কাজ নেই, ব্যস্ততা নেই, করোনাতে ব্যতিক্রমধর্মী সময় কাটাচ্ছে বান্দরবানের কামার সম্প্রদায়


রিমন পালিত (বান্দরবান প্রতিনিধি) প্রকাশের সময় :২৬ জুলাই, ২০২০ ৪:১৯ : অপরাহ্ণ 552 Views

এইবার করোনাতে ব্যতিক্রমধর্মী সময় কাটাচ্ছে বান্দরবানের কামার সম্প্রদায়ের লোকজন।প্রতি বছর এ কোরবানের দিনগুলোতে দা, ছুরি, বটিসহ বিভিন্ন লৌহা জাতীয় জিনিস তৈরিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটাতো কামাররা। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কাটালেও এবারের কোরবান টা অনেক ব্যতিক্রম। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস এর প্রভাব পড়েছে বান্দরবান জেলাতেও। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এই কোরবানিতে। আগের বছরের মতো হচ্ছে না তেমন বেচা-বিক্রি আর্থিক সংকটে আছে অনেক পরিবার । তাই মন্দা বেচা-বিক্রির মধ্যে ব্যতিক্রম এক সময় কাটাচ্ছে বান্দরবানের কামার সম্প্রদায় ।

প্রতিবছর বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গাতে বসতো বিশাল গরু ছাগলের হাট। বালাকাটা, কালাকাটা , বাজালিয়াতে ক্রেতা বিক্রেতাদের সরগমে মুখরিত হতো বিভিন্ন গরুর হাট গুলো। এর প্রভাব পড়তো কামারের দোকানেও। এবছর বেচাবিক্রি কম থাকায় কাজ কমেছে কামারের দোকানে। ফলে বান্দরবানের কামাররা বর্তমানে কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছে।

রবিবার (২৬ জুলাই) বান্দরবান বাজারে বিভিন্ন দোকান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কামাররা অলস বসে সময় পার করছে।

বান্দরবান বাজারে বাবু কর্মকার জানান,আগের বছরে কোরবানি ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে দিন-রাত নতুন দা, ছুরি, বটি তৈরি এবং শান দিতে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো। দিনে আয় হতো ৩-৪ হাজার টাকা। আর এখন করোনা ভাইরাসের কারণে কোন কাজ নেই। দিনে ৩-৪শ’ টাকা আয় করতে পারিনা। এছাড়া আগের বছরে কর্মচারীকে ৫০০ টাকা করে তাদের দৈনিক বেতন দিতাম কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাস ও লকডাউন এর কারণে কর্মচারীকে 900 টাকা করে দৈনিক বেতন দিতে হচ্ছে লোক সংকটের কারণে। তাই হাজার বছরের এই কর্মকার সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি করোনা ভাইরাসের এই করুন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমাদের কোনো আর্থিক সহযোগিতা অথবা প্রণোদনা প্রদান করতো তাহলে আমরা আমাদের এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারতাম । তা না হলে হলে আমাদের এই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না ,কারণ আমরা সকল কর্মকার সম্প্রদায় এই বছর প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি করোনা ভাইরাসের কারণে।

রাজু কর্মকার জানান আগের বছরে মত এবছর বেচা বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতাসাধারণ খুব কম। ছেলে মেয়ে পরিবার ও সংসার নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি।

কোরবানির জন্য ছুরি কিনতে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ আমান জানান, দীর্ঘ মাস করোনা ভাইরাসের কারনে সকল মানুষ খুব আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে মানবতার জীবন যাপন করছে। আগের বছর যেভাবে আনন্দ উৎসবের মধ্যে কোরবান উদযাপন করেছে এবার আর্থিক সংকট এর মাধ্যমে সেভাবে কোরবান উদযাপন করতে পারছে না ।

বর্তমান কর্মকাণ্ডের অবস্থা জানতে চাইলে ,কামার সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন আগের মত আর দা, ছুরি, বটি নিয়ে আসেনা এবং অর্ডারও দেয়না। তাই কাজ নেই, ব্যস্ততাও নেই। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে।

বান্দরবানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ ও মুদির দোকান বাজার ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিমল দাশ জানান, করোনা ভাইরাসের ফলে এবার বহু মানুষ কোরবানী দিতে পারছে না। পশুর হাটও আগের মতো জমে উঠছে না। ফলে বেচা বিক্রিও নেই হাটে। যে কারণে কামারদের এখানে লৌহ জাতীয় জিনিস তৈরি এবং বিক্রিতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।

এই শিল্পের সাথে জড়িত কর্মকাররা সরকারের নিকট আবেদন করছে, অন্তত এবছর তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে হলেও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা হউক।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!