চকবাজার ট্র্যাজেডি; দু:সময়ে পাশে আছে সরকার


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২:৪৬ : অপরাহ্ণ 901 Views

২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০:২৮, চকবাজার। প্রতিদিনের মতো দোকানপাট বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ীরা। চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে একটা চার রাস্তার মোড়। এর দক্ষিণ পাশে রয়েছে পাঁচতলা বিশিষ্ট ওয়াহিদ ম্যানশন। এই ভবনের নিচতলায় রয়েছে একটি হোটেল, ২য় তলায় হোটেলের মেস, ৩য় তলায় বডি স্প্রের গোডাউন, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রয়েছে কেমিক্যালের গোডাউন। চৌরাস্তার মোড়ে হঠাৎই দুইটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ। সংঘর্ষের কারণে প্রথমে একটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার ব্লাস্ট। আর এইভাবেই একে একে হোটেল, বডি স্প্রে ও কেমিক্যালের গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। পরবর্তীতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরেকটি ভবনে। এরপর আগুন নেভাতে চলে যায় প্রায় ১৪ ঘন্টা। আর এই ১৪ ঘন্টার মাঝে মুহূর্তেই চলে যায় ৮১টি তাজা প্রাণ। আহত হয় অর্ধ শতাধিকের চেয়েও বেশি। আগুনের খবর শুনে মুহূর্তের মধ্যে চলে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট। পরবর্তীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় আরও ২৭টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে। উদ্ধার অভিযানে একে একে সামিল হতে থাকেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, চকবাজারের স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে। এদিকে সারারাত নির্ঘুম অবস্থায় থেকে উদ্ধার অভিযানে পরোক্ষভাবে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুহূর্তে মুহূর্তে তিনি খোঁজ নিয়েছেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ও আহতদের সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা ও যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, আহত ব্যক্তিদের সবধরণের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের আশেপাশের সবগুলো হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পুরান ঢাকায় কোনোভাবেই আর কেমিক্যালের গোডাউন রাখতে দেব না। দাহ্য পদার্থের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আবার আগুন। সেই রাসায়নিক, সেই পুরান ঢাকা। ২০১০ সালের নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১২৪ জনের। সেইসময় সরকার থেকে ঘোষণা এসেছিল কেমিক্যাল সরঞ্জাম সরানোর। ভ্রাম্যমাণ আদালত সেই অভিযান পরিচালনা করে কেমিক্যাল কারখানাও সরিয়েছিল। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আবারো কেমিক্যাল গোডাউন গড়ে তোলে পুরান ঢাকার নিমতলী ও তার আশেপাশের এলাকায়। এদিকে এই ব্যাপারে সরকার সবধণের সচেতনতা গ্রহণ করলেও স্থানীয়দের সচেতনতার অভাবে ঘটে যাচ্ছে এই ধরণের দুর্ঘটনাগুলো। সরকার এই ব্যাপারে সর্বদা সচেতন। তবে মানুষ সচেতন হলে এই আগুন অনেকটাই নির্মূল করা যেত। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া খুবই জরুরী। সরকার সচেতন থাকলেই হবে না, এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন থাকতে হবে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়াও আরও শোক জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভ্যাটিকান সিটির পোপ ফ্যান্সিস।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর