খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন পুলিশ কমিশনার


প্রকাশের সময় :৭ নভেম্বর, ২০১৮ ১১:১০ : অপরাহ্ণ 829 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাবিয়া আক্তার অথৈকে (১১) শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তার বাবা কাজী গোলাম মোস্তফা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) পানি শাখার কর্মচারী কাজী গোলাম মোস্তফা একমাত্র মেয়ে অথৈকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।হত্যার পর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নানা নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছেন ঘাতক বাবা গোলাম মোস্তফা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালকের দেয়া তথ্যে ফাঁস হয়ে যায় আসল ঘটনা।হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাবা গোলাম মোস্তফাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন গোলাম মোস্তফা।মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির অদূরে বিদ্যালয় সংলগ্ন লেবু বাগানের মধ্যে অথৈর মরদেহ পাওয়া যায়। তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এমন কল্পকাহিনী বলে প্রতিবেশী রাব্বী নামের এক ব্যক্তিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন গোলাম মোস্তফা। অথৈ হত্যাকাণ্ডের পর কাজী গোলাম মোস্তফা তার পাওনাদারকে দায়ী করেন। সেইসঙ্গে অথৈর স্কুলের এক শিক্ষককে এই হত্যাকাণ্ডে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কাজী গোলাম মোস্তফা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আসছিলেন। তার অসংলগ্ন কথার জন্য পুলিশের সন্দেহ হয়।মঙ্গলবার রাতে গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, তার কাছে ৮ লাখ পাবেন প্রতিবেশী রাব্বী। ওই টাকা না দেয়ার উদ্দেশ্যে মেয়েকে হত্যার করে দায় চাপাতে চেয়েছিল রাব্বীর ওপর। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর আমতলা মোড় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কমিশনার মোশারফ হোসেন।ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, অনেক কিউট ছিল মেয়েটি। দেখলে যে কারও আদর করতে ইচ্ছে করবে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সে। মানুষের নৈতিকতা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তিনি বলেন, অথৈকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোলাম মোস্তাফা মেয়েকে গলা টিপে হত্যা এবং প্রতিবেশী পাওনারদারকে ফাঁসানোর পরিকল্পনার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপবৃত্তির টাকা তোলার জন্য ছবি দেয়ার অজুহাতে মঙ্গলবার সকালে মেয়ে অথৈকে বিদ্যালয়ের পৌঁছে দিতে বাসা থেকে বের হন গোলাম মোস্তফা। তিনি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে মেয়েকে নিয়ে প্রথমে সদর রোড এবং পরে যান কর্মস্থল নথুল্লাবাদে সিটি কর্পোরেশনের পানির পাম্পে। সেখানে গলা টিপে হত্যার পর মেয়ের অসুস্থতার কথা বলে ইজিবাইকে তুলে বাড়ির দিকে রওনা হন।বিদ্যালয় সংলগ্ন লেবু বাগানের মধ্যে মরদেহ ফেলে রেখে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান গোলাম মোস্তফা। পরে স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানতে চান মেয়ে অথৈ বিদ্যালয় থেকে ফিরেছে কিনা। ফেরেনি জানতে পেরে মেয়েকে খুঁজতে স্ত্রীকে বিদ্যালয়ে যেতে বলেন। খুঁজতে গিয়ে বিদ্যালয় সংলগ্ন লেবু বাগানের মধ্যে অথৈর মরদেহ দেখতে পান মা সোহেলী ইসলাম রুমা।স্থানীয়রা জানান, অথৈর মরদেহ উদ্ধারের পর বাবা মোস্তফা ও মা রুমা বলতে থাকেন বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা আনতে গিয়ে মেয়ে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। স্থানীয় এক মোটরসাইকেল চালক জানান, তিনি সকালে বাবা-মেয়েকে সদর রোডে নামিয়ে দিয়েছিলেন। এরপরই সবার সন্দেহ জাগে বাবাকে ঘিরে। পরে বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।মঙ্গলবার সদর উপজেলার চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের সাপনিয়া বিদ্যালয় সংলগ্ন লেবু বাগান থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অথৈর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের মা সোহেলী ইসলাম রুমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মঙ্গলবার রাতে নগরীর কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কাজী গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য বুধবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর