প্রথমবারের মতো টিউলিপ ফুটেছে দেশে


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১২:৩১ : অপরাহ্ণ 413 Views

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টিউলিপ ফুল ফোটানো সম্ভব বলে প্রমাণ করেছেন ফুলচাষী দেলোয়ার হোসেন। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া দক্ষিণখন্ড গ্রামে টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব রোপণের ২২ দিনের মাথায় ফুল ফুটেছে।

চাষী দেলেয়োর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের বাগানে টিউলিপ ফুটেছে দেখে অন্যদের চেয়ে আমরাই বেশি খুশি হয়েছি। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে আমরা ফুল চাষ শুরু করি। প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে পরিকল্পনা করিনি। কিন্তু প্রথম বছরেই উৎপাদন ভালো হওয়ায় পরে গ্ল্যাডিওলাস ফুল চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে চাষবাস শুরু করি। ওই দেশ থেকেই ফুলের চাষ প্রক্রিয়া, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার, ফুল গাছ রোপন ও পরিচর্যা প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিগত পণ্য সংগ্রহ করি। এবারই প্রথম দেশে এবং আমার বাগানে বিরল প্রজাতির টিউলিপ ফুল ফুটেছে।’

শুরুর কথা

দেলোয়ার হোসেনের সহযোগী ও তার স্ত্রী শেলী চাষবাসে সমানভাবে জড়িত। শেলী বলেন, ‘নেদারল্যান্ড থেকে ২০১৭ সালে রয়েল ভ্যান জেন্টেন নামের একটি কোম্পানি থেকে লিলিয়াম ফুলের ৬০ হাজার বাল্ব এনে চাষ শুরু করি এবং সফল হই। দুই বছর লিলিয়াম উৎপাদন করি। তৃতীয় বছরে লিলিয়ামের বাল্বগুলো সংরক্ষণ করি ও পরে সেগুলো বিক্রি করে ফেলি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে একই দেশ থেকে ফুল গাছ ও বাগানের প্রযুক্তিগত কাঁচামাল সংগ্রহ করি। এসময় সে দেশ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব ওই কোম্পানি থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। রোপণের ২২ দিনের মাথায় টিউলিপ বাল্বগুলো থেকে দুটি পাতা বেরোনোর পরই ফুল ফুটে। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ফুলের দেখা মেলে। প্রতিদিনই ফুল ফুটছে।’

ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, টিউলিপ গাছের পরিচর্যা ও ফুল ফোটার জন্য কমপক্ষে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। সেখানে আমাদের এলাকায় শীতে সর্বনিন্ম ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। এর মধ্যেই এই ফুলটি ফুটেছে। অনেকে ৮০ টাকা পিস কিনে নিতে চেয়েছিলেন, বিক্রি করিনি। দেশে যেহেতু এটাই প্রথম ফলন এবং আমার বাগানেই তা ঘটেছে তাই আমি বিক্রি করবো না। অনেক দর্শণাথী এসে ফুলগুলো দেখছেন। এটি আমাদের অর্জন, দেখতে ভালো লাগে, মানুষ আসছে দেখার জন্য। এতেই আমাদের আনন্দ। ফুল না ফুটলে হয়তো এ আনন্দ আমি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম না।’

ভবিষ্যতে টিউলিপের চাষ বাণিজ্যিকভাবে করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এই ফুল চাষের বিষয়ে নেদারল্যান্ডস থেকে আরও জ্ঞান নিয়ে বৃহৎ পরিসরে টিউলিপের চাষ করার আশা রয়েছে তার।

বাংলাদেশে প্রথম টিউলিপ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপিরচালক ড. আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশে টিউলিপ চাষ সফলভাবে করা সম্ভব। চাষি দেলোয়ার হোসেন তা করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতে টিউলিপ ফুল ফোটা দেখা আমার এটিই প্রথম। সাধারণত বরফপ্রধান দেশগুলো টিউলিপ ফুলের চাষ হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচণ্ড ঠান্ডা থাকায় সেসব দেশে টিউলিপ ভালো ফুটে। কিন্তু বাংলাদেশে টিউলিপ ফুলের চাষ করে চাষি দেলোয়ার হোসেন অবাক করে দিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলবো। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রফতানিযোগ্য পণ্য হিসেবে টিউলিপ ফুলের চাষ করতে পারবে।’

আরও যা করেন দেলোয়ার

শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া দক্ষিণখন্ড এলাকার দেলোয়ার হোসেন দুই একরের বেশি জমিতে ফুলের চাষ করে আসছেন। প্রায় ১৫ বছর যাবত ফুলের চাষ করছেন তিনি। এবার স্ট্রবেরি এবং ক্যাপসিকামের আবাদও করেছেন। তার কাছ থেকে ফুল চাষের পরামর্শ নিয়ে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, সাভার, কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফুল চাষে এগিয়ে এসেছেন চাষিরা। দেলোয়ার জানান, ফুল চাষে প্রযুক্তিগত কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা পেলে ফুল চাষ আরও ছড়িয়ে পড়বে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!