ছাত্রীর আত্মহত্যা,পালালেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১০:৩১ : অপরাহ্ণ 1087 Views

নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) মৃত্যুর সংবাদ শুনে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। সেখানে তিনি অরিত্রির স্বজনদের রোষানলের মুখে পড়েন। এ সময় তারা প্রিন্সিপালের গাড়ি ঘিরে রাখেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।স্কুলের প্রিন্সিপাল নাজনীন সুলতানা বলেন, অরিত্রি তার মোবাইল ফোনে বইয়ের বেশ কিছু পাতার ছবি তুলে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। বিষয়টি নজরে আসে শাখা প্রধানের। পরে শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে ডেকে এনে তাদের পুরো ঘটনা খুলে বলা হয়। এরপর অরিত্রিকে বহিষ্কারের বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে মাত্র। বাবাকে অপমানের জন্য নয়, নকলে ধরা পড়ার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার লজ্জা থেকেই অরিত্রি আত্মহত্যা করতে পারে বলেও জানান তিনি।এই দায় কার? জানতে চাইলে স্কুলের গভর্নিং কমিটির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুদার বলেন, ‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি, তবে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’ পরীক্ষায় নকলের অপরাধে শিক্ষক অপমান করায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি। সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা, তবে প্রতিবাদের সরব সহপাঠীরা। প্রশ্ন তুলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের নৈতিকতা ও গভর্নিং বডির ভূমিকা নিয়ে। ঘটনার নায্যবিচার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে অরিত্রির সহপাঠীরা। সহপাঠীরা বলে, অরিত্রির বাবা-মাকে অনেক খারাপ কিছু বলা হয়েছে যা অরিত্রি সহ্য করতে পারিনি।স্কুল কর্তৃপক্ষের এ ধরণের আচরণ নৈতিকতা পরিপন্থি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে গভর্নিং বডির ভূমিকা নিয়েও। অপমানের গ্লানি মাথায় নিয়ে অরিত্রি চলে গেছে। প্রিয় সন্তানকে হারানোর এই শোক কিভাবে সামাল দেবে তার পরিবার?সোমবার দুপুরে শান্তিনগরের ৭ তলার বাসায় অরিত্রি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে বিকাল ৪টার দিকে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।অরিত্রি অধিকারী ভিকারুন্নেসা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। অরিত্রির ছোট বোন ঐন্দ্রিলা অধিকারীও একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী একজন কাস্টসম (সিঅ্যান্ডএফ) ব্যবসায়ী। মা বিউটি অধিকারী গৃহিণী। পরিবারের সাথে রাজধানীর শান্তিনগরে থাকতো সে। তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়।অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার স্কুলে পরীক্ষার সময় তার মেয়ে মোবাইল নিয়ে গিয়েছিল। মোবাইলে নকল আছে এমন অভিযোগে ওই স্কুলের শিক্ষক সোমবার তাদের স্কুলে আসতে বলেন। সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রির সঙ্গে তারা স্কুলে যান। পরে তাদের ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেলে তারা মেয়ের নকল করার ব্যাপারে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান।কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের প্রিন্সিপালের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাতে সদয় হননি। এসময় স্কুল পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যও ছিল। পরে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন। এ সময় আমি মেয়ের সামনেই কেঁদে ফেলি। অরিত্রি হয়তো আমার ওই কান্না-অপমান মেনে নিতে পারেনি।অরিত্রির বাবার অভিযোগ, প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করায় তার মেয়ে দ্রুত বাসায় চলে যায়। বাসায় ফিরে সে তার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। বাহির থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও দরজা না খোলায়, দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করি। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বলেন, সুরতহাল করে অরিত্রির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যু কারণ জানা যাবে।ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তার গলায় দাগ ছিল। তার ‘নেক টিস্যু’ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর