রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনীর সহায়তায় নতুনভাবে বাচাঁর স্বপ্ন দেখছে চাথুইমা মার্মা ও ইমোনা চাকমা


প্রকাশের সময় :৩০ মে, ২০১৭ ৮:১৬ : অপরাহ্ণ 703 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-বিগত ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়ার চাথুইমা মারমার বিকল হতে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছিলো রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কর্তৃপক্ষ।এরপর দীর্ঘ ৭ মাস চিকিৎসা শেষে চাথুইমা মারমা সুস্থ হয়ে রিজিয়ন কমান্ডারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসে।সাক্ষাতের সময় তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তার চলাফেরা আরো স্বাভাবিক করতে রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের পক্ষ থেকে একটি উন্নতমানের বাই সাইকেল চাথুইমা মারমাকে প্রদান করেন রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম ফারুক।এসময় বিগ্রেড ডি-কিউ মেজর ইয়াছিন,জি-টু-আই মেজর সৈয়দ তানভীর সালেহ ও মেজর রাকিবসহ সেনাবাহিনীর উর্দ্বতন কর্মকর্তা ও চাথুইমা মারমার প্রশিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য,বিগত ২০১৫ সালে নেপালে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার আগে ঢাকায় জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পে অনুশীলনের সময় তা বাম পায়ে চোট পায় সাথুইমা।এরপর ফুটবল থেকে ছিটকে পড়ে।এরপর থেকে পায়ের চোটের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে শখের ফুটবল খেলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের শেষ মুহূর্তে এই কৃতি খেলোয়াড়ের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.সানাউল হক এসজিপি,পিএসসি।এরপর থেকেই তার প্রতি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে রাঙামাটিস্থ ৩০৫ পদাতিক বিগ্রেড সেনা রিজিয়ন কর্তৃপক্ষ।চাথুইমা মারমা জানায়,আমি সেই ২০১৫ সাল থেকে মাঠের বাইরে রয়েছি।এটাযে কতোটা কষ্টদায়ক ভূক্তভোগী ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা আমি আবারো মাঠে নামবো এটা ভাবতেই আমার খুব ভালো লাগছে।চাথুইমা জানায়,আপাতত আমি পায়ের ব্যায়াম করছি।চলাফেরা করতে এবং ব্যায়াম ঠিক রাখতে মাননীয় রিজিয়ন কমান্ডার স্যার আমাকে একটি উন্নতমানের বাই সাইকেল উপহার দিয়েছেন।এটি দিয়ে আমি খুব শীঘ্রই ভালোভারে চলাফেরা করতে পারবো।আবারো মাঠে নেমে জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছেটাই আমার এখনকার একমাত্র লক্ষ্য।এদিকে,বসতঘরে লাগা আগুনে পুড়ে শরীরের অর্ধেকাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া জুমিয়া কৃষক কন্যা ইমোনা চাকমার পাশে দাড়িয়েছে রাঙামাটিস্থ ৩০৫ পদাতিক বিগ্রেড তথা রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কর্তৃপক্ষ। জনৈক ব্যক্তির ফেসবুক স্টেটাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আজ চাকমাকে জেলার দূর্গম জুড়াছড়ির ঘিলাতলী এলাকা থেকে রাঙামাটিতে ডেকে আনেন রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম ফারুক।এসময় তিনি ইমোনা চাকমার সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়ে ইমোনার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করনে করনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।এরই আলোকে ৩০ মে চট্টগ্রাম মেডিকেলে সেনা বাহিনীর তত্বাবধানে ইমোনার চিকিৎসা শুরু করা হবে বলেও জানান রিজিয়ন কমান্ডার।এসময় ইমোনার সাথে আসা ফেসবুকে স্টেটাস প্রদানকারি তার চাচা লালন চাকমা, বিগ্রেড জি-টু-আই মেজর সৈয়দ তানভীর সালেহসহ সেনাবাহিনীর উদ্বর্তন অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।এসময় ইমোনা চাকমা তার প্রতিক্রিয়ায় জানায়,আমি আবারো স্কুলে যেতে পারবো।ভালোভাবে হাত নাড়িয়ে সোজা হয়ে কাজ করতে পারবো,খেলতে পারবো।সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভূল করেনি ১১ বছরের মায়াবি চেহারার ইমোনা চাকমা।উল্লেখ্য,বর্তমানে জুড়াছড়িস্থ ঘিলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ইমোনা চাকমা বিগত ২০০৯ সালে নিজ বসতগৃহে ঘুমিয়ে থাকাকালীন সময়ে আকস্মিক অগ্নিকান্ডে আগুনে পুড়ে যায় শরীরের বেশির ভাগ অংশ।এতে করে বামপাশের অধিকাংশ ও শরীরের ডানপাশের আংশিক অংশ পুড়ে মারাত্মক আহত হয়।সেসময় মানুষের সহায়তায় এবং সহায় সম্বল বিক্রি করে কোনো রকম চিকিৎসা করে ইমোনাকে ভালো করে তুলেন বাবা জুমচাষী কৃষক মরদ স চাকমা।এরপর ২০১৪ সালে ইমোনার মা পদ্মানন্দী মারা যান।এরপর থেকে ইমোনার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।গ্রামের এক শল্য চিকিৎসকের চিকিৎসা করতে গিয়ে ইমোনার বাম হাতের নীচের অংশ থেকে কোমরের নীচের অংশের মাংস ও চামড়া পুড়ে যাওয়ায় তার শরীর সংকুচিত হয়ে আসে।ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছিলো ইমোনা।এছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে নাপারায় তার শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশে সংক্রামিত হয়ে চুলকানো ও ক্ষত হতে থাকে,এমতাবস্থায় ইমোনার পিতার করুন আর্তিতে এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি লালন চাকমা ইমোনার কয়েকটি ছবি তুলে নিজের ফেসবুক একাউন্টের টাইম লাইনে ইমোনা চাকমার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে স্টেটাস দেন। লালন চাকমা জানান,আমি শনিবার বিকেলে স্টেটাস টি আপডেট দিয়েছি।এরপর রাতের বেলায় রাঙামাটি রিজিয়ন থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে রোববার সকালে রাঙামাটি আসার জন্য বলে।আমি দুপুরে ইমোনাকে নিয়ে রাঙামাটি রিজিয়নে আসি।বিগ্রেডের জি-টু-আই মেজর তানভীর স্যার আমার সাথে কথা বলে রিজিয়ন কমান্ডারকে বিস্তারিত জানায়।পরে দুপুরে রিজিয়ন কমান্ডার স্যার আমার সাথে এবং ইমোনার সাথে কথা বলে ইমোনাকে সুস্থ করে তোলার সকল দায়-দায়িত্ব রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন নিবে বলে আশ্বস্থ করেছেন। লালন চাকমা বলেন,হতদরিদ্র ইমোনা চাকমার সুচিকিৎসার দায়িত্ব রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন গ্রহণ করায় তাদের প্রতি ইমোনার পরিবারসহ আমরা সকলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।শীঘ্রই ইমোনাকে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে জানিয়ে রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম ফারুক জানিয়েছেন,ইমোনাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে যতটাকাই খরচ হোক না কেন,রাঙামাটি রিজিয়ন এর পক্ষ থেকে তার সবটুকুই বহন করা হবে।(((আলমগীর মানিক;রাঙ্গামাটি)))

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!