গার্ডিয়ানে শেখ হাসিনার নিবন্ধ “বাংলাদেশ থেকে শিখতে পারে বিশ্ব”


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ জুন, ২০২০ ১২:১০ : পূর্বাহ্ণ 344 Views

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই গত মাসে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে বাংলাদেশে। আম্পান সামাল দেওয়ার জন্য হাতে ছিল অতি অল্প সময়। করোনাকালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় কীভাবে সামাল দিল বাংলাদেশ, সেই অভিজ্ঞতা অন্যদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, বাংলাদেশ শুধু একাই এ বছর স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জলবায়ু সংকট সামাল দেবে না। কাজেই আন্তর্জাতিক সহায়তা খুবই জরুরি। বিভিন্ন দেশ বিশ্বের সফলতার কাহিনি জানতে এবং একে অপরকে সহায়তা করতে পারে। সম্মিলিত শক্তি আরও শক্তিশালী ও সহিষ্ণু করে তোলে।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিবন্ধটির সহলেখক গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপ্টেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকোইজেন।

নিবন্ধে তারা লিখেছেন, মে মাসে যখন ভারত সাগরে সুপার সাইক্লোন আম্পান সৃষ্টি হচ্ছিল, নষ্ট করার মতো কোনো সময়ই বাংলাদেশের হাতে ছিল না। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, বিধ্বংসী এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক আঘাত হানবে। এমনিতেই দেশে করোনা সংক্রমণ চলছে, এ সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। এদিকে দেশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সামাজিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় রেখে তৈরি নয়।

ফলে দেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। কীভাবে ২৪ লাখ মানুষকে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে বাঁচাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়, আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে গিয়ে আরও বড় বিপদ করোনার কবলে না পড়ে। মানুষ এমনিতেই নিজেদের ঘরবাড়ি অনিরাপদ অবস্থায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্র বা কোথাও সরে যেতে চায় না। এবার করোনা সংক্রমণের মধ্যে এ পরিস্থিতি ছিল আরও জটিল। করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে চাচ্ছিল না।

নিবন্ধে বলা হয়, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে যাতে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়, এ লক্ষ্যে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে আগেকার ৪ হাজার ১৭১ আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে আরও ১০ হাজার ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করি আমরা। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে নামানো হয় ৭০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী। বিতরণ করা হয় পর্যাপ্ত মাস্ক, পানি, সাবান ও স্যানিটাইজার। বিদেশি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় গার্মেন্ট কারখানাগুলো নেমে পড়ে পিপিই তৈরির কাজে।

যথাযথ সময়ে পূর্ব-সতর্কতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে নিরাপদ রাখা এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ ও পুনরায় মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। এর মাধ্যমেই এই করোনাকালীন সময়েও সুপার সাইক্লোন আম্পানকে সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ। আর এতে করে বেঁচে যায় হাজার হাজার মানুষের জীবন।’

এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবসময় নিজেদের প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতা অন্যদের জানাতে আগ্রহী বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকোইজেন।

তারা লিখেছেন, বাংলাদেশে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও তাৎক্ষণিকভাবে ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর সাড়া দেওয়ার কারণে আম্পানে খুব বেশি প্রাণহানি হয়নি। তবে প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক। বাংলাদেশের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও উদ্ধার তৎপরতার পূর্বপ্রস্তুতি তথা পরিকল্পিত মহড়া বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। তা সত্ত্বেও এ ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের সড়ক, সেতু, ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পূর্বপরিকল্পনা থাকলে দুর্যোগ সামাল দেওয়া সহজ হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে সামাল দেওয়াই যথেষ্ট নয়, আগামী ঝড়ের জন্য জনগণকে প্রস্তুত করাও জরুরি।

গার্ডিয়ানের লেখায় জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ব-দ্বীপ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি নানান পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরা হয়।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!