মানব জীবনে বনের গুরুত্ব অপরিসীমঃ ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি


নিজস্ব সংবাদদাতা প্রকাশের সময় :২৩ মার্চ, ২০২২ ১:৫৯ : অপরাহ্ণ 502 Views

মানবজীবনে বনের গুরুত্ব অপরিসীম।বন আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে।মানুষ এবং বিভিন্ন আদিবাসী সংস্কৃতি তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য বনের উপর নির্ভরশীল।প্রাণী এবং পোকামাকড়কে আশ্রয় দেওয়া,বাতাসে অক্সিজেন,কার্বন ডাই অক্সাইড এবং আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রাখা,নদীতে মিষ্টি পানি সরবরাহকারী জলাশয়গুলিকে রক্ষা করতে বনের গুরুত্ব অপরিসীম।সোমবার (২১মার্চ) বিকেল ৩ টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক বন দিবস উপলক্ষে বন বিভাগ আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এসব কথা বলেন। “বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার,টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন,আমাদের বনকে সংরক্ষণ করতে হবে।বিশেষ করে বনের সম্পদ রক্ষা করা গেলে আমাদের সকলের জীবনধারণ সুনিশ্চিত হবে।বান্দরবানের পাল্পউড প্লান্টেশন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উপ-বন সংরক্ষক হক মাহাবুব মোর্শেদ,পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.কায়েসুর রহমান,সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হকসহ বন বিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।আলোচনা সভার সভাপতি পাল্পউড প্লান্টেশন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.মাহমুদুল হাসান বলেন,বন রক্ষায় বন বিভাগের বন্ধু হিসেবে সাধারণ মানুষকে বনবিভাগের পাশে দাঁড়াতে হবে।পাশপাশি বন খেকোদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে বনবিভাগের কর্মীদের পাশে থেকে সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।এসময় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উপ-বন সংরক্ষক হক মাহাবুব মোর্শেদ বাড়ীর আশেপাশে যেকোন খালি স্থানে বেশি বেশি গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার আহবান জানান।উল্লেখ্য,জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে বন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছরের ২১ মার্চ সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক বন দিবস পালন করা হয়।এদিকে বাংলাদেশের বন বিভাগের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বাংলাদেশে বন আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।এর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী যা ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।এই হিসাবে বনের বাইরের গাছ আমলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু বন বিভাগের নতুন সমীক্ষায় বলা হয়েছে,বনের বাইরে গাছের পরিমাণ মোট ভূমির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।এসব গাছের বেশির ভাগই বেড়ে উঠেছে মূলত সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে।সেই হিসাবে বনের ভেতর ও বাইরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির সাড়ে ২২ শতাংশ।এছাড়াও গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের মতে,পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বনভূমি।একটি বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ গাছ থাকে।একজন মানুষের শ্বাস নিতে বছরে ৭৪০ কেজি অক্সিজেন প্রয়োজন।গড়ে,একটি গাছ বছরে ১০০ কেজি পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়।২০১৫ সালে নেচার জার্নালের অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়েছে,মানুষ যখন থেকে গাছ কাটা শুরু করেছে, এখন পর্যন্ত ৪৬ শতাংশ গাছ কাটা হয়েছে।বিশ্বে বর্তমানে ৩.০৪ লাখ কোটি গাছ রয়েছে।ট্রপিক্যাল ফরেস্ট অ্যালায়েন্স ২০২০ অনুসারে,আমরা যদি কোনো পরিবর্তন না করি,তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ লাখ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বিস্তৃত গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন শেষ হয়ে যাবে।সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে,যদি এই হারে গাছ-গাছালি মারা যেতে থাকে,তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের আয়তনের সমান বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে।যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি!২০০০ এরও বেশি আদিবাসী সংস্কৃতিসহ প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ তাদের জীবিকা,ওষুধ,জ্বালানী,খাদ্য এবং আশ্রয়ের জন্য বনের উপর নির্ভর করে।

 

 

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
July 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!