সিন্ডিকেট ভাঙতে যৌথ কর্মপরিকল্পনা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৯ নভেম্বর, ২০২০ ২:৩৮ : অপরাহ্ণ 389 Views

দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিত্যপণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান আদৌ নিরূপণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এছাড়া সরকারিভাবে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে দুর্বলতা। সমন্বয়হীনতা রয়েছে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে।

সংকট আছে পণ্য মজুদের আধুনিক সংরক্ষণাগারের। আর এ সুযোগেই গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিভিন্ন মৌসুমে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে এই চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রণে সঠিক কোনো নীতিমালা ও পর্যাপ্ত মনিটরিং ব্যবস্থা নেই।

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ও নিত্যপণ্যের স্বনির্ভরতার পথ খুঁজতে সম্প্রতি সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ব্যক্তিরা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়ে যৌথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে দ্রুত একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করাসহ সাতটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও কতিপয় সিন্ডিকেটের কারণে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। যৌথ পরিকল্পনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কৃষি সচিব মেছবাহুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। যেহেতু আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় না, তাই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, এ বছর অনেক টাকা কৃষকদের ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। কৃষক যাতে সহজ শর্তে ঋণ পায় সে ব্যবস্থার জন্য আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি। এটি কর্মপরিকল্পনার আওতায় রয়েছে।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের উদ্যোগটি ভালো। এটি করতে পারলে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। পণ্যে স্বনির্ভরতা ও বাজার প্রতিযোগিতা তৈরি হলে সিন্ডিকেট থাকবে না। তবে এটি বাস্তবায়ন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা, স্টেকহোল্ডার ও কৃষকদের নিয়ে কাজ করতে হবে।

যৌথ কর্মপরিকল্পনার আওতায় নেয়া অন্যসব সিদ্ধান্ত হল- উৎপাদন মৌসুমে দেশীয় ও ভারতীয় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে আধুনিক স্টোরেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি এবং ক্রস চেকিং করার ব্যবস্থা। আর এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়। এছাড়া উৎপাদনকারীকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে উৎপাদন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লিন পিরিয়ডে শুল্ক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি কার্যকর করবে এনবিআর। পাশাপাশি বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য পণ্যের আমদানি, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেয়া হবে। এটি কার্যকর করবে যৌথভাবে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগী কমিশনের প্রতিনিধি।

বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, নিত্যপণ্যের স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাণিজ্য ও কৃষি সচিব যৌথভাবে দ্রুত কাজ করবেন। এর আগে নিত্যপণ্যের সঠিক পরিসংখ্যান বের করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে অনেক কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করা সম্ভব। এতে পেঁয়াজ উৎপাদনের মৌসুমে দেশীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করে সংরক্ষণ করা যাবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করলে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। কৃষিভিত্তিক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে জেলা কমিটিকেও ভূমিকা রাখাসহ সহজ শর্তে প্রকৃত কৃষকরা যেন ঋণ পান সেটি নজরদারি করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করবে।

বৈঠকে সম্প্রতি পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য, আলু ও চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তুলে ধরেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, নিত্যপণ্যের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমন্বয় এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, কৃষি বিষয়ক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে জেলাগুলোর সমন্বয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন সম্পর্কিত ডাটার ঘাটতি দূর করা জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম এনামুল করিম খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ক্যাম্পিং পদ্ধতিতে ঋণ বিতরণ কিছুটা সমস্যা ছিল, যা খুব শিগগিরই দূর হয়ে যাবে। এতে কৃষকের হাতে ঋণ পৌঁছে যাবে। বৈঠকে পেঁয়াাজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে আগামী তিন বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এছাড়া আলুর মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে করোনায় ত্রাণ বিতরণ ও রোহিঙ্গাদের চাহিদার কারণ উল্লেখ করা হয়। আর জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কুমার সাহা বলেন, কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় কৃষি বিপণন অধিদফতরের মাধ্যমে। মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়াটি আরও যৌক্তিক করা দরকার। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজার ঠিক রাখতে নিত্যপণ্যের একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করা দরকার।

জেলা পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটিকে সক্রিয় করতে হবে। কৃষকদের ব্যাংক দেয়ার ক্ষেত্রে আরও গতিশীল হতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিযোগী কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বলেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সাপলাই চেইন ও সঠিক পলিসি প্রণয়ন করতে হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
April 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!