এই মাত্র পাওয়া :

ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানি গণদ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ৩:৩৩ : অপরাহ্ণ 652 Views

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন ভরাডুবির শিকার হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দলীয় অন্তঃকোন্দল দূর করার উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হলেও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে বের হতে পারেনি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। নির্বাচনের সময় ফাঁসকৃত একাধিক ফোনালাপে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে ভালো ভাবেই।
নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের। নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে গতকাল তথাকথিত গণশুনানির আয়োজন করেছে ঐক্যফ্রন্ট। তাদের এই গণশুনানিকে তথাকথিত বলার মূল কারণ হচ্ছে গণশুনানিতে অংশ নেয়া প্রায় ৫০০ জন সকলেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মী। নিজদলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে গণশুনানি করা পুরোপুরি হাস্যকর। ৫০০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর মতামতকে কোনোভাবেই দেশের ১৮ কোটি মানুষের মতামত হিসেবে বিবেচনা করা যায়না।
বলা বাহুল্য তথাকথিত গণশুনানিতেও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে বিএনপির নেতারা। একপ্রকার প্রকাশ্যেই একে অপরের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতারা। গণশুনানিতে অংশ নেয়া দলীয় প্রার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল সহ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। প্রার্থীরা জানতে চান, কোন যুক্তিতে বা কিসের লোভে নির্দলীয় সরকারসহ সাতদফা দাবি থেকে সরে এসে ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ক্ষোভের সাথে আরো জানতে চান, নির্বাচনের আগে যখন পরিস্থিতি চূড়ান্তভাবে প্রতিকূলে চলে যায়, তখন শীর্ষ নেতৃত্ব কেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি? নির্বাচনের ফল প্রকাশ করার পরও কেন দ্রুততম সময়ে কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন কর্মসূচি দিতে পারেন নি নেতারা?
নির্বাচন ইস্যুতে কার্যকর প্রতিবাদ বা কর্মসূচি দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রার্থীরা। বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের প্রায় সবাই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চাপ দেন। খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে শীর্ষ নেতাদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সমাপনী বক্তব্যে অভিযোগকারী এসব প্রার্থীদেরও একহাত নিয়েছেন কামাল, তিনি বলেন, এটা খুব হতাশার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পক্ষ থেকে খালেদার মুক্তি আন্দোলনের দাবি উঠে এসেছে, অথচ তাদের নিজেদেরই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। বিএনপির কর্মপন্থা ঠিক করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার আমার নেই। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যর্থতার কারণেই আজও তাদের নেত্রী কারাবাসে রয়েছেন। তাই খালেদার মুক্তি আন্দোলনের রূপরেখা বিএনপির পক্ষ থেকেই আসতে হবে।
এছাড়া তৃণমূল কর্মীদের পাশে না থাকার এবং খোঁজখবর না নেওয়াতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ ঝেঁড়েছেন অনেকে। নির্বাচনের পরে কোনো নেতা খোঁজ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. সোলেমান নামের এক কর্মী বলেন, ‘কেউ কারও খবর নেয় না। নেতাদের বলতে চাই আমাদের খবর নিয়েন।’
উপস্থিত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মো. অলি খান নামের এক কর্মী বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, এই পর্যন্ত কোনো নেতা বলল না কেমন আছি, কেউ আশ্বাস দিল না যে তোমার পাশে আছি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করে ভালোবাসা না পেলে কোথায় যাব দাদা?’
এদিকে ঐক্যফ্রন্টের তথাকথিত গণশুনানি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে খোদ দলের পক্ষ থেকেই, অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিকরা। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের শুনানিতে অংশগ্রহণ থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও। শুনানিতে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা বলছেন, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপি কোনও আলোচনা করেনি। এ কারণে শুনানিতে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি তারা।
জোটের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ এই বিষয়ে বলেন, ‘এই যে গণশুনানি, কিসের ওপরে গণশুনানি হবে, আমরা কিসের ওপর বক্তব্য দেবো, সেই বিষয়ে তো কোনও কিছু আমাদের জানানো হয়নি। এছাড়া, গণশুনানি যে হবে, তা নিয়ে তো ২০ দলীয় জোটে কোনও আলোচনা হয়নি।২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘গণশুনানি আমার কাছে বিলম্বিত বিষয় মনে হয়েছে। কারণ, এতদিনে নির্বাচন তার গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে। তাছাড়া ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি এই গণশুনানির বিষয়ে।’
ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানির বিষয়ে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন নিজেদের নেতা-কর্মী নিয়ে গণশুনানি নামক গণতামাশা না করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উচিত নিজেদের অতীত অপকর্মের জন্য দেশবাসীর কাছে গণক্ষমা চাওয়া। গণশুনানি করতে হলে নিজেদের দ্বন্দ্ব নিরসন করে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণশুনানি করা উচিত, তবেই তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2025
MTWTFSS
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
আলোচিত খবর