

পার্বত্য অঞ্চলে অন্যান্য সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে শান্তিচুক্তির সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে চাকমা সম্প্রদায় । অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বিশ শতকের আশির দশক থেকে জনসংহতি সমিতি জুম্ম জাতীয়তাবাদ নামে পাহাড়ি জনগণের একটি নতুন পরিচিতি তুলে ধরে। এতে দাবি করা হয় যে, পার্বত্য এলাকার ১৩টি পৃথক জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে জুম্ম জাতি গঠিত। সংখ্যা গরিষ্ঠের কর্তৃত্বের মোকাবেলায় পাহাড়ি জনগণকে একই পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে এই নামকরণ করা হয়। এ নতুন জাতি গঠনের লক্ষ্য ছিল পাহাড়িদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং উপজাতি ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস। জনসংহতি সমিতি তাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দানেরও দাবি জানায়।
কিন্তু ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বরের শান্তি চুক্তির দিকে তাকালেই বেশি দেখা যায় পাহাড়ের ১৩টি পৃথক জাতির গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শান্তি চুক্তির সুফল ভোগ করেছে চাকমা সম্প্রদায়। অন্যদিকে পাহাড়ের ১৩টি সম্প্রদায়ের দিকে এক নজরে তাকালে দেখা যায় তারা সবদিক থেকেই বঞ্চিত । চাকমা সম্প্রদায় অন্যান্য সব জাতি গোষ্ঠীর দিক থেকে শিক্ষা,চাকরীসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধায় তারা এগিয়ে।
অন্যদিকে পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করতেও সবচেয়ে বেশি পায়তারা করে চাকমা সম্প্রদায়। পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উগ্রপন্থী চাকমা সম্প্রদায়। তারা সব সময় পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করতে পায়তারা করে থাকে।
একনজরে পাহাড়ের চাকমা সম্প্রদায়:
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম প্রধান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হলো চাকমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। এই চাকমা সম্প্রদায়ের আদি উৎস নিয়ে গবেষকদের মধ্য বহু আলোচনা সমালোচনা এবং যুক্তি তর্কের প্রেক্ষিতে ধারণা করা হয়ে থাকে যে, এরা আরাকান থেকে আমাদের দেশে এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এসে প্রথম বসতি স্থাপন করে বসবাস শুরু করেন। তবে এই চাকমা সম্প্রদায়ের বেশীর ভাগ লোক রাঙামাটি অঞ্চলে বসবাস করে। এছাড়াও পাবর্ত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, মাটিরাঙা, পানছড়ি, রামগড়, মানিকছড়ি উপজেলাগুলোতে এদের বসবাস রয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলাধীনে বাবু ছড়া, বড় আদাম প্রভৃতি গ্রামে এরা বসতি গড়ে তুলেছে। পানছড়ি উপজেলাধীনে ভাইবোন ছড়া, পূজগাঁ, লতিবেগ ছড়া ইত্যাদি গ্রামের মতো, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলাধীনে বিভিন্ন গ্রামে এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
চাকমা সম্প্রদায়ের সঠিক ইতিহাস আজও অজানা। এদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যতোদূর জানা যায়, তা কতটুকু তথ্য নির্ভর, সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ এদের যে ইতিহাস রয়েছে, তা হলো শত শত বছরে পরস্পরের মুখে মুখে চলে আসা জনশ্রুতি থেকে লেখা ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী থেকে পাওয়া এদের সম্পর্কে লেখা ইতিহাস, ইংরেজদের দেয়া বিভিন্ন তথ্য থেকে সংগ্রহ করা ইতিহাস।
কাজেই কোন বংশধারা থেকে এরা উদ্ভূত, অতীতকালে এ সম্প্রদায়ের আদি নিবাস কোথায় ছিল এবং আদিম বৈশিষ্ট্য রীতিনীতি আচার অনুষ্ঠান কিরূপ ছিল সে সম্পর্কে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।
তবে চাকমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে মঙ্গোলীয় শ্রেণীর মানব গোষ্ঠীর বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
অরোমশদেহ, বিরল শ্বশ্রূ, চ্যাপ্টা নাক, ভারী ভুরু এবং বাদামী রং এর চোখ এসব লক্ষণ মঙ্গোলীয় মানব গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য।
বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলার ১৩টি ক্ষৃদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্যান্য সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। বলতে গেলে শান্তি চুক্তির সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে চাকমা সম্প্রদায়।