ভিশনে উজ্জীবিত বিএনপি কিন্তু চাপিয়ে দেয়া কমিটির কারণে তৃণমূলে পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ


প্রকাশের সময় :২৯ মে, ২০১৭ ১২:৫৪ : পূর্বাহ্ণ 495 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-‘রেইনবো নেশন’ বা রংধনু জাতি গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। কিন্তু কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া কমিটির কারণে তৃণমূলে পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও ম্লান হতে চলেছে নেতাকর্মীদের উচ্ছাস। তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা কোন্দলটা রাজনীতি হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন,একটু-আধটু ধাক্কাধাক্কি না হলে পরে রাজনীতি হয় নাকি? জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার বলেন, ‘তৃণমূলে বিএনপি শক্তিশালী হতো যদি আমরা স্থানীয়ভাবে কাউন্সিল করতে পারতাম।কাউন্সিল হলে কর্মীদের কথা শোনা যেত।রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকাতেই এমনটা হচ্ছে।’
অভ্যন্তরীণ কোন্দল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে একটু গ্রুপিং দলাদলি না হলে এটা রাজনীতি বলে নাকি? কিছু ধাক্কাধাকি না থাকলে রাজনীতি হয় না।’ ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এখনও তৃণমূলের উপজেলা,থানা,ওয়ার্ড পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারেনি।’ দলীয় সূত্রে জানা গেছে,বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০টির মতো কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।এর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি জেলায় কাউন্সিল বা কর্মীসভা হয়েছে।বাকিগুলো কেন্দ্র থেকে ঘোষিত।ফলে দল গোছানোর এ প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের কোন্দল তো মিটছেই না,বরং কোন্দল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।এর মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেন।শুরুতে নেতাকর্মীরা কিছুটা উজ্জীবিত হলেও কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিভাজনে জড়িয়ে পড়ছে তারা।যে কারণে এখন তৃণমূলের উপজেলা,থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘ভিশন ২০৩০’ পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।জানা গেছে,জয়পুরহাট, বান্দরবান,খাগড়াছড়ি, সাতক্ষীরা,খুলনা, নারায়ণগঞ্জ,নারায়ণগঞ্জ মহানগর,নোয়াখালী, মেহেরপুর,চট্টগ্রাম মহানগর,টাঙ্গাইল, রংপুর, গাজীপুরসহ প্রায় ৫০টি জেলার আংশিক কমিটি করা হয়েছে।এর মধ্যে সিলেট,কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী,জামালপুর,দিনাজপুর,ঝিনাইদহ, ঝালকাঠিসহ ১০ থেকে ১২টিতে কাউন্সিল বা কর্মীসভা হয়েছে।বাকি জেলাগুলোর কমিটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সায়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, ‘বিএনপির মত এত বড় একটি রাজনৈতিক দলে একটু-আধটু কোন্দল থাকতে পারে।নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে এটা দোষের কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘গাজীপুর জেলার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে।ভিশন ২০৩০ ঘোষণা পেয়ে সবাই খুব উজ্জীবিত।’ সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইফতেখার আলী জানান,সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটি হাবিবুল ইসলাম হাবীবের আর্শিবাদপূষ্ট।এই কমিটি ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ করতে পারবে না।সভাপতি ঢাকা প্রবাসী আর সাধারণ সম্পাদক জেলে।তাদের দিয়ে কাজ হবে কারণ সভাপতি এলাকায় আসলে তার বাসায় সীমাবদ্ধ থাকেন দলীয় কার্মকাণ্ড।তবে ইফতেখার আলী এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশ বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা।আমাদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।এখনও কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।কোনো দিক নির্দেশনা আসলে তা বাস্তবায়ন করবো।আমরা ম্যাডামের কার্যালয়ে তল্লাশির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছি।যেখান থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।’ এদিকে যশোর জেলা বিএনপিতেও রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।তবে তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।বিএনপির তৃণমূল সম্মেলনে নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে কোনো কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।আমরা জেলা নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সকলের সম্মিতিতেই কমিটি গঠন করেছি।এর আগে কাউন্সিল করার চেষ্টা করেছি যেখানে তা সম্ভব হয়নি,সেখানে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশেই যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কাউন্সিল করার জন্য কিন্তু সব জায়গার তা সম্ভব হয়নি।’ আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘কেন্দ্র তো আর তৃণমূলের বাইরে নয়।কেন্দ্র চাইলে কমিটি করে দিতে পারে।তদারকি করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও সারাদেশে কমিটিগুলো শেষ করতে পারেনি।এর মধ্যে অনেক কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে।আশা করি রোজার পর কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারবো।’
উপজেলা,থানা,ইউনিয়নে এখনও ভিশন ২০৩০ পৌঁছে দিতে পারেনি বিএনপি-বিষয়টি স্বীকার করেন দলের এই সাংগঠনিক সম্পাদক।এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, ‘বিএনপি এত বড় রাজনৈতিক দল এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে।একটা কমিটি দিতে গেলে দেখা যায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৫/৬ জন যোগ্য প্রার্থী থাকে। থাকাটাই স্বাভাবিক।কিন্ত সবাইকে তো পদে রাখা সম্ভব হয় না।সবদিক বিবেচনায় যোগ্য প্রার্থীকেই পদায়ক করা হয়।দুই একটা জায়গায় কিছু ভুল হতে পারে। বিএনপির কয়েকটা জেলা ছাড়া প্রায় সবকটি জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’ গত ১০ মে খালেদা জিয়া আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।তাতে সবাইকে নিয়ে এক ‘রেইনবো নেশন’ বা রংধনু জাতি গড়ার ঘোষণা দেন। ‘ভিশন ২০৩০’ নামের এই রূপরেখায় খালেদা জিয়া বলেন,বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়।আমরা চাই সকল মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে যে সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি রেইনবো নেশনে (রংধনু জাতিতে) পরিণত করবে।’ এ বিষয় আতাউর রহমার ঢালী আরও বলেন, ‘ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর থেকে বিএনপি যে উজ্জীবিত।এর প্রমাণ দিয়েছে গুলশান কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির ঘটনায় সাথে সাথে নেতাকর্মীরা সোচ্চার হয়েছে। কার্যালয়ের সামনে অবস্থানসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করেছে’।(((পরিবর্তন ডটকম)))

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!