পাহাড়ে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল,নেপথ্যে আধিপত্য আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন


প্রকাশের সময় :২৫ মে, ২০১৮ ৩:১২ : পূর্বাহ্ণ 676 Views

সিএইচটি নিউজ ডেস্কঃ-স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের এক-দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিতে বাংলাদেশ সরকার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। দেশের ভূ-খন্ড রক্ষার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর উগ্রপন্থী শান্তিবাহিনীর সাথে চুক্তি করে সরকার। যেটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বা শান্তি চুক্তি নামে পরিচিত। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই দশক অতিবাহিত হলেও সমাধান হয়নি পাহাড়ের সমস্যা। দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। গত ৬ মাসে ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতি এমএন লারমার ২১ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন তিন পার্বত্য জেলায়।

চুক্তি পরবর্তী সময়ে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা পিসিজেএসএস নামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে। অপরদিকে, চুক্তির বিভিন্ন ধারার বিরোধীতা করে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ’র। মতার্দশের অমিলে ২০০৭ সালে ভাঙ্গন ধরে পিসিজেএসএস এ। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রথম নির্বাচিত সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আর্দশপন্থী আত্মসমর্পণকারী পিসিজেএসএস নেতারা বিভক্ত হয়ে পিসিজেএসএস-এমএন লারমা নামে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে। সবশেষ ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভাঙ্গন ধরে ইউপিডিএফ’র মাঝে। এনিয়ে চুক্তির পক্ষ বিপক্ষের চারটি সংগঠন দাঁড়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, বিগত ৬ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২১ জন খুন হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সংগঠন গুলোর মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ থাকলেও গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তা আবার শুরু হয়। এতে করে উদ্বেগ বাড়ে পাহাড়ে।গত ৩ ও ৪ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও এমএন লারমার কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি শক্তিমান চাকমা এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৬ জন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২১ মে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় উজ্জল কান্তি চাকমা নামে ইউপিডিএফর এক সাবেক সদস্য খুন হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে।

নাম না ছাপানোর শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পেছনের মূল কারণ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তার। ইউপিডিএফর সামরিক শাখার কমান্ডার তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা নতুন দল(গণতান্ত্রিক) ঘটনার পর থেকে ইউপিডিএফর ১০ নেতাকর্মী খুন হওয়া, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন এলাকার আধিপত্য কমতে থাকে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসন ছিনিয়ে নিতে অনেক আগে থেকে মরিয়া ইউপিডিএফ। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক শত্রু পিসিজেএসএসর সাথে সখ্যতা বৃদ্ধি করে ইউপিডিএফ। কিন্তু বিগত ছয়মাসে ইউপিডিএফর আধিপত্যের ধস মোকাবেলায় করতে গিয়ে পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠছে।

এমএন লারমার রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক বিভূরঞ্জন চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ পাহাড়ের শান্তি চায় না। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে পাহাড়ে শান্তি ফেরার কথা। কিন্তু তাদের বিরোধীতার কারণে শান্তির পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বলয় থেকে যে বের হয়ে প্রতিবাদ কিংবা রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের তারা হত্যা কিংবা গুম করছে। যার প্রমাণ মিলে তপন জ্যোতি চাকমাসহ অন্যান্যদের খুন হওয়ার ঘটনায়। পাহাড়ে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের রাষ্ট্রীয় ভাবে নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাহাড়ী জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে জেএসএসর সাথে সমঝোতার বিষয়টি আংশিক সত্য জানিয়ে ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুবফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা বলেন, ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বিরোধীতা করেনি। চুক্তির কিছু ধারার বিরোধীতা করে আসছে। বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউপিডিএফর জনপ্রিয়তা বাড়ছে দাবি করে তিনি বলেন, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থি জয়ী হলেও সংসদে যেতে দেয়া হয়নি। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ইউপিডিএফ যেকোন সমঝোতা করতে পারে।

সম্প্রতি সময়ের হত্যাকান্ডের বিষয়ে বলেন, তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা একসময় ইউপিডিএফর সাথে থাকলেও সাংগঠনিক বিরোধী কর্মকান্ডের অপরাধে তাকে বহিস্কার করা হয়েছি। এমএন লারমা সমর্থিতদের ছত্রছায়া সে ও ইউপিডিএফ থেকে বিভিন্ন সময় বহিস্কৃতরা মিলে নতুন সংগঠন করে। কিন্তু পাহাড়ী জনগণ সেটিকে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নয় নব্য মুখোশ বাহিনী হিসেবে তাদের চিনে। বর্মাসহ অন্যান্য হত্যাকান্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী না করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি জানান তিনি।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, সম্প্রতি হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কয়েকজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশসহ যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!