থার্ড টার্মিনালে বদলে যাবে দেশ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ জুলাই, ২০২২ ১২:৪৫ : পূর্বাহ্ণ 273 Views

করোনা মহামারির চোখ রাঙানি, বৃষ্টিবাদল উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ। চোখ ধাঁধানো এ মেগা প্রকল্পে বদলে যাবে দেশ। জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৪২ শতাংশ। আগামী বছর অক্টোবরে উদ্বোধন হবে স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য এ থার্ড টার্মিনালের।

জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করে চমক রাখতে চায় সরকার। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা বাড়বে বাংলাদেশের। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ এগিয়ে থাকা এ প্রকল্পের কাজ সময়ের আগেই শেষ হওয়ার আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিমানবন্দর যে কোনো দেশের আয়না।

একজন পর্যটক কোনো দেশে এলে বিমানবন্দর দেখে সে দেশকে প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন করে। বিমানবন্দর আধুনিক হলে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন হলে দেশের অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক যোগ হবে।
’ তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। থার্ড টার্মিনাল আমাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবে। এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ ৪২ শতাংশ শেষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কাজ। এ বছর আরও দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে যাবে।
টার্মিনাল ভবনের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে এবং ভিতরের বিভিন্ন সংযোজনের কাজ চলছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ শেষ করে আগামী বছর অক্টোবরে থার্ড টার্মিনাল স্ট্রাকচারালি (কাঠামো) উদ্বোধন করা হবে। সব যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সবকিছু সংযুক্ত করে পুরো বিমানবন্দর ফাংশনিং করতে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। একটা বিমানবন্দর ফাংশনিং করতে অনেক কাজ থাকে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, আমরা তা পূরণে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’
থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের ৩ হাজারের বেশি পিলার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গত বছরই। এখন এগুলোর ওপর তৈরি হচ্ছে টার্মিনালের অবকাঠামো। এ কারণে বিমানবন্দরসংলগ্ন সড়ক থেকেও দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের অগ্রগতি। পিলারের ওপরে বসছে নকশা করা কালো স্টিলের পাত। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আর শ্রমিকদের শ্রমঘামে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে থার্ড টার্মিনাল ভবন।

তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন হলে এ বিমানবন্দরে অনেক উড়োজাহাজ আসবে রানওয়েতে। বিমানবন্দরে রানওয়ে একটি। তাই উড়োজাহাজ রানওয়েতে থাকার স্থায়িত্ব যাতে কম হয়, দ্রুততার সঙ্গে যেন তা পার্ক করতে পারে এজন্য দুটি অতিরিক্ত হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা ছিল জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ করার। কিন্তু কাজটি মে-র প্রথম সপ্তাহেই শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

নির্ধারিত সময়ের আগে প্রকল্প শেষ করতে আট ঘণ্টা করে দুই শিফটে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা টানা কাজ চলছে। করোনা মহামারি থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। প্রকল্প এলাকাতেই শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু শ্রমিক আক্রান্ত হলেও নিয়মিত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন তারা। ফলে কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। করোনার থাবায় অনেক প্রকল্প পিছিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এ মেগা প্রকল্পের কাজ। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভিতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। নির্মাণাধীন টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর লাগানো হবে। যারা বিমানবন্দরের ভিতরে দীর্ঘ পথ হাঁটতে পারবেন না তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক বিমানবন্দরে বেশি যাত্রীপ্রবাহের জায়গাগুলোয় এ এসকেলেটরগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের একটি শান্ত ও মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। টার্মিনালটির প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে বেবি কেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভিতর মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে।এ ছাড়া শিশুদের খেলার জন্য স্লিপার-দোলনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। হেলথ ইনস্পেকশন সুবিধা,প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম,নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া থাকবে।প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। মোট খরচের সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি আর ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় পর্যাপ্তসংখ্যক এক্সেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হয়েছে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কার পার্ক। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হবে অনন্য নান্দনিকতা। এর বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!