এই মাত্র পাওয়া :

শিরোনাম: নানা কর্মসুচীর মধ্য দিয়ে বান্দরবানে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণঃ পুলিশের জালে ধর্ষক রাসেল বড়ুয়া বান্দরবানে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছেঃ কাজী মো.মজিবর রহমান বান্দরবানে শেষ হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রবারণা পূর্ণিমা বান্দরবানে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত শান্তি,সম্প্রীতি সর্বোপরি ভ্রাতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক বান্দরবানঃ লে.কর্নেল হুমায়ুন রশীদ,পিএসসি বান্দরবানের কালাঘাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানঃ পাহাড় কাটার দায়ে জরিমানা বান্দরবানে নানা আয়োজনে বিশ্ব বসতি দিবস-২৫ উদযাপিত

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে : প্রধানমন্ত্রী


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৬ নভেম্বর, ২০২১ ১২:০৬ : পূর্বাহ্ণ 489 Views

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বের সামনে রোল মডেল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

সোমবার প্রখ্যাত ‘ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এবং উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ নিবন্ধটি নিম্নরূপ:
বাংলাদেশের চোখে জলবায়ুু পরিবর্তন
যেহেতু বাংলাদেশ খর¯্রােতা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদী প্রবাহের নিষ্কাশন অববাহিকায় অবস্থিত, তাই, এটি জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য একটি অপরিবর্তনীয় এবং অকাট্য ভবিষ্যত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বর্ষা এবং বৃষ্টিপাতের স্থানীয় স্তরে পরিবর্তনশীলতা, ঘন ঘন এবং মাঝে মাঝে বন্যার সৃষ্টি করবে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ততার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হবে, যা সম্ভবত কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করবে এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে। জলবায়ুু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এই আসন্ন সর্বনাশ আমাদের অবকাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা এবং আর্থিক প্রস্তুতির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটিগুলোকে অবশিষ্ট ঝুঁকি মানিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে বাংলাদেশের এমন বেশ কয়েকটি অভিজ্ঞতা এবং সর্বোত্তম অনুশীলন রয়েছে।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর চেয়ার হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবীয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং দক্ষিণ আমেরিকার ৪৮টি দেশের একটি জোট-বাংলাদেশ বিস্তারিত মুজিব জলবায়ুু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই বছরের জুলাই মাসে এটি চালু করা হয়েছে, এটি একটি কৌশলগত বিনিয়োগ কাঠামোসহ একটি সিভিএফ দেশের প্রথম পরিকল্পনা যা জলবায়ুু-স্থিতিস্থাপকতা উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থায়ন একত্রিত করবে। সম্পদ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে জার্মানি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কর্মসূচির মূল উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জালানি-সঞ্চয়স্থান অবকাঠামো, পাওয়ার-গ্রিড আধুনিকীকরণ এবং নির্গমন বাণিজ্য। এর ভবিষ্যতের প্রমাণ- বাংলাদেশের শিল্প, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ফলাফল এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের আর্থিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেও তার দৃষ্টি প্রসারিত করে। এছাড়াও, জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক কৃষি ও মৎস্যসম্পদ, পরিবেশ-বান্ধব পরিবহন, এবং জলবায়ুু-স্থিতিস্থাপক সুস্থতা কর্মসূচির বিকাশ এই স্বপ্নদর্শী দলিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে বিশ্বব্যাপী উত্তরণের সাথে সাথে, আমার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা শুরু করেছে। ফলস্বরূপ, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, সীমিত ভূমি সম্পদ এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বিরাজমান কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যেও মসৃণ গতি বজায় রেখেছে।

একই সাথে, আমরা বিগত ২০ বছরে দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছি। ১৯৭১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের বার্ষিক ধানের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। আজ পর্যন্ত, ১০০টিরও বেশি উচ্চ-ফলনশীল, আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে স্বল্পজল-নির্ভর এবং বেশি তাপ-সহনশীল জাত রয়েছে। এছাড়াও, খাদ্যের চাহিদা মেটাতে, সামাজিক চ্যালেঞ্জ প্রশমিত করতে এবং জীববৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ভাসমান কৃষি চর্চা করা হয়।

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সবুজ অভিযোজন হিসাবে সমুদ্রের ডাইক, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপকূলীয় বৃক্ষরোপণও করেছে। দ্রুত স্থানান্তর নিশ্চিত করতে এবং লক্ষাধিক জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য নদীতীর ভাঙ্গনের পূর্বাভাস প্রদান করা হয়। দুর্যোগের সময় স্থানীয় সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষমতায়ন ও সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক কাঠামো, প্রস্তুতির জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা।

অবশেষে, আমার সরকার সবুজ বেষ্টনী উন্নয়ন এবং বনায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং ১১.৫ মিলিয়নেরও বেশি চারা রোপণ করেছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনগুলোর মধ্যে একটি। এটির স্থলজ বনের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি কার্যকরীভাবে কার্বন সঞ্চয় করার উচ্চ ক্ষমতা রয়েছে।

প্যারিস জলবায়ুু চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমিত করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণ করছে।

যাইহোক, প্রয়োজনীয় গতি এবং স্কেলে এই রূপান্তর অর্জন করা সমস্ত জাতির ঐকবদ্ধতা এবং সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হবে না। এইভাবে, বাংলাদেশ একটি বৈশ্বিক কনসোর্টিয়াম গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতামূলক এবং সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানায় যাতে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবুও, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলো থেকে প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন মূলত তাদের দ্বারা সৃষ্ট এবং বৃদ্ধি পায়। তাদের উচিত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি হস্তাস্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য জলবায়ু অর্থের প্রাপ্যতার জন্য বর্ধিত বিধানের মাধ্যমে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা করা। একটি অংশীদারি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ুু-পরিবর্তন অভিযোজনের জন্য সফল উদ্যোগ থেকে নেয়া শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক সম্প্রদায় অতিরিক্ত নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে পারে।
একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে পরিবর্তনটি ভেঙে না পড়ে। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ এমন দায়িত্বশীল আচরণের জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
October 2025
MTWTFSS
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930 
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!