শিরোনাম: চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট বান্দরবানে আলেম সমাজের সংবাদ সম্মেলন বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে উদযাপিত হলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস জেলা প্রশাসক মেধাবৃত্তি,বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে সেনা জোনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বান্দরবানে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল কর্মী ও সুধী সমাবেশে দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তাঃ সুস্থ হয়ে ফিরছে ১১ বছরের জিংক থান ময় বম

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ আগস্ট, ২০২১ ৬:৫৫ : অপরাহ্ণ 409 Views

সাগর ঘেঁষা চট্টগ্রাম নগরীর কোলে কোলে পাহাড়, আর তাতে অন্তত ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে।

দুর্লভ অশোক, শিমুল, উলটকম্বল, শ্বেত কাঞ্চন, কুর্চি, আমলকি ও স্বর্পগন্ধার পাশাপাশি তেলিয়া গর্জন, লাম্বু আর বকুলও রয়েছে এই উদ্ভিদরাজির মধ্যে।

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সাম্প্রতিক আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য প্রকাশ করে ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়ন (ইকো)।

নগরীর ১৮টি পাহাড়ি এলাকা, মেরিন ড্রাইভ সড়কের দু’পাশ এবং প্রধান সড়কগুলোর আশপাশ ও বিভাজক মিলিয়ে মোট ২০টি এলাকার উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্তে গত ছয় মাস ধরে কাজ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।

গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যেসব পাহাড়ে জনবসতি নেই এবং লোক চলাচল কম সেখানে পাহাড় ও বন অক্ষত আছে।

“যেমন মেডিকেলের পাহাড়, এখানে উদ্ভিদের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রায় অক্ষত। উদ্ভিদের বৃদ্ধি স্বাভাবিক এবং নানা কীটপতঙ্গ প্রাণিও আছে ভালোভাবে। কিন্তু যেসব এলাকায় পাহাড় কেটে মানুষ বসতি করেছে এবং চলাচল আছে সেখানে উদ্ভিদ ও বাস্তুসংস্থান দুটোই হুমকির মুখে।”

গবেষণায় নগরীর ২০টি এলাকায় যে ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে, এরমধ্যে নগর প্রকৃতিতে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি ১৩টি এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে বিলুপ্ত হতে পারে এমন প্রজাতি আছে ১৩৭টি।

গবেষক দলের সদস্যরা বায়েজিদ লিংক রোডের দু’পাশের পাহাড়, মতিঝর্ণা, মুরগী ফার্ম, টাইগার পাস, বাটালি হিল ও প্রবর্তকসহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ে যে চিত্র পেয়েছেন তা শঙ্কার।

ইকো’র গবেষণায় নগরীতে সবচেয়ে বেশি ২৩৫ প্রজাতির উদ্ভিদ সন্ধান মিলেছে পশ্চিম খুলশীর মুরগি ফার্ম এলাকার পাহাড়ে। যার মধ্যে ঔষধি গাছ সর্বাধিক ১৯৩ প্রজাতির। পাশাপাশি বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা প্রজাতির সংখ্যাও এখানেই সবচেয়ে বেশি, ৬৬টি।

ওমর ফারুক বলেন, “অন্য পাহাড়গুলোর মতোই মুরগি ফার্ম এলাকার পাহাড় ও আশেপাশের এলাকায় প্রচুর বসতি গড়ে উঠছে। এখনই সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে পাহাড়, গাছপালা ও অমূল্য ভেষজ প্রজাতি সব হারিয়ে যাবে।

“বায়েজিদ লিংক রোডের দু’পাশের পাহাড়গুলো (২১৬ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে) বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে অনেক সবুজ। কিন্তু ভিতরে প্রচুর বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানে দ্রুত সবুজ কমছে। প্রবর্তক পাহাড়ে (১১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ) বেশকিছু স্থাপনা ও লোক চলাচলের কারণে নিচের অংশের গাছপালা হুমকির মুখে।”

গবেষণা দলের সদস্যরা জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নগরীর মতিঝর্ণা পাহাড় (১৯৯ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে)। সেখানে নির্বিচারে পাহাড় কাটায় গাছপালা কমছে অতি দ্রুত।

টাইগারপাস সড়কের দু’পাশের পাহাড়ের (২১০ প্রজাতির উদ্ভিদ) বাইরের অংশে উদ্ভিদের সংখ্যাধিক্য থাকলেও ভিতরের অংশ গাছ কম। আর বাটালি হিলে (২২৪ প্রজাতির) রাস্তা থাকায় ও লোক সমাগম বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

দুর্লভ শ্বেত চন্দন রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে।
দুর্লভ শ্বেত চন্দন রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে।

৩৬৬ প্রজাতির ঔষধি গাছ

গবেষণায় যেসব প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে, এর মধ্যে বড় বৃক্ষ ১৭৭ প্রজাতির, গুল্ম ৮৬, বীরুৎ ১৭৯ প্রজাতির এবং লতা জাতীর উদ্ভিদ আছে ৫৩ প্রজাতির।

এসব এলাকায় ৩৫৪টি দেশীয় প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। আর বিদেশি প্রজাতি ১৪১টি। ঔষধি গুণ সম্পন্ন গাছ প্রায় ৩৬৬ প্রজাতির।

এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা হয়নি এমন প্রজাতির সংখ্যা ৩০টির বেশি।

আলসার, ডায়বেটিস, ব্রঙ্কাইটিস এমনকি মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয় এমন বহু উদ্ভিদ আছে বন্দর নগরীতে।

ঔষধি গাছের মধ্যে আছে- নিশিন্দা, ঝুমকো লতা, জংলী বাদাম, বন আলু, পাকুড়, গোল মরিচ, দেশি ছোট এলাচ, বন শিমুল, মুক্তাঝুরি, কালো তুলসী, সাদা কাঞ্চন, লতা ঢেকি, কুকুর চিতা, হরিণা, বিষ লতা, ভেরেন্ডা, ঝঞ্জা ডুমুর, শিয়াল মুত্র, কেশরাজ, বন পান আর গামারি।

বিপন্ন শ্বেত চন্দনেরও দেখা মিলেছে নগরীর প্রবর্তক পাহাড়ে। সেখানে একটি মাঝারি আকারের গাছের সন্ধান পেয়েছে গবেষক দল। এটি কয়েক বছর আগে লাগানো হয়েছে। নগরীর অন্য কোথাও এই গাছের দেখা পায়নি তারা।

গবেষণায় দেখা মিলেছে বিপন্ন প্রজাতির হলদে বেত, শীতশাল, ন্যাটা সাইকাস, গর্জন, লম্বু, দুধকুরুস, বাকা গুলঞ্চ আর সোনালতার।

আর বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা- টাইগার ফার্ন, মেঞ্জিয়াম, হারগোজা, কঞ্চি এলাচ, ছাতিম, যজ্ঞ ডুমুর, বেত, কুরুজ, পিটালি, হরিতকি, পিতরাজ, কুকুরা, দুরন্ত আর বড় ডুমুরের মতো অনেক দেশীয় প্রজাতি এখনও টিকে আছে চট্টগ্রাম শহরে।

নগরীর ডিসি হিলে ১৩২ প্রজাতির, ওয়ার সিমেট্রিতে ৯১, কানন ধারা আবাসিক এলাকায় ১৩৫, রেলওয়ে সেগুন বাগান এলাকায় ৪৯, গোল পাহাড় এলাকার ১২৭, ডাক বাংলা পাহাড়ে ১০৬, ডানকান হিলে ১৮১, গোলাপ মিয়া পাহাড়ে ১৫৯ এবং ওমরগণি এমইএস কলেজের পাহাড়ে ১৩০টি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে।

এছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের দু’পাশে ৪৫ প্রজাতির এবং প্রধান সড়কগুলোর বিভাজক ও আশেপাশে ৫৩ প্রজাতির গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে।

প্রজাতি সংরক্ষণে জোর

গবেষকরা স্যাটেলাইট ছবিতে ২০০০ সালে সিআরবিকে যতটা সবুজঘেরা দেখেছিলেন, ২০২১ সালের ছবিতে তা অনেকটাই কমেছে।

সিআরবিতে আছে ২২৩ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার মধ্যে ১৮৩টি ঔষধি জাতের। আর বিলুপ্তির হুমকিতে আছে ৬৬টি প্রজাতি।

সেই স্যাটেলাইট চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ওমর ফারুক বলেন, “পাহাড় নিধন, অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ যদি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি হারিয়ে যাবে। এতে নগরীর পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।

“ভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে প্রজাতিগুলো সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বনায়ন, সৌন্দর্য বর্ধনে বিদেশি প্রজাতির পরিবর্তে দেশিয় প্রজাতির গাছ লাগানো এবং সড়ক-মহাসড়কের পাশে ও বিভাজকে তিনস্তরে ঔষধি-ফলজ গাছ লাগানো প্রয়োজন।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ইকোর সভাপতি মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শাহেদ মুরাদ সাকু ও এসএম আবু ইউসুফ সোহেল।

গবেষক দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ইমাম হোসেন, সজীব রুদ্র, আরিফ হোসাইন, সনাতন চন্দ্র বর্মন, মো. মোস্তাকিম ও ইকরামুল হাসান।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!