শিরোনাম: জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারিঃ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার যৌথ বাহিনীর অভিযানঃ তিন উপজেলায় স্থগিত হলো ভোট

শত প্রতিকূলতায়ও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ৩:৩৪ : অপরাহ্ণ 248 Views

॥ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীতে যখন প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর ধরাশায়ী অবস্থা, তখন বাংলাদেশের মতো একটি জনাকীর্ণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাস্তানাবুদ হওয়া দেশের অর্থনীতি ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও দারুণ গতিতে আসছে রেমিটেন্স। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন রেমিটেন্স প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আনন্দের বার্তা আসছে রিজার্ভের ক্ষেত্রেও। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতে গত এক বছরে বিশ্ব ব্যবস্থা টালমাটাল। করোনায় প্রভাবিত বিশ্বের উন্নয়ন, অর্থনীতি এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। এমনি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার কারিগর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের জোট সরকারের যুগপূর্তি আসন্ন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ। আগামী ৬ জানুয়ারি পূরণ হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের টানা এক যুগ। এ যুগপূর্তি আর বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে নানাভাবে মূল্যায়ন করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ আজ নব-পরিচয়ে পরিচিতি পাচ্ছে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে ইতিবাচক সূচক তুলে ধরছে বিশ্ব সংস্থাগুলোও।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি চার শতাংশ বেড়ে হতে পারে এক হাজার ৮৮৮ ডলার। সেখানে ভারতের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে হতে পারে এক হাজার ৮৭৭ ডলার। অর্থাৎ এই প্রথম মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ১১ ডলার এগিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিষয় নিয়েই এখন ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে, আর তা হলো মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতকে টপকে গেছে। অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগের বাস্তবতাও ছিল ভিন্ন। সে সময় ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের তুলনায় ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল। এখানে স্পষ্ট ব্যবধান গড়ে দিয়েছে দুই দেশের করোনা মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপসমূহ। ভারতকে এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ তাদের তথ্যবহুল গণস্বাস্থ্য কার্যক্রম এবং ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যবহার করে করোনাকালেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলছেন, ‘বাংলাদেশ ভাল করছে। এর কারণ হচ্ছে তারা তাদের কম দক্ষতাসম্পন্ন পণ্যের রফতানি বজায় রেখেছে। এই বিষয়টি গরিব দেশের কর্মবয়সী জনসংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। কিন্তু মৌলিকভাবে, উভয়েই চীনের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। কম দক্ষতাসম্পন্ন পণ্যের উৎপাদনের মাধ্যমে বড় আধিপত্য বিস্তার করে, তার মাধ্যমে তারা উচ্চ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।’

বাংলাদেশের প্রশংসায় বিশ্ব মহলও। বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, খোদ সেই দেশটিরই এক উন্নয়ন বিষয়ক আলোচক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উদ্দেশে বলেছেন, ‘অন্য কোন দেশের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই, পাকিস্তানের উচিত প্রথমে বাংলাদেশ হওয়ার চেষ্টা করা। তা হতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে।’

বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার সকল আলোচনার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই রাখছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, ধারাবাহিক নেতৃত্বের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার আজ যেমন পাকাপোক্ত অবস্থানে, তেমনি সরকার এবং দলের মধ্যে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। সুদিনে সবাইকে পাশে নিয়ে আর দুর্দিনে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বন্ধুর পথে এগিয়ে চলছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। একসময় যে বামপন্থী, ডানপন্থী নেতৃত্ব বা সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় ছিল, তারা এ দলের জোটে বা বলয়ে ভিড়েছে শেখ হাসিনারই রাজনৈতিক বিচক্ষণতায়। ইস্পাতসম মনোবল আর শত চ্যালেঞ্জ পায়ে মাড়িয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে সামনে এগোচ্ছেন তিনি।

চ্যালেঞ্জ নিয়েই যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করে চলছেন, তেমনি ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্র সীমানার বিরোধেরও নিষ্পত্তি টেনেছেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে, ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পায়। এটা ছিল শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার ফসল। আর আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তিকে অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য মনে করেন বিশ্লেষকরা।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার যে কোন দেশকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়েও এমন সূচক এখন উদাহরণ হয়ে আসছে। চলতি মাসেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অহেতুক অভিযোগ তুলে এ প্রকল্প থেকে পিছু হটে যাওয়া বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ তার উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তার ফলাফল হিসেবে দেশটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে অনেক আগেই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে গেছে দেশটির সমাজ ব্যবস্থা। লৈঙ্গিক সমতা বিধান এবং নারীর ক্ষমতায়নে রোল মডেল হয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার মাধ্যমে দেশটির সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে আরও উৎসাহিত করার পথ সুগম করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে বিরল।

বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এটুআই নামের একটি সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। প্রযুক্তিভিত্তিক ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ ক্রমেই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বস্ত গন্তব্য হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যার নিবিড় আত্মীয়তা, তিনি হচ্ছেন কিংবদন্তি ভাষ্যকার ও বিবিসির সাবেক সাংবাদিক মার্ক টালি। সম্প্রতি হিন্দুস্থান টাইমসে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেই রাজনৈতিক পুঁজিটা এনে দিয়েছে, যার জোরে তিনি ‘ভারতের কাছে দেশটা বেঁচে দেয়া হচ্ছে’ এই সমালোচনা অগ্রাহ্য করতে পেরেছেন এবং পেরেছেন মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদি, পরপর ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে। এই সুসম্পর্কের সুবাদেই স্থল সীমান্ত চুক্তির মতো বহু বছরের অমীমাংসিত ইস্যুও নিষ্পত্তি হতে পেরেছে।’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব নেতারা যেমন বাংলাদেশকে বিশেষ স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তেমনি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও শেখ হাসিনাকে আপোসহীন নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিকরা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘সুশাসন আর দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ তার লক্ষ্যে যেতে পারছে না। তবে সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে দৃশ্যমান উন্নয়ন তো লক্ষ্য করার মতো। গণতন্ত্র, ভোট ব্যবস্থা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন আছে, কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তায় মানুষের মাঝে উন্নয়নের সুবিধা মিলছে, তা তো অস্বীকার করা যাবে না। তবে উন্নয়নকে টেকসই রূপ দিতে হলে গণতন্ত্র এবং সুশাসনকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের যে নয়া রূপ, তা শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই সম্ভব হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার অসীম সাহসিকতায় বাংলাদেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ যেভাবে উল্টো পথে হাঁটছিল, তার সম্পূর্ণ বিপরীতে তিনি দেশকে টেনে নিচ্ছেন। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এই সরকারের এক যুগ পূর্তিতে তা আরও স্পষ্ট হবে।’

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদও মনে করেন, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এক প্রকার বিস্ময়। তিনি বলেন, ‘সুশাসন এবং জবাবদিহি থাকলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী যে পরিমাণ নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছেন, তা ঠিক অন্যদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। আর এটিই বাংলাদেশের জন্য দুঃখবোধের জায়গা।’

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা আপাতত ভাল। করোনাকালে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য অবশ্যই সাধারণ মানুষের কৃতিত্ব রয়েছে। কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক, গার্মেন্ট শ্রমিকরা এই সময়ে আমাদের জন্য অধিক আশীর্বাদ হয়ে আসছে বলে মনে করি। গত এক যুগে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে।’

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!