শিরোনাম: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার যৌথ বাহিনীর অভিযানঃ তিন উপজেলায় স্থগিত হলো ভোট প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন প্রচার প্রকল্পের আওতায় মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত

প্রেক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম,দেশ বড় না জাতি বড়???


প্রকাশের সময় :১৩ মে, ২০১৮ ৯:০৬ : অপরাহ্ণ 771 Views

সিএইচটি নিউজ ডেস্কঃ-কোন দেশের একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই যদি ঐ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীদের সহায়তা করে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পরেই যদি আবার তারাই তাদের নির্দিষ্ট ভুখন্ডের জন্যে নিজস্ব আইন পরিষদসহ স্বায়ত্তশাসন দাবী করে বসে – তাহলে ঐ জনগোষ্ঠীর প্রতি নব্য স্বাধীন রাস্ট্রের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

প্রশ্ন জটিল না সহজ সেই ঘোরপ্যাঁচে না জড়িয়ে বিষয়টি আরেকটু সহজ করে দিতে পারি। এই প্রশ্নের প্রেক্ষাপট কিন্তু আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এবং সময়কাল ১৯৭১ – ৭২ সাল।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটা ক্ষুদ্র অংশ যখন বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করেছিল, তখন তাদের একটা বড় অংশ পাকিস্তানী বাহিনীকে সক্রিয় সহায়তা করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। “উপজাতীয় যুবকদের কিছু সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও অধিকাংশই পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক গঠিত ‘সিভিল আর্মড ফোর্স’ বা ‘সিএএফ’(রাজাকার বাহিনী হিসেবে পরিচিত) এ যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতায় অংশ নেয়।” (ইব্রাহিম, ২০১১, p. ৭৭)

১৯৭০ সালের নির্বাচনে পার্বত্য অঞ্চলে তিনজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলন; এরা হলেন, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং ত্রিদিব রায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এম এন লারমা কোন পক্ষাবলম্বন করেন নি। কিন্তু অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা করেন। অপরদিকে, তৎকালীন তিন সার্কেল চীফ বা প্রথাগত রাজাদের মধ্যে একমাত্র মং সার্কেলের রাজা মংপ্রু সাইন তাঁর সবকিছু বিলিয়ে দিয়েই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখেন। বোমাং রাজা এবং চাকমা রাজা দুজনই পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন।

বস্তুত, তৎকালীন রাজাকার বাহিনীতে তুলনামুলকভাবে চাকমাদের সংখ্যাই ছিল বেশী। এর মূল কারণ, চাকমাদের রাজার পাকিস্তানপন্থী সক্রিয় ভুমিকা। তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সার্কেলের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্যে প্রচারনার পাশাপাশি গ্রামের হেডম্যান ও কারবারীদের নির্দেশ প্রদান করেন লোকদেরকে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করানোর জন্যে। অবশ্য বেতন ও অস্ত্রের লোভেও অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। পাহাড়ি যুবকেরা বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত পাকিস্তানী ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র চালনা, ওয়্যারলেস সেট চালনা ইত্যাদির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পাহাড়ি রাজাকারের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কি পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা আরেকদিনের জন্যে তুলে রাখা হলো।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর, ২৯ জানুয়ারিতে রাঙ্গামাটির আওয়ামী লীগ নেতা চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল যখন উপজাতিদের জন্যে পৃথক সাংবিধানিক রক্ষাকবচের দাবী জানান, তখন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশ্বাস দিয়েছিলেন যে,

– সরকারী চাকরীতে উপজাতীয়দের ন্যায্য অংশ প্রধান করা হবে।
– উপজাতীয়দের ঐতিহ্য ও কৃস্টি পুরোপুরিভাবে সংরক্ষন করা হবে।
– উপজাতীয়রা তাদের ভূমির অধিকার পূর্বের মতই ভোগ করতে থাকবেন। (ইব্রাহিম, ২০১১)

এর কিছুদিন পরেই, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মংপ্রু সাইন এর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল চার দফা দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যান। অন্যান্যদের মধ্যে এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন, এম এন লারমা এবং ত্রিদিব রায়ের মাতা বিনীতা রায়। ‘বাংলাদেশের ভাবি সংবিধানে উপজাতীয়দের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষনের জন্যে’ এই প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এক স্মারকলিপি পেশ করে, যে স্মারকলিপির শেষান্তে উল্লেখ করা হয়ঃ
১। পার্বত্য অঞ্চল একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে এবং এর নিজস্ব আইন পরিষদ থাকবে।
২। উপজাতীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষনের জন্য ‘১৯০০ সালের পার্বত্য চট্রগ্রাম শাসনবিধি’র ন্যায় অনুরূপ সংবিধি ব্যবস্থা (Sanctuary Provision) শাসনতন্ত্রে থাকবে।
৩। উপজাতীয় রাজাদের দফত্র সংরক্ষণ করা হবে।
৪। পার্বত্য চট্রগ্রামের জনগণের মতামত যাচাই ব্যতিরেকে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিষয় নিয়ে কোনো শাসনতান্ত্রিক সংশোধন বা পরিবর্তন যেন না হয়, এরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকবে। (খীসা, ১৯৯৬)

নব্য স্বাধীনতালব্ধ একটি দেশে কত ধরনের সমস্যা থাকতে পারে, তা জানতে আমাদের বেশী দূর যেতে হবে না। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের তৎকালীন সময়ের দিকে খেয়াল করলেই বরং বুঝতে সহজ হবে।

এই রকম একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সমস্যা-সঙ্কুল দেশের প্রেক্ষাপটে, প্রারম্ভের প্রশ্নটি নিয়ে ভেবে দেখতে পারেন; কি করা উচিত ছিলো? কি করা হয়েছিল? এখনো কি কি করা হচ্ছে ?

একই সাথে, সেটা ও ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো, এই উপজাতীয় জনগোষ্ঠী পরবর্তীতে কীভাবে এই দেশের প্রতি তার প্রতিদান দিয়েছিল?১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি শান্তি বাহিনী গঠিত হলেও, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকেই (মোর্তোজা, ২০০০ ) । ১৯৭৩ – ১৯৭৪ সালে শান্তিবাহিনীর রিক্রুটিং এর সময় হাজার হাজার উপজাতীয় যুবক শান্তি বাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯৭৬ সালে শান্তি বাহিনী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।

অনন্যোপায় হয়ে, বাংলাদেশের সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পার্বত্য চট্ট্রগ্রামে দেশের অন্য স্থান হতে সেনাবিহিনী আনতে শুরু করে। (ইব্রাহিম, ২০১১, p. 165)

যারা বাঙ্গালীদের কে পাহাড়ের সমস্যার মূল কারণ বলে মনে করেন, তাদের হয়তো জানা নেই যে, সরকারী ভাবে বাঙ্গালীদের পুনর্বাসন শুরু হয় ১৯৭৯ সাল থেকে। (ইব্রাহিম, ২০১১, p. 148)

তথ্যসূত্র:
ইব্রাহিম, ম. জ. (২০১১). পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ- পরিস্থিতির মূল্যায়ন. ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স.
খীসা, প. (১৯৯৬). পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা. ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ.
মোর্তোজা, গ. (২০০০). শান্তি বাহিনী গেরিলা জীবন. ঢাকা: সময় প্রকাশন.

 

লিখেছেনঃ-মাহের ইসলাম।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!