শিরোনাম: চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট বান্দরবানে আলেম সমাজের সংবাদ সম্মেলন বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে উদযাপিত হলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস জেলা প্রশাসক মেধাবৃত্তি,বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে সেনা জোনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বান্দরবানে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল কর্মী ও সুধী সমাবেশে দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তাঃ সুস্থ হয়ে ফিরছে ১১ বছরের জিংক থান ময় বম

“রাজা বাবু” কি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার উপকরণ?


প্রকাশের সময় :১৬ মে, ২০১৮ ৪:০০ : পূর্বাহ্ণ 747 Views

সিএইচটি নিউজ ডেস্কঃ-পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতি অধিবাসীদের কাছে ’রাজা বাবু’ মনের একটি বিশেষ স্থানে আসীন।তবে নিজেকে রাজা বললেও আইন অনুযায়ী তার প্রকৃত পদের নাম ‘সার্কেল চিফ’। বৃটিশ শাসনামলে চিটাগাং হিল ট্রাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ আইন বা চিটাগাং হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়েল এর ক্ষমতাবলে এই পদের সৃষ্টি হয়।দূর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য এবং চাকমা বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেল বা অঞ্চলে বিভক্ত করে তারা।

চাকমা সার্কেল চিফের অধীনে রাঙামাটি,বোমাং সার্কেল বান্দরবানে আর মং সার্কেলের অধীনে খাগড়াছড়ি জেলাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।সেই থেকে চালু হয় সার্কেল প্রথা।সেই থেকে ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমলে তারা সার্কেল চিফ নামেই অভিহিত হয়ে আসছে।শান্তি চুক্তিতেও তাদের সার্কেল চিফই বলা হয়েছে।তবে নিজ সার্কেলে বসবাসকারী জনগণের কাছে তারা নিজেদেরকে রাজা বলেই পরিচয় দেয়।যা Chittagong Hill Tracts Regulation 1/1900 এর ৩৫ নং আইন এবং অন্যান্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিধি সম্মত নয়।

এইসব স্বঘোষিত রাজা এবং তাদের পূর্ব পুরুষগণ সাধারণ প্রজাদের জন্য সব সময় অনুকরণীয় ও আদর্শ চরিত্র।তবে আমার আজকের লেখার বিষয় “সার্কেল চীফ” বা “রাজা” শব্দের বিচার-বিশ্লেষণ করা নয়।বরং সাধারণ জনগণের প্রতি এদের দায়বদ্ধতা কতটুকু সেটাই আজ আলোচনা করবো।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুল প্রচলিত একটি জনপ্রিয় জাতীয় অনলাইন পত্রিকা হতে জানতে পারলাম যে গত ৫ মাসে রাংগামাটি জেলাতে খুন-১৬,আহত- ১৫, গুম- ২২ জন।বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি এই সব হত্যাকান্ডসহ সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিচার চাই।ভিকটিম পাহাড়ি হোক কিংবা বাংগালী সকল ক্ষেত্রেই অপরাধীর বিচার কাম্য।কিন্তু এই রাংগামাটি জেলার যিনি রাজা (প্রকৃত পদ সার্কেল চিফ) তিনি কেন একবারের জন্যও তার এই সব প্রজাদের হত্যাকান্ডের বিচার করছেন না বা বিচার চাইছেন না?

রাজা মহাশয় তো প্রথাগত আইনের আওতায় সব কিছু বিচার করার কথা বলে বেড়ান।এমনকি তিনি প্রথাগত আইন সংক্রান্ত একটি “গীতাঞ্জলী টাইপ” বইও রচনা করেছেন।রাজা বাবুর সেই বইয়ে কি প্রজাদের খুন হবার পরে বিচার সংক্রান্ত কোন আইন নেই? তার সব আইন পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি দখল,বাংগালী উচ্ছেদ আর প্রজাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টে অর্জিত অর্থকে খাজনা হিসেবে আদায় করার জন্য?

আসলে রাজা বাবু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি আর ভোগবিলাসী জীবন যাপনের জন্য নিজের সুবিধামত আইন প্রচলন করে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে প্রজাদের রক্ত চুষে খাচ্ছে (আরও পড়তে ক্লিক করুন http://goo.gl/93RNPm)। নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য প্রজাদেরকে অশিক্ষার অন্ধকারে ফেলে রাখছে। চাকমা রাজপরিবার কর্তৃক সাধারণ পাহাড়িদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের পথে অন্তরায় সৃষ্টির অনেক নির্মম ইতিহাস পাওয়া যাবে অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে ২০০২ সালে প্রকাশিত শরদিন্দু শেখর চাকমার আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আমার জীবন (প্রথম খন্ড)’ এর বিভিন্ন স্থানে। (আরও পড়তে ক্লিক করুন http://goo.gl/QQo7M9)।

‌’রাজা বাবু’ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি নয়।বংশ পরম্পরায় খাজনা আদায়ের নামে সাধারণ জনগণের রক্ত চুষে খাওয়ায় এই রাজা বাবুর পরিবারের কাজ।জনগণ দ্বারা নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি ছাড়া স্বার্থপর এই সব রাজা বাবু নিজ স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে মগের মুল্লুক চালাবে এটাই স্বাভাবিক।এভাবে আর চলতে পারে না। একজন গরীব কৃষক হাড় পানি করে ফসল ফলাবে আর সেই ফসলের ৪২ পয়সা যাবে এইসব রাজাবাবুদের ঘরে।সেই অর্থ দিয়ে স্বঘোষিত রাণীরা হাতে উল্কি আঁকবেন সেটা মেনে যায় না। রাণীর হাতের ঐ উল্কির মধ্যে লুকিয়ে আছে পাহাড়ী ভাইয়ের শুকিয়ে কালচে হওয়া রক্ত।বিংশ শতাব্দীর এই যুগে পুরাতন প্রথা বিলুপ্ত করার বিকল্প নেই।

জানিনা আমার এই লেখা রাজা বাবুর কাছে পৌঁছাবে কিনা।যদি পৌঁছায় সেই ধারণা থেকে বলছি-শুধু খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে “রাজা বাবু” হয়ে বসে থাকবেন না।আপনার সার্কেলের মধ্যে খুন হওয়া এইসব জনগণের (পাহাড়ি বাংগালী উভয়) পরিবারের পাশে দাঁড়ান।হত্যাকারীদের বিচার করুন (যদি আপনার প্রথাগত আইনে এ সংক্রান্ত কোন আইন না থাকে তবে আইন পয়দা করুন)।শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার উপকরণ হয়ে “রাজা বাবু” হয়ে খাজনা আদায় বন্ধ করুন।তা না হলে মনে রাখবেন জনগণকে উপেক্ষা করে কোনো ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যায় না।

লিখেছেনঃ-(সন্তোষ বড়ুয়া,রাঙামাটি থেকে)।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার তথ্য,বক্তব্য, মন্তব্য লেখকের একান্তই নিজস্ব।সিএইচটি টাইমস সম্পাদকীয় নীতি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!