্ঠানে মুহিত বলেন; এটি আমার খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আগামী ২৫ জানুয়ারি ৮৫ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া মুহিত বলেন, এ বয়সে আল্লাহ আমাকে এমন রেখেছেন যে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জটিল মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছি। এখন তো আমার অবসর নেয়ার দরকারই। গত ১০ বছরে বাংলাদেশকে ‘ভিক্ষুকের দেশ’ থেকে উত্তরণ ঘটানোর কৃতিত্ব দাবি করে মুহিত বলেন, বিশ্বের কোন দেশ এখন বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশ বলতে সাহস পায় না। দেশকে এ অবস্থায় উত্তরণে আমার অংশগ্রহণ থাকায় নিজেকে ধন্য মনে করছি।
এবার আসা যাক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদের পরিবর্তে এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুনশী। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন টিপু মুনশী।
এদিকে, সদ্যবিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন; আমরা যারা প্রবীণ তাদের তো নতুনদের জায়গা দিতেই হবে, একসময় তো যেতেই হবে। তবে আমি খুশি, বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করেছি। আমি এমপি আছি, থাকব। এমপি হিসেবেই কাজ করে যাব। আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো কাজ করেছি। যোগ্য, সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তিদের নিয়েই নতুন মন্ত্রিপরিষদ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষিতদের জায়গা দিয়েছেন। নতুন যারা কেবিনেটে জায়গা পেয়েছেন তারা সবাই যোগ্য। আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তারা ভালোভাবেই সরকার পরিচালনা করে দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবেন।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর জায়গায় শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নতুন মুখ নুরুল মাজিদ মাহমুদ হুমায়ূনে। নরসিংদী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এ এমপি আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় এলেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রবীণ রাজনীতিক মিরপুর-১৫ আসনের এমপি কামাল মজুমদার। এদিকে, গত পাঁচ বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকা এম এ মান্নান পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি মনে করেন আগের অভিজ্ঞতা দিয়ে মন্ত্রণালয়কে নতুনভাবে এগিয়ে নেবেন।
এবারের মন্ত্রিসভা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেমন চিন্তা ভাবনা করছেন তেমনি জনসাধারণও প্রত্যাশা করছেন উন্নয়নের কাজে আরও অগ্রগতি আসবে, আশা রাখব নির্বাচিত মন্ত্রিগণ তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।