শিরোনাম: বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাচনঃ আলোচনায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৭ কর্মপরিকল্পনা লামা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত শতশত বসতবাড়ি জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারিঃ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক

অটিজম মোকাবেলায় সরকারের সাফল্য


প্রকাশের সময় :১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ৪:০৯ : অপরাহ্ণ 555 Views

বান্দরবান অফিসঃ-অটিজম কোন, বংশগত বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মানসিক সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বলে। অটিজমকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অটিজমের লক্ষণগুলো একদম শৈশব থেকেই, সাধারণত তিন বছর থেকে প্রকাশ পেতে থাকে। এই অটিজমকে এক সময় পাপ বা অভিশাপ বলে মনে করা হতো। তারা সমাজের কাছে ছিল বোঝা এবং পরিবারের কাছে ছিল অবহেলিত। সেই সময় অটিস্টিক শিশুদের সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ছিল না যথাযথ পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবস্থাপনা।

দিন বদলের পালায় বর্তমান সরকার অবদান রেখেছে এই অটিজম শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার তনয়া সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অটিস্টিক শিশুরা প্রত্যেকে আলাদা হওয়ায় তাদের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। দক্ষ-অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিতদের তত্ত্বাবধান, বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা, প্রত্যেক শিশুর বিশেষ চাহিদা পূরণ, বিকলাঙ্গ শিশুদের আর্থিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। মানসিক ও শারীরিক উভয় ধরণের অটিস্টিক শিশু রয়েছে। তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

অটিজম বিশেষজ্ঞরা বলেন, অটিজম চিকিৎসায় ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। তবে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই আলাদা হওয়ায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি একজনের চেয়ে আরেকজনেরটা আলাদা। যত আগে অটিজমের বিষয়টা উপলব্ধি করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে।

সাধারণ শিশুদের মতো অটিজম শিশুরাও মেধাবী। তাদের মেধা ও শ্রমকে সব কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মূলত এই সকল বিষয় নজরে রেখে অটিজম শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

ঢাকার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে অটিজম রিসোর্স সেন্টার ও একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা দেয়া হচ্ছে। এখানে অটিস্টিকসহ প্রতিবন্ধী মানুষদের একসঙ্গে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘প্রয়াস’ নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় এর নতুন শাখা করার কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি সেনানিবাসে শাখা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই দেয়া হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় তাদের জন্য রাখা হয়েছে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট।

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সিলিং ও অন্যান্য সেবা এবং সহায়ক উপকরণ দেয়া হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে ২৪ লক্ষ প্রতিবন্ধী সেবা গ্রহণ করছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ ১৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যাজনিত শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে অটিজম আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের কাউন্সিলিং ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম’-এর মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের প্রাথমিক পরিচর্যাকারী হিসেবে মায়েদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞ গ্রুপের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের উপযোগী করে স্ক্রিনিং টুলস প্রণয়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দিবসের কার্ড’ তৈরি হয়।

অটিজম মোকাবেলায় আরো কতকগুলো কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। অটিজম আক্রান্তদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষায় নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও সেখানে তিন হাজার একশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কাজেই বলা যায়, প্রতিবন্ধীদের প্রতিপালনে রাষ্ট্রের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করছে সরকার। সেবামূলক এই কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা গুলোকেও অটিজম মোকাবিলায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারায় আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার স্থাপনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ‘বিশেষ সফটওয়্যার’ তৈরি করে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ছাড়াও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রত্যেক শিশুকে শিগগিরই ‘প্রিভিলেজ কার্ড’ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চিকিৎসা, কেনাকাটা, শিক্ষা, গাড়ি পার্কিংসহ সবক্ষেত্রে তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন।

১৯৯৯ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরে জেপিইউএফ-এ পরিণত হয়। অটিজমসহ এনডিডি (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার) আক্রান্তদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় অধিকারের সুরক্ষা আইনের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে ‘ডিজএবিলিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট’ ও ‘দ্য ন্যাশনাল নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার প্রটেকশন ট্রাস্ট অ্যাক্ট’ করা হয়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী ‘সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক’ গঠিত হয়, যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমাজের অংশ বলে গণ্য করার জোর প্রচার চলছে।

সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক।

একটি রাষ্ট্র তখনই কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন প্রত্যেক নাগরিকের জন্য যথাযথ সুযোগ-সুবিধা বজায় থাকে। অটিজম শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে গৃহীত মা-মেয়ের নানা কার্যক্রম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছে স্বীকৃতি এবং অর্জন করেছে প্রশংসা। অটিজম শিশুদের অবহেলা করে মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেদিকে নজর রাখছে সরকার। সাধারণ শিশুদের পাশাপাশি অটিজম শিশুরাও পাবে অধিকার এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!