শিরোনাম: বান্দরবানে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলেন ধর্মপ্রান মুসল্লিরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাড়াতে চালু হলো হেল্প ডেস্ক কেএনএফ এর ৭ সদস্য কারাগারেঃ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতি কে বহিষ্কার যৌথ বাহিনীর অভিযানঃ তিন উপজেলায় স্থগিত হলো ভোট প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন প্রচার প্রকল্পের আওতায় মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত রুমার দুর্গম মুনলাইপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে এক কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আর দুইজন রিমান্ডে বান্দরবানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধের আহবান জানালো বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নেতারা

আমার ভাষা আমার অহংকার


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১২:৫৮ : অপরাহ্ণ 840 Views

বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলাদেশ আমার পিতৃভূমি। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।আর বাংলা আমার মায়ের ভাষা, প্রথম শেখা শব্দ,এই ভাষাতেই মা। তাহলে মায়ের মতোই বাংলা ভাষাটি আমার কাছে আপন। বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ এবং আমার প্রিয় গর্ভধারিনী মা এই তিনটি কে মনের গভীর থেকেই লালন করতে হবে। মা মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা তিনটি একই সূত্রে রচিত। একটি থেকে অন্যটিকে পৃথক বা বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। মাকে যেমন আপনি মা বলে সম্বোধন করে যেই রকম শান্তি পাবেন। মাম্মা বা মাম্ম বলে সম্বোধন করে সেই রকম শান্তি পাবেন না। তেমনি করে বাবাকে বাবা বলে ডেকেই শান্তি পাবেন। ড্যাড বা ড্যাডি বলে ডেকে অতৃপ্তি রয়েই যাবে। ঠিক তেমনি করে মাতৃভূমি বাংলাদেশে বসবাস করে যেই রকম মানসিক সুখ পাবেন আপনি বিশ্বের সবচেয়ে দামী রাষ্ট্রে বসবাস করেও সে সুখ পাবেন না।
বাংলা ভাষাকে আমরা এমনিতেই পায়নি। আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে নিয়ে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমাদের মুখের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দিতে ছেয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই ঘোষনার তীব্র বিরোধীতা করে ছাত্র ছাত্রীরা। তার এই কথার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের আপমর জনতা রুখে দাড়ায় । পূর্ব বাংলার মানুষ তাদের এ অন্যায্য দাবী মোটেও মেনে নিতে পারেননি। এবং মানসিকভাবে কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিলো না। ফলস্বরূপ বাংলা ভাষার সম মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেধে ওঠে। আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ঢাকা মেডিকেলের কাছাকাছি এলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিতভাবে গুলি বর্ষন করে। এই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের) সাবেক ছাত্র রফিক, সালাম, এম.এ ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জাব্বারসহ আরো অনেকে। এছাড়াও ১৭জন যুবক /ছাত্র আহত হয়। শহীদরে রক্তে রাজপথ রঞ্জতি হয়ে ওঠে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শফিউর রহমান, রিক্সাচালক আউয়াল এবং এক কিশোর।
ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গনে রাতারাতি ছাত্ররা গড়ে তুলে শহীদ মিনার। যা ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে উদ্ভোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ভোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম সামসুদ্দীন।
একুশ মানে আমাদের গর্ব, একুশ মানে আমাদের অহংকার। একুশ মানে লাল টকটকে রক্তের লেখা ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় ঘটনা। জাতি সত্তার বিকাশে ভাষা আন্দোলনের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। ২১ শে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু বাংলাদেশের ভাষা দিবস নয়। এটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখন বিশ্বজুড়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । তাছাড়াও আফ্রিকান রাষ্ট্র সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, লন্ডনে প্রচলিত রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক ভাষা।
তার মধ্যে বাংলা ভাষার অবস্থান রয়েছে দ্বিতীয় তম স্থানে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম সহ সারা বিশ্বে ৩০ কোটির ও বেশি লোকের মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা।

বহু কষ্টে আর রক্তে অর্জিত হয় প্রিয় ভাষা বাংলা। অথচ আজো আমরা বাংলা ভাষা সর্বত্র চালু করতে পারিনি। বাংলা ভাষার প্রকৃত ব্যবহার বাংলাদেশের সর্বত্র এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আমরা মনে করি কিন্তু বাংলা ৮ই ফাল্গুনকে আমরা মনে করিনা। আমি মনে করি, ৮ই ফাল্গুনকেই আমাদের ভাষা দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী । কারণ বাংলা ভাষার জন্যই আমরা হারিয়েছিলাম সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকেই।
আমাদের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষার কথা উল্লেখ রয়েছে বাংলা। অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হচ্ছে বাংলা। তথাপিও আমরা এখন আধুনিকতার নামে বিভিন্ন ভাষায় আমাদের সীল বানায়, এখনো বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার সীল বাংলার পরিবর্তে ইংরেজীতে বানানো হয়ে থাকে। বিভিন্ন অফিসিয়াল প্যাড ও ইংরেজীতে দেখতে পায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানায় দোকান পাট, কল কারখানার সাইনবোর্ড গুলো ইংরেজীতে লিখে থাকি। আমি মনে করি এই গুলো বাংলায় হওয়া উচিত। তবেই আমাদের ভাষা শহীদের আত্না শান্তি পাবে। ভাষা দিবস স্বার্থক হবে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলা ভাষা আরো সমৃদ্ধ হবে।

লেখক: রাজিব আশরাফ,সাবেক সাধারণ সম্পাদক;জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি ও পুলিশ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পুলিশ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
April 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!