শিরোনাম: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার যৌথ বাহিনীর অভিযানঃ তিন উপজেলায় স্থগিত হলো ভোট প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন প্রচার প্রকল্পের আওতায় মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘মগ লিবারেশন পার্টি’


প্রকাশের সময় :২৩ মে, ২০১৮ ১:১৬ : অপরাহ্ণ 1293 Views

বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা থামছে না। সাম্প্রতিক সময়ে মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) নামে আরো একটি সশস্ত্র সংগঠন ওই এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি), আরাকান কমিউনিস্ট পার্টি (এসিপি) এবং ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আরাকান (ডিপিএ)সহ আরো কয়েকটি গ্রুপের অপতৎপরতার পর এই অঞ্চলের জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)। সম্প্রতি তাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছেন থানচি উপজেলার পাড়াপ্রধান আথুইমং মারমা (৫৫)। প্রথমে স্ত্রী ও বোনসহ তাঁকে অপহরণ করা হলেও একে একে ছাড়া পান কারবারির স্ত্রী আনিমে মারমা (৪৪) ও বোন মেনু প্রু মারমা (৩০)। টানা ৬ দিন আটকে রেখে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ছেড়ে দেয়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি জওয়ানরা তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের শুরুতে এমএলপি সম্পর্কে জানতে পারে এলাকাবাসী। এখন প্রতিটি পর্যটন স্পট, গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, যাতায়াতের রাস্তা এবং পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এমএলপি সদস্যরা। প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন পর্যটক জানিয়েছেন, এমএলপি সদস্যদের কাছে অত্যাধুনিক ও ভারি অস্ত্র তাঁরা দেখতে পেয়েছেন। তবে এসব পর্যটকের সঙ্গে এমএলপি সদস্যরা কোনো খারাপ আচরণ করছে না।

আগন্তকের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলেই এরা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানচি উপজেলার একজন পাড়াপ্রধান (কারবারি) জানান, এমএলপি সদস্যরা কোনো পাড়ায় এলে মহাবিপদে পড়েন পাড়াবাসী। ওই অস্ত্রধারীরা জোরপূর্বক তাদেরকে খাবার সরবরাহ করতে গ্রামবাসীকে বাধ্য করে। অন্যদিকে এমএলপিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে সরকারি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রোষানলে পড়েন পাড়াবাসী। কখনও কখনও অতর্কিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি বা পুলিশকে পাড়ার আশেপাশে টহল দিতে দেখলে গ্রামবাসীকে সন্দেহের চোখে দেখে সন্ত্রাসীরা। এ অবস্থায় অসহনীয় জীবন কাটাচ্ছে বান্দরবান জেলার থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসিন্দারা।

এদিকে গত ২৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুমা উপজেলার পাইন্দু উজানিপাড়ায় এমএলপি সদস্যদের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও কোনো দায়িত্বশীল সূত্র তা স্বীকার করেনি। এই ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা রুমা উপজেলার বটতলা মারমাপাড়া থেকে মংখ্যাইনু মারমা (৩৮) নামে এক যুবককে আটক করেন।

সেনা সদস্যরা গত শনিবার ভোররাতে বটতলীপাড়া ঘিরে তাঁকে আটক করলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকেল ৪টার দিকে ছেড়ে দেন।

জানা গেছে, মংখ্যাইনু মারমার বাড়ি রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বালুপাড়ায়। রুমার বটতলী পাড়ার একজন নারীকে বিয়ে করে তিনি এই গ্রামের জামাই হয়েছেন।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক কষ্টে পড়েন মংখ্যাইনু। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর কাছে থাকা দুটি পিস্তল বিক্রি করতে তিনি শুক্রবার রাতে বটতলীপাড়ায় যান। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেনাসদস্যরা চারদিক থেকে ঘিরে তাঁকে আটকে ফেলে।

স্থানীয় একজন প্রবীণ নাগরিক জানান, মংখ্যাইনু মারমা আটকের পর এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও আটকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় দ্বিগুণ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০১০ সালের দিকে ‘মগ লিবারেশন পাটি’ গঠিত হলেও বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম চালায়। এ কারণে এমএলপি নামটি তেমন ছড়িয়ে পড়েনি। আটক মংখ্যাইনু মারমা ২০১২ সালে ওই সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে তিনি মিয়ানমারের কারেন প্রদেশে ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। গত দুই বছর ধরে মংখ্যাইনু মারমা নিজেকে একজন ‘পাহাড়ি বৈদ্য’ পরিচয় দিয়ে এমএলপিতে সদস্য রিক্রুট এবং বিভিন্ন গ্রামের সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, মারমা জনগণকে পক্ষে নেওয়ার কৌশল হিসেবে এমএলপি ক্যাডাররা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা তথ্য প্রদান করে এই অঞ্চলে মারমাদের জন্যে একটি আলাদা স্টেট গঠনের কথা প্রচার করে আসছে। এতে সরলপ্রাণ অনেকে তাদের ভক্ত হয়ে গেছেন।

সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে ওই বাহিনীর দেড় শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে চাঁদাবাজি, জোর করে খাদ্য আদায় এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের অপহরণ করে অর্থ আদায় করে জনজীবনকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুমা উপজেলার একজন জনপ্রতিনিধি জানান, এমএলপি সদস্যদের মতের অমিল হওয়ায় কিছুদিন আগে আথুই মংয়ের ছেলে পার্টি ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন। এর প্রতিশোধ নিতে গত ১২ মে এমএলপির সদস্যরা থানচি সদর ইউনিয়নের তংড়্গ্যং পাড়ার কারবারি আথুইমং মারমা (৫৫), তাঁর স্ত্রী আনিমে মারমা (৪৪) ও বোন মেনুপ্রু মারমাকে (৩০) অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন সন্ধ্যায় অপহরণকারীরা আনিমে মারমা ও মেনু প্রু মারমাকে ছেড়ে দিয়ে আথুইমং মারমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। ঘটনার ৬ দিন পর ১৭ মে সন্ধ্যায় আথুই মংকে তিন্দু ইউনিয়নের পর্যটন স্পট নাফাঁখুম সংলগ্ন উহ্লাচিং মারমাপাড়ার কাছাকাছি এলাকা থেকে বিজিবি সদস্যরা তাঁকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

থানচি উপজেলার বলিপাড়াস্থ বিজিবি জোন (৩৮ ব্যাটালিয়ন) কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল হাবিবুল হাসান জানান, আথুই মং কারবারিকে অপহরণের পর পরই সেনাবাহিনী ও বিজিবি জওয়ানরা অভিযানে নামেন। তিনি জানান, যৌথবাহিনীর অভিযান টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা অপহৃত আথুইমং কারবারিকে চোখ বেঁধে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। তল্লাশির এক পর্যায়ে দেখতে পেয়ে বিজিবি সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন।

জোন কমান্ডার জানান, গত শুক্রবার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কারবারিকে তাঁর পরিবার ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আথুইমং কারবারি সাংবাদিকদের জানান, টানা ৬ দিন তাঁকে মুখ বাঁধা অবস্থায় জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরিয়ে নাফাঁখুম এলাকায় নিয়ে আসা হয়। তিনি জানান, কথা বলতে না দেওয়ায় অপহরণকারীদের তিনি চিনতে পারেননি। নির্দিষ্ট আস্তানায় পৌঁছলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে বলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে জানিয়েছিল। কিন্তু আস্তানায় পৌঁছার আগেই বিজিবি জওয়ানদের দেখতে পেয়ে সন্ত্রাসীরা সটকে পড়ে। এ অবস্থায় বিজিবি জওয়ানরা তাঁকে উদ্ধার করে বলিপাড়া বিজিবি জোন সদর দপ্তরে নিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন আথুই মং কারবারি।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে,আরাকান লিবারেশন ইউনিয়নের (এএলইউ) সামরিক সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ) নিজেদের পরিচয় ঢাকতে ২০১০ সালের দিকে ‘মগ লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’ গঠন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের ঢুকিয়ে দেয়। এই বাহিনীতে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর দলছুট সদস্যদের পাশাপাশি বান্দরবান,রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির মারমা যুবকদের রিক্রুট করা হয়।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!