শিরোনাম: জেলা প্রশাসকের হুঁশিয়ারিঃ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবেনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনঃ প্রিজাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুষ্ঠ ও সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রস্তুতি সভা কুকি-চিনের দুই সশস্ত্র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার যৌথ বাহিনীর অভিযানঃ তিন উপজেলায় স্থগিত হলো ভোট

মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরার উৎসব


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১ মে, ২০২১ ৮:০৯ : অপরাহ্ণ 224 Views

দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ। নৌকা আর জাল নিয়ে প্রস্তুতিও সম্পন্ন। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরার উৎসবে মাতবেন জেলেরা। শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নদীতে মাছ ধরার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা।জালে রূপালী ইলিশের ঝাঁক ধরা পড়বে এই আশায় বুক বেঁধেছেন জেলেরা।মৎস্য কর্মকর্তাদের দাবি, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল হয়েছে। যার সুফল পাওয়া যাবে আগামীতে।মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সফল হওয়ায় আগামীতে দেশে ইলিশের উৎপাদন রেকর্ড ছাড়াবে বলে আশাবাদী হয়ে উঠছেন ইলিশ গবেষকরা।ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ইলিশ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় এই দুই মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।২০০৬ সাল থেকে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের বিস্তীর্ণ নদী সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এই সময়ে নদীতে মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

সদর উপজেলার হরিণা ফেরীঘাট, বহরিয়া, রনগোয়াল, পুরানবাজার, আনন্দ বাজার এলাকার জেলে পল্লীগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইলিশ ধরতে মুখিয়ে আছেন জেলেরা।

নিষেধাজ্ঞার অবসর সময়ে মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও জাল সেলাই করে সময় কেটেছে তাদের। নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় জেলেদের মাঝে ফিরে আসে আনন্দঘন পরিবেশ।
চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এবং বিষ্ণপুর এলাকার জেলে রইস উদ্দিন ও মিজানুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কাজ শিখি নাই। তাই নিষিদ্ধ সময়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। নদীতে যেতে না পারায় আয়ের পথও বন্ধ ছিল। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। এই সময় বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে মাথায় ঋণের বোঝা আরো বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞা মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবার নদীতে মাছ ধরতে পারব।

লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া এলাকার জেলে আবুল কাশেম ও আলী আকবর বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা নৌকা মেরামত ও জাল সেলাই করে কাটিয়েছি। এখন আমরা ইলিশ ধরতে তৈরি। মধ্যরাত থেকেই মেঘনায় নৌকা নিয়ে ছুটব ইলিশ ধরতে। ভাগ্যে মাছ থাকলে তা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের ব্যয় বহন করতে পারব। নয়তো আমাদের দুঃখের সীমা থাকবে না।

তারা আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা সময়ে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা পেয়েছি ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে। তা ছাড়া প্রকৃত জেলেরা নদীতে না নামলেও অনেক অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে নেমে নির্বিচারে জাটকা ধরেছে। এতে করে আগামীতে ইলিশ পাওয়া নিয়ে সঙ্কিত আমরা।

তাদের দাবি, আগামীতে নদীতে অভিযান দিলে প্রশাসন যেন ভালোভাবে তদারকি করে। এভাবে মাছ ধরলে অভিযান দিয়ে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, স্বল্প জনবল নিয়েও প্রসাশন নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা রক্ষায় নিরলস কাজ করেছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড দিনরাত পালাক্রমে নদীতে অভিযান চালিয়েছে। তারপরও কিছু অসাধু জেলে নদীতে জাটকা শিকার করেছে। তবে সর্বোপরি আমাদের এই অভিযান সফল হয়েছে বলে মনে করছি আমরা। এর সুফল আগামীতে পাওয়া যাবে।

আসাদুল বাকী বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন গত দুই মাসে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মোট ৫৭৫ অভিযান চালানো হয়। এতে করে প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৩৮ দশমিক ৬৬ মেট্রিক টন জাটকা মাছ জব্দ করা হয়। অভিযানে ২৯০ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৪ শতাধিক জেলেকে অর্থদণ্ড করা হয়।

তিনি বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে নিবন্ধিত ৫১ হাজার ১৯০ জেলে। এসব জেলেদের মধ্যে ৪০ হাজার ৫ জন জেলেকে নিষিদ্ধ সময়ে ৪০ কেজি করে ৪ মাস চাল দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর এর মুখ্য বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা ও প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, গত বছর মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম ভালোভাবে করতে পারায় প্রচুর ইলিশ নদীতে ডিম ছেড়েছে। এতে করে এ বছর জাটকা উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছিল। যদিও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলেরা কিছু জাটকা নিধন করেছে। তবু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে আমরা দেখেছি, এ বছর অনেক জাটকা আমরা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছি। এতে করে দেশে ইলিশ উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকবে।

আনিসুর রহমান বলেন, গত বছর দেশে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হলেও আশা করি এবছর সেই রেকর্ড ভেঙে পৌনে ৬ লাখ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হবে দেশে। আগামীতে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ইলিশ উৎপাদনের ধারা আরো বৃদ্ধি পাবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!