শাহাব উদ্দিন মাহমুদ
করোনার করাল থাবায় ছিন্নভিন সমগ্র বিশ্ব। বিগত এক শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে সবচেয়ে ভয়াবহ এ সঙ্কটে বিশ্বের তাবৎ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হতভম্ব! দিশেহারা বিশ্ববাসী! এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমরা কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশের দারিদ্র্যসীমা আমরা কমিয়ে এনেছি, দারিদ্র্যসীমা মাত্র ১০ বছরে ৪০ ভাগ থেকে আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, আমাদের জিডিপি বেড়ে গিয়েছিল। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিলাম। আমাদের আশা ছিল মুজিববর্ষ উদযাপন করব। কিন্তু এ সময় এক অদৃশ্য শক্তি, করোনাভাইরাস যা কেউ চোখে দেখতে পারে না, বুঝতেও পারে না- সারা বিশ্বটাকে স্থবির করে দিল, সারাবিশ্বে যেন কেমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করল। একটা আতঙ্ক-ভয়ভীতি, মৃত্যু আতঙ্ক যেন সারা বিশ্বকে পেয়ে বসেছে।’ ঘনবসতিপূর্ণ ১৬১ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করা অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্নতর। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষের কাছে একদিকে যেমন ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার চ্যালেঞ্জ। শিল্পোদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্টসকর্মী, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও রিক্সাচালকসহ সবাই যেন তাদের নিজ নিজ ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারে, সেজন্য খাতভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা গণভবন থেকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিনিয়ত সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং ও সমন্বয় করে চলেছেন।
করোনাভাইরাসের কারণে জীবিকা হারানো মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে অর্থ বিতরণ, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা/স্বামী নিগৃহীতদের ভাতার আওতায় আনা, সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় শতভাগে উন্নীত করা এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কার্যক্রম গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ-সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের এই কর্মসূচীগুলো করোনা পরিস্থিতিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১০ টাকায় চাল পেতে নতুন ১০ মিলিয়ন রেশন কার্ডসহ ১৫ মিলিয়ন রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। এতে দেড় কোটি পরিবারের সাড়ে ৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ৩.৫ শতাংশ। পোশাক শ্রমিকদের শতভাগ বেতন নিশ্চিত করতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। তাছাড়া কৃষি ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছেন। বাজেটে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন। কৃষিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ২১ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কৃষকের কাছে বীজ, সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় শেখ হাসিনার গৃহীত এসব পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। একইসঙ্গে প্রশংসা করা হয়েছে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেরও। করোনায় বিপর্যন্ত বিভিন্ন দেশের নারী নেতৃত্বের ভূমিকা নিয় সম্প্রতি ফোর্বস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে শেখ হাসিনার বিষয়টি উঠে আসে। কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবার্গ কক্স তার এ নিবন্ধে লিখেন- বাংলাদেশে ১৬১ মিলিয়ন মানুষের বাস। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষতার সঙ্গে সঙ্কট মোকাবেলা করা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা মোকাবেলায়ও তিনি নিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ। যার প্রশংসা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা সঙ্কট শুরুর পর ফেব্রুয়ারিতে চীন থেকে যেসব বাংলাদেশী ফিরতে ইচ্ছুক তাদের দেশে নিয়ে আসেন। তখনও দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। মার্চের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য দেয়া হয় নির্দেশনা। এরপর দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে করোনা রোগী শনাক্তে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে ৭ লাখ ৫০ হাজারের মতো মানুষের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এরমধ্যে তাৎক্ষণিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয় ৩৭ হাজারের মতো মানুষকে। যা যুক্তরাজ্য এখনও করছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে করোনা সঙ্কট মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ।
৩ জুন ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে লিখেন- ভারত মহাসাগরে মে মাসে যখন ঘূর্ণিঝড় আমফানের সৃষ্টি হলো, তখন দেরি করার মতো কোন সময় ছিল না। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। তাই এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ানক ছোবলের চেয়েও ভয়ানক কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতার মুখে না ঠেলে ২৪ লাখ মানুষকে সরানোর বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপক হারে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যে কোন সময়েই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শেখ হাসিনার নির্দেশে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ১০ হাজার অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্র নতুন করে প্রস্তুত করে ফেলে। আগে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৭১। কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এই বাড়তি উদ্যোগ। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতির কাজে থাকা ৭০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিযুক্ত করা হয়। মাস্ক, পানি, সাবান ও স্যানিটাইজারও বিতরণ করা হয়। শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় বাংলাদেশ করোনা মহামারির একেবারে চরম অবস্থায় আমফানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
শেখ হাসিনা মানবজাতিকে করোনাভাইরাসের মতো মহামারী থেকে রক্ষা করতে দ্রুত টিকা উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, টিকাদানই সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ মোকাবেলার অন্যতম উপায় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে বলেন, চলমান কোভিড মহামারী প্রমাণ করেছে কোন বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সত্যিকার অর্থে কতটা শক্তিহীন। জাতিসংঘের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রতি চার মাসে মানুষের মধ্যে একটি নতুন সংক্রামক রোগ দেখা দেয়। আর গ্লোবাল ভিরোম প্রজেক্টের অনুমিত হিসাব মতে প্রায় সাত লাখ ভাইরাস রয়েছে যেগুলো মহামারী ঘটাতে পারে। এই ভাইরাসের অনেকগুলো মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। তাই মানবজাতির টিকে থাকার জন্য বিদ্যমান ও আরো নতুন টিকার প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ জন্য জিএভিআই এ্যালায়েন্স এর সহায়তা কামনা করেন।
শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে দেশের ১৬১ মিলিয়ন জনসংখ্যা একটি ডিজিটালাইজড জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরিণত হয়েছে। বর্তমান বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসসহ প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বাকি জীবন বাবার স্বপ্নের পথ ধরে এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিনি রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সবকিছু করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে না এসে বাসা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমানের প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করেন না। তিনি বলেন, ‘জন্ম যখন হয়েছে, মৃত্যু হবেই। গুলি খেয়ে মরি, বোমা খেয়ে মরি কিংবা করোনাভাইরাসে অসুস্থ হয়ে মরি অথবা এখন কথা বলতে বলতে অসুস্থ হয়ে মরে যেতে পারি। মৃত্যু যখন অবধারিত, তখন মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুকে কখনও ভয় পাইনি, পাবও না। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমি এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি। সুতরাং, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় শেখ হাসিনার দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ইতোপূর্বে বিশ্ব মিডিয়ার ভাষ্যে ‘দ্য ভিশনারি লিডার শেখ হাসিনা’ করোনা মহামারীর একেবারে চরম অবস্থায়ও তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছেন।
লেখক : গবেষক
sumahmud78@gmail.com
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.