

পাহাড়ি জনপদের শান্ত নীল আকাশ ও সবুজ প্রান্তরের বুকে আবারও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ক্রীড়ার উৎসবের সুর।কয়েকদিনের উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতার পর অবশেষে পৌছে গেছে প্রতীক্ষিত মুহূর্ত রিজিয়ন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’২৫ এর ফাইনাল ও সমাপনী। “ক্রীড়াই শক্তি,ক্রীড়াই বল” এই অনুপ্রেরণামূলক মূলমন্ত্রের আলোকিত পথে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট পাহাড়ি জনপদের খেলাধুলার ঐতিহ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।শৃঙ্খলা,দলবদ্ধ চেতনা ও খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নেতৃত্ব,উদ্যম ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে রোয়াংছড়ি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্রীড়া প্রেমীদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।বিভিন্ন উপজেলায় অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে সেরা প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করছে যা পরিণত হবে নৈপুণ্য,দলবদ্ধ চেতনা এবং খেলাধুলার সৌন্দর্যের এক অসাধারণ প্রদর্শনীতে।এ মহাযজ্ঞের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রোয়াংছড়ি সাব জোন কমান্ডার মেজর এম.এম.ইয়াসিন আজিজ।তিনি শুধু খেলাধুলার উন্নয়নই নয় এই অঞ্চলের শান্তি,সমৃদ্ধি ও মানবিক কল্যাণেও অবিচল ভূমিকা রেখে চলেছেন।তিনি যেন এক মানবতার ফেরিওলা।এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে তিনটায় বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানে বান্দরবান সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম মাহমুদুল হাসান,পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের মাঝে পুরষ্কার বিতরন করেন।এসময় জেলা পরিষদ সদস্য জারলম বম,রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃ দাঃ) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুন্নবী ভূঁইয়া,অফিসার ইনচার্জ এম. সাকের আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।সমাপনি ও পুরষ্কার বিতরন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাব জোন কমান্ডার মেজর এম.এম.ইয়াসিন আজিজ।এসময় স্থানীয় সুশিল সমাজ ও ক্রীড়ানুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন।সেনা রিজিয়নের সার্বিক পৃষ্টপোষকতায় আয়োজিত টুর্নামেন্ট এর ফাইনালে পঞ্চাশ মিনিটের খেলায় রোয়াংছড়ি ইউপি একাদশ ১-০ গোলে নোয়াপতং ইউপি একাদশ কে পরাজিত করে এবং টুর্নামেন্ট এর চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করে।রোয়াংছড়ি ইউপি একাদশের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন বুশৈসিং মারমা।খেলায় নোয়াপতং ইউপি একাদশ রানারআপ হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করে।সম্প্রীতির মিছিলে বান্দরবান শীর্ষক এই প্রতিযোগিতায় তিনটি গোল করে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন উচিংশৈ মারমা,সেরা গোল দাতা,বুশৈসিং মারমা,সেরা গোলকিপার,উমংসাই মারমা নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম মাহমুদুল হাসান বলেন, “মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত যুব সমাজ বিনির্মানে ক্রীড়ার ভূমিকা অনন্য।আজকের আন্তঃউপজেলা ভিত্তিক রিজিয়ন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট–২০২৫ উদযাপন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।পার্বত্য অঞ্চলে আমাদের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত,উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “খেলাধুলা কেবল শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে না।এটি যুবসমাজের মধ্যে নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা,দলবদ্ধ চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে।আমি অংশগ্রহণকারী সকল খেলোয়াড়কে উৎসাহিত করতে চাই এবং প্রতিটি খেলায় নিষ্ঠা ও উদ্যম বজায় রাখুন এবং দলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।আশা করি এই টুর্নামেন্ট পার্বত্য অঞ্চলে ক্রীড়া চর্চা ও সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।সেনাবাহিনী এ ধরনের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড ও ক্রীড়া প্রেমীদের জন্য এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।আয়োজকদের মতে,এ ধরনের প্রতিযোগিতা তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধান উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতা এবং জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক সমর্থনে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্ট পাহাড়ি জনপদের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।বান্দরবানের প্রতিটি দুর্গম পাহাড়ের পারা থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান ফুটবলাররাই আজকের ফাইনালের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।ক্রীড়া প্রেমীদের বিশ্বাস এই ফাইনাল কেবল একটি খেলার প্রতিযোগিতা নয় এটি তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন,সম্ভাবনা এবং ঐক্যের প্রতীক হয়ে থাকবে।