

বান্দরবানে ঝুঁকি সংবেদশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় ভূমিধস ঝুঁকি সংযুক্তকরণ বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বের) সকালে বান্দরবানের মেঘলায় অবস্থিত হলিডে ইন রিসোর্টের সভা কক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় কমশিন ECHO (European Civil Protection and Humanitarian Aid Operations)-এর অর্থায়নে এবং আশিকা ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস,রাইমস ও সেইভ দ্য চিলড্রেন-এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ভূমিধসজনিত বাস্তুচ্যুতি মোকাবেলায় পূর্ব-সতর্কতামূলক কার্যক্রম (Anticipatory Action for Landslides Causing Displacement) প্রকল্পের অধীনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল,বিশেষ করে বান্দরবান জেলায় অনিয়মিত বৃষ্টিপাত,বন উজাড় এবং অপরিকল্পি উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে ক্রমবর্ধমান ভূমিধস ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে।এ পরিস্থিতিতে ভূমিধস ঝুঁকি ও সম্ভাব্য বাস্তুচ্যুতি ইস্যুগুলো কীভাবে বিদ্যমান ভূমি ব্যবহার ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় আরও কার্যকরভাবে অন্তর্ভূক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে জেলা প্রশাসন, সরকারি দপ্তর, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, কমিউনিটি প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন যুব স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন সজল তঞ্চঙ্গ্যা,কোঅর্ডিনেটর রিসোর্স মোবিলাইজেশন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ASHIKA Development Associates।মো.মুস্তাক হোসেন,ডিরেক্টর হিউম্যানিটারিয়ান, Save the Children,তাঁর বক্তব্যে গুরুত্বারোপ করেন ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা নিয়ে।অংশগ্রহণকারীরা ভূমিধস পূর্বাভাস ব্যবস্থা,পাহাড় ব্যবস্থাপনা কাঠামোর বিদ্যমান ফাঁক ফোকর, এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় অগ্রীম সতর্কতামূলক পদেক্ষেপের গুরুত্ব বিষয়ে কারিগরি উপস্থাপনা গ্রহণ করেন।গ্রুপভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে ঝুঁকিসচেতন ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় খসড়া সুপারিশও প্রণয়ন করা হয়।কর্মশালায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিবৃন্দ পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনায় দুর্যোগ ঝুঁকি বিবেচেনা ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করনে।কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞ,নীতিনির্ধারক এবং কারিগরি প্রতিনিধিদের বিস্তৃত আলোচনা থেকে একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা উঠে আসে।অংশগ্রহণকারীরা মত দেন যে পাহাড়ি অঞ্চলে বাড়তে থাকা ভূমিধস ঝুঁকি এবং এর ফলে সৃষ্ট বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলায় বিদ্যমান ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালার মধ্যে এই ঝুঁকিগুলোকে আরও সুসংগঠিতভাবে একীভূত করা অত্যাবশ্যক।আলোচনার ভিত্তিতে ভূমিধসকে একটি স্থায়ী ও পুনরাবৃত্ত দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ নীতিমালা ও পরিকল্পনায় বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে আরও কার্যকরভাবে অন্তর্ভূক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।কর্মশালায় বিদ্যমান পাহাড় ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট আইন,নীতিমালা ও নির্দেশনাবলীর বিষয়ে অংশীজনদের অবহিত করার পাশাপাশি নীতিগত ফাঁক চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।অংশগ্রহণকারীরা মত প্রকাশ করনে যে এই ফাঁকগুলো পূরণে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া, ভূমি মন্ত্রণালয়,আইন মন্ত্রণালয়,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ জাতীয় পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও কারগরি অংশীদারদের মধ্যে ঝুঁকি সংবদেনশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার গুরুত্ব সর্ম্পকে সচেতনতা বাড়ানো এটিও ছিল আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সামগ্রিকভাবে কর্মশালাটি নীতিমাল ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় ভূমিধস ঝুঁকি সংযুক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তায় একটি সুস্পষ্ট ঐক্যমত গঠনে সহায়তা করে।
কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.আবু তালেব।তিনি এই ধরণের আয়োজনকে সাধুবাদ জানান এবং পাহাড় প্রকৃতি রক্ষায় সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন।প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি আশিকা ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস,রাইমস ও সেইভ দ্য চিলড্রেন-এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ভূমিধসজনিত বাস্তুচ্যুতি মোকাবেলায় পূর্ব-সতর্কতামূলক কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেন এবং পার্বত্য এলাকার জলবায়ু রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। এসময় তিনি পার্বত্য জেলার ভূমি,বনভূমি,বৃক্ষ,পাথর, নদী, পাহাড়সহ সকল সম্পদ রক্ষা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।পরিশেষে সকল অংশীজনের যৌথ অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘটে যার লক্ষ্য হলো নীতিমালা কাঠামো আরও শক্তিশালী করা,আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং পাহাড়ি অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় প্রস্তুতি বৃদ্ধির উদ্যোগগুলোকে আরও সমন্বতিভাবে এগিয়ে নেওয়া।







