২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা: প্রেক্ষাপট ও পেছনের গল্প


প্রকাশের সময় :১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ৩:২৭ : অপরাহ্ণ 618 Views

বান্দরবান অফিসঃ-বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত বেড়ে উঠার পেছনে যেই পরিবারটির সব থেকে বেশি অবদান সেই পরিবারটি হচ্ছে শেখ পরিবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মোহন বাঁশিতে ১৯৭১ সালে বেজে উঠেছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর। পরবর্তীতে সেই সুর পূর্ণতা পেয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার করা বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালীন সময়ে শেখ পরিবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আর তাই শেখ পরিবার স্বাধীনতা বিরোধীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে একাধিকবার।

শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। ওই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হয় এক কালো অধ্যায়ের। বিদেশে অবস্থান করে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

পরবর্তীতে দেশের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে পথ চলতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদমূলক জন সমাবেশের ডাক দেন। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের অসম্পূর্ণ কাজ অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য আবারো আগস্ট মাসকে বেছে নেয় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা। শেখ পরিবারকে পুরোপুরি নিঃশেষ করে দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতার সূর্যকে চিরদিনের জন্য অস্তমিত করতে চেয়েছিলো তারা। কি ঘটেছিলো সেই দিন??

২১শে আগস্টের শেখ হাসিনা ভাষণ দেয়া শুরু করা মাত্রই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করে চারদিক থেকে শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ছুড়া হয় গুলি। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান সহ নিহত হন ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী। শেখ হাসিনা সহ আহত হয় তিনশতাধিক।

এই নৃশংস ঘটনার পর দু’টি মামলা হয়৷ কিন্তু তখন মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ ওঠে৷ সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক৷ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মমলার তদন্তে নতুন মোড় নেয়৷ ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে উঠে আসে হাওয়া ভবনের নাম৷ মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে চার্যশিট দেয়া হয়৷ আসামিদের মধ্যে তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নামও রয়েছে।

মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে বলেন,‘হামলার মূল পরিকল্পনাই ছিল শেখ হাসিনাকে নিশ্চিন্ন করা। যার পরিকল্পনায় ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খুনী নূর চৌধুরী এবং তারেক জিয়া নিজে। চারটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমেই ২১ আগষ্ট হামলার পুরো চক্রান্ত করা হয় হাওয়া ভবনে বসেই।’

মুফতি হান্নান ঐ জবানবন্দিমূলক সাক্ষাতকারে বলেন,‘ হামলার আগের দিন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই তাজউদ্দীন, হরকাতুল জিহাদ নেতা আবু তাহের জান্দাল ও কাজলের কাছে ১৫টি গ্রেনেড দেন। একটি কালো ব্যাগে গ্রেনেডগুলো ভরে ২১শে আগস্ট দুপুর ১২ টায় টার্গেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। জনসভার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে হামলাকারীরা অবস্থান নেয় এবং জামায়াতের সক্রিয় ১৫ জন সদস্য হামলায় অংশ নেয় বলে হান্নান বলেন।

ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা। এজন্য তারা বারবার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারলে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের সূর্য দেরিতে হলেও আবারো উদিত হওয়ার অপেক্ষায়। ২১শে আগস্ট এর মামলার রায়ের প্রহর গুনছে দেশবাসী। শীঘ্রই এই মামলার চূড়ান্ত রায় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২১শে আগস্ট হামলার পরিকল্পনা কারী সহ জড়িত সকল ষড়যন্ত্রকারীর সর্বোচ্চ সাজা দাবি করে দেশবাসী। যাতে আর কোনো দিন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে অস্তমিত করার দুঃসাহস না দেখায়।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!