যে নারীর কারণে মরতে হলো আইএসপ্রধান বাগদাদিকে!


সিএইচটি টাইমস অনলাইন প্রকাশের সময় :২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১২:১৫ : অপরাহ্ণ 766 Views

আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি (বামে) নিহত মার্কিন নারী কায়লা মুয়েলার (ডানে)
আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির আস্তানায় অভিযান চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে মার্কিন সেনা। রোববার সেই অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করেছে ইরাকি টেলিভিশন।

সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, আইএসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদিকে হত্যার উদ্দেশে ইরাকের উত্তরাঞ্চল থেকে আটটি হেলিকপ্টারে করে গভীর রাতে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অভিযান শুরু করে মার্কিন সেনারা।

মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের সেই অভিযানের নাম ছিল ‘কায়লা মুয়েলার’।

আর এ নামকরণের পেছনে রয়েছেন এক মার্কিন দাতব্য কর্মী। তার নামই কায়লা মুয়েলার।

ওই মার্কিন নারীর নামে বাগদাদি হত্যা মিশনের নাম রাখার কারণ হিসেবে জানা গেছে, কায়লা মুয়েলার হত্যাকাণ্ডে আবু বকর আল-বাগদাদি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

মার্কিন সেনাবাহিনীর দাবি, বাগদাদি কায়লা মুয়েলারকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে হত্যা করেছিল বাগদাদি।

তাই ওই নারীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে অভিযানটির এ নাম রাখা হয়।

২০১২ সালে সিরীয় শরণার্থীদের জন্য কাজ করতে প্রথম তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে গিয়েছিলেন কায়লা মুয়েলার। সে সময় তিনি ২৬ বছর বয়সী নারী ছিলেন।

২০১৩ সালে সিরিয়ার আলেপ্পোতে অপহৃত হন কায়লা। এরপর দীর্ঘদিন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার অবস্থান নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির অধীনে জিম্মি হয়ে আছেন কায়লা।

জিম্মি থাকার সময় ২০১৪ সালে বাবা-মাকে পাঠানো এক চিঠিতে মুয়েলার লেখেন, ‘তোমরা কান্নাজড়িত যেসব চিঠি আমাকে পাঠিয়েছ, সেগুলোর কথা চিন্তা করে আমি কেবল চিঠিই লিখতে পারি। আমি জানি, তোমরা তীব্রভাবে আমাকে ফিরে পেতে চাও। আমি সে জন্য চেষ্টা করছি।’

এরপর পেরিয়ে যায় এক বছর। এরপর কায়লা নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রচারিত হয়।

২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিশ্চিত করেন, কায়েলা মুয়েলার নিহত হয়েছেন। আইএসের হাতে আটকের পর নিহত চতুর্থ মার্কিনী তিনি।

তবে কায়েলার মৃত্যু নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল।

সে সময় পেন্টাগন দাবি করেছিল, আইএসই কায়লাকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে মার্কিন সেনাদের কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেন, আবু বকর বাগদাদি নিজেই মুয়েলারকে নির্মম নির্যাতন করে এবং পরে তাকে হত্যা করে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে বলা হচ্ছিল, মুয়েলারকে আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল বাগদাদি।

তবে শুরু থেকে মার্কিন তরফের এসব দাবি অস্বীকার করে আসছে আইএস।

আইএস বলছে, জর্ডানের বিমান হামলায় মুয়েলার নিহত হয়েছেন।

আইএস যাই দাবি করুক সেই মার্কিন নারী দাতব্য কর্মী যে আর পৃথিবীতে নেই তা একেবারে নিশ্চিত এবং আইএসই তাকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে সে কথায় অনড় মার্কিন প্রশাসন।

শনিবার রাতে মার্কিন সেনাদের কায়েলা মুয়েলার অভিযানে নিহত হয়েছেন বাগদাদি।

বিষয় নিশ্চিত করে হোয়াইট হাউজে বিবৃতিও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার সকালের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাঙ্গাত্মক ও কটূক্তিপূর্ণ ভাষায় অভিযানের বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন।

এই অভিযানকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর পাঁচ বছরের লড়াইয়ের অন্যতম সাফল্য বলে দাবি করেছেন তিনি।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটনে বসে অভিযান শুরুর প্রস্তুতির সময় (বিকেল পাঁচটা) থেকে তিনি খোঁজ রাখছিলেন। তিনি অজ্ঞাত এক প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযানের চিত্র দেখেন বলে দাবি করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, এটা ছিল সিনেমা দেখার মতো। তবে ওই প্রযুক্তির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাননি তিনি।

এরপর ট্রাম্প বলেন, বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় একটি মৃতপ্রায় সুরঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাগদাদি। বাগদাদি নায়কের মতো মরতে পারেনি। তিনি মারা গেছেন কুকুরের মতো, কাপুরুষের মতো। কান্না করেছে, চিৎকার করেছে, সন্তানদের কাছে এনেছে মরার জন্য। অবশেষে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অভিযানের সময় একটি সুইসাইড বেল্ট পরা ছিলেন এ আইএস নেতা। বিস্ফোরণের মাধ্যমে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ডিএনএ ও বায়োমেট্রিক পরীক্ষা করে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে বলে জানায় মার্কিন সামরিক বাহিনী।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বাগদাদি হত্যার অভিযানের বিশদ বর্ণানা দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে মাঝরাত অতিক্রম করার পর মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ইরাক, তুরস্ক এবং রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ সময় মার্কিন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে জানান, তারা একটি অভিযানের পরিকল্পনা করেছে।তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তারা। সিরিয়ায় রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই যোগাযোগকে ‘কমিউনিকেশন ডিকনফ্লিকশন’ বলছে পেন্টাগন।

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের টার্গেট এলাকায় ভোরে পৌঁছানোর পর মার্কিন বাহিনী প্রথমে বাগদাদি অবস্থানরত ভবনের আশপাশের বিভ্ন্নি গর্ত উড়িয়ে দেয়; যাতে পেছনের কোনো দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারেন। বাগদাদি বুঝতে পেরে ভবন থেকে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে একটি সুরঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করেন।

সুরঙ্গে বাগদাদি প্রবেশ করায় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একদল প্রশিক্ষিত কুকুর ঢুকে পড়ে। বাগদাদিকে তাড়া করতে গিয়ে একটি কুকুর সামান্য আহত হয়।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সুরঙ্গে বোমা মারতে শুরু করে। কিন্তু এর এক পর্যায়ে আইএসের এই নেতা বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটান।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েন এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেছেন , ভবনের ভেতরে অভিযানের সময় শত্রুপক্ষের পাঁচ যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং বাকিরা ভবনের বাইরে। ওয়াশিংটনে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বাগদাদিকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেন মার্কিন সৈন্যরা।

প্রসঙ্গত বাগদাদি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। চলতি বছরের এপ্রিলে আইএস মিডিয়া শাখা আল-ফুরকান একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল, যাতে এক ব্যক্তিকে বাগদাদি বলে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুলাইয়ে মসুলের এক মসজিদে তাকে দেখা গিয়েছিল।

সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, এনবিসি।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!