শিরোনাম: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিলের দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পিসিএনপি’র স্মারকলিপি বান্দরবানে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল শান্তিচুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তিতে রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিলের দাবি জানালো পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ বিতর্কিত শিক্ষা কর্মকর্তা কে বান্দরবানে বদলিঃ প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বান্দরবান জেলাজুড়ে চলছে বিশেষ প্রার্থনা শান্তি-শৃঙ্খলা সুদৃঢ় রাখতে আন্তরিক সহযোগিতা চাইলেন নবাগত পুলিশ সুপার আবদুর রহমান রাঙ্গামাটিতে পিসিএনপির নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিলের দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পিসিএনপি’র স্মারকলিপি


প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় :২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৭:৫১ : অপরাহ্ণ 11 Views

বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিল ও চার দফা দাবীতে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) বান্দরবান জেলা।মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তালেব এর হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন বান্দরবান জেলা নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দগন।সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি পার্বত্য চুক্তির কয়েকটি ধারা লিখিত স্মারকলিপিতে তুলে ধরেন পিসিএনপি। সেগুলো হলো:

ক। পার্বত্য চুক্তির “ক” খণ্ডের ১নং অনুচ্ছেদে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা স্ট্যাটাস (উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল) দেয়া হয়েছে। এতে করে চুক্তির শুরুতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলা (রাংগামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি)’কে দেশের অন্য ৬১টি জেলা থেকে আলাদা করা হয়েছে যা বাংলাদেশ সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। সংবিধানে বলা হয়েছে যে “বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত হইবে”। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে “উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল” ঘোষণা করে সমতলের বাকী ৬১টি জেলা থেকে আলাদা করা কতটুকু যৌক্তিক? তাছাড়া এ ঘোষণার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪% বাঙালি জনগোষ্ঠীকেও অস্বীকার করা হয়েছে।

খ। পার্বত্য চুক্তির “গ” খণ্ড অনুযায়ী “পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ” গঠিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১২/১৯৯৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে এই আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হবার পর থেকে “অনির্বাচিত” সন্তু লারমা এই পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি যক্ষের ধনের মত আঁকড়ে ধরে আছেন। অথচ এই আঞ্চলিক পরিষদ গঠন রাষ্ট্রের একক সত্ত্বা (Unitary Form)’এর পরিপন্থি যা বাংলাদেশ সংবিধানের ১ এবং ৫৯ অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদ আমি আগেই বলেছি। সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক এককাংশের স্থানীয় শাসনভার প্রদান করা হইবে”। এখন প্রশ্ন হলো: আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা এবং তার পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা কি “নির্বাচিত” প্রতিনিধি?

পার্বত্য চট্টগ্রাম একক কোন জেলা নয়, বরং রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান- এই তিনটা জেলার সমষ্টি। পার্বত্য চট্টগ্রামকে আঞ্চলিক পরিষদ আইনের কোন বিধানে “প্রশাসনিক ইউনিট” হিসাবে পরিস্কার বলা হয় নাই। তাই আঞ্চলিক পরিষদকে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের লক্ষ্য অর্জনে প্রশাসনিক ইউনিট এর “স্থানীয় সরকার” বলা যাবে না। একইভাবে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত পরিচালনা কার্যক্রমও অসাংবিধানিক। চুক্তির বদৌলতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল একটা প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে প্রকাশ্য আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করা ছাড়াই উল্টা স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই আলোচনার সমাপ্তি টেনে বলা যায় যে, এই আঞ্চলিক পরিষদ ও এর আইন এই ক্ষেত্রে সংবিধানের আওতা বহির্ভূত।

গ। পার্বত্য চুক্তির “খ” খণ্ডের ২৬(ক) অনুচ্ছেদ মোতাবেক পার্বত্য জেলার এলাকাধীন বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমিসহ কোন জায়গা-জমি ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির এই ধারাটি বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৩ এবং ১৪৪ নং অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এছাড়াও, পরিষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন জায়গা-জমি ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাবে না বলে যে ধারাটি উল্লেখ করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬নং অনুচ্ছেদের মতাদর্শের পরিপন্থি। কারণ, পার্বত্য চুক্তির এই ধারা মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের অন্য কোন নাগরিক জমি ক্রয় বা বসতি স্থাপন করতে পারছে না।

ঘ। পার্বত্য চুক্তির “খ” খণ্ডের ২৯ এবং ৩২নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক সরকার জেলা পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য কোন আইন, সরকারী গেজেট ইত্যাদি প্রণয়ন করতে পারবেন। উক্ত বিধি প্রণীত হবার পরও পরিষদ কর্তৃক তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করার বিশেষ অধিকার দেয়া হয়েছে। এমনকি, পার্বত্য জেলায় প্রযোজ্য এমন কোন আইন যদি জাতীয় সংসদে পাশ বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয় সেই আইন সংশোধনের বা প্রয়োগ শিথিলের জন্য পরিষদ সরকারের নিকট আবেদন পেশ করতে পারবে। পার্বত্য চুক্তির এই ধারাটি বাংলাদেশ সংবিধানের ৮০নং অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক।

ঙ। পার্বত্য চুক্তির “খ” খণ্ডের ৪(ঘ) এবং ৯নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন ব্যক্তিকে ভোটার হতে হলে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ কর্তৃক প্রদত্ত “স্থায়ী বাসিন্দা” সনদপত্র গ্রহণ করা আবশ্যক। এই ধারাটি বাংলাদেশ সংবিধানের ১২২নং অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক। এখানে উল্লেখ্য যে, জাতীয় পরিচয় পত্র পদ্ধতি চালু হওয়ার পরও সার্কেল চিফ/জেলা প্রশাসক কর্তৃক স্থায়ী নাগরিকত্বের সনদ প্রদান অবান্তর।

চ। মূলতঃ পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনের (উপজাতি) সাথে। যাতে শুধুমাত্র উক্ত নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীরই স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অপর একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী (বাঙ্গালী) কে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই পার্বত্য চুক্তিতে বাংলাদেশের সমতলের জেলাগুলোর মানুষকেও উপেক্ষা করা হয়েছে জমি কেনাবেচা ও বসতি স্থাপনে অন্তরায় সৃষ্টির মাধ্যমে। তাই এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে (উপজাতি) সুবিধা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের একটি বিশাল গোষ্ঠীর (বাঙ্গালী) সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে; যা বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। (সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদঃ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী)।

ছ। পার্বত্য চুক্তির “খ” খণ্ডের অনুচ্ছেদ ৪(ঘ) মোতাবেক ‘কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় কিনা এবং হইলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তাহা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌর সভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের চীফ স্থির করিবেন এবং এতদসম্পর্কে সার্কেল চীফের নিকট হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় হিসাবে কোন অ-উপজাতীয় সদস্য পদের জন্যে প্রার্থী হইতে পারিবেন না’।
এই ধারাটি বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(১) এর পরিপন্থি (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(১)- কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষদের বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না)। একজন ব্যক্তি অ-উপজাতি কি না তা নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফের অনুমোদনের ভিত্তিতে। এখন এই বিধান এমন কোন বাস্তব মানদণ্ড নিশ্চিত করে নাই, যার দ্বারা ওই সনদ প্রদান করা হবে কি হবে না তা আইনিভাবে নিশ্চিত করা যায়। তাই এটা সংবিধানের ২৭, ২৮(১), ২৯(১) এবং ৩১নং অনুচ্ছেদ সমূহের লঙ্ঘন। ফলে ‘অ-উপজাতি’ নির্ধারণে গ্রাম প্রধান ও সার্কেল চীফের ক্ষমতা অসাংবিধানিক।পার্বত্য চুক্তিতে এরকম আরো বেশ কিছু অসাংবিধানিক ধারা আছে। পার্বত্য চুক্তিটি ছিলো মূলতঃ রাষ্ট্রের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছেড়ে আলোর পথে নিয়ে আসার একটি শুভ উদ্যোগ। তবে সেই শুভ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পার্বত্য চুক্তিতে বেশ কিছু অসাংবিধানিক ধারা সংযোজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও জনগণের সম-অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ স্মারকলিপিতে ৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তা হলো:

১। ​সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অবিলম্বে বাতিল বা সংবিধানসম্মত উপায়ে পুনর্মূল্যায়ন করে সংশোধন করতে হবে।

২। ​পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সকল নাগরিকের জন্য সমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে কোনো জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা থাকবে না।

৩। ​পাহাড়ে সক্রিয় সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে তাদের নির্মূল করতে হবে এবং চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

৪। ​জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যাহার করা সকল নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করতে হবে।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি’র বান্দরবান জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আবদুস শুক্কুর, কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল মাহমুদ, মোঃ আজিজ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোঃ শাহজালাল, বান্দরবান জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুরুল আবছার, দপ্তর সম্পাদক এনায়েত হোসেন সজল,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন,পৌর পিসিএনপি’র সভাপতি শামচুল হক সামু,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনিরুল ইসলাম প্রমূক নেতৃবৃন্দ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর