কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোগান পৌনে ৮ হাজার কোটি টাকা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ এপ্রিল, ২০২১ ৪:৪৬ : অপরাহ্ণ 608 Views

করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বৃহৎ শিল্প এবং সেবা খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে জোগান দিয়েছে প্রায় পৌনে ৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ পরিমাণ অর্থের জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর সরকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পের উদ্যোক্তাদের সুদের হারে ভর্তুকি দিয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে এ অর্থ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ব্যাংক গ্রাহককে ১০০ টাকা ঋণ দিলে সুদ হারের ওপর বৃহৎ ও সেবা খাতের ঋণের জন্য সরকার ব্যাংককে সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা করে। আর ক্ষুদ্র ও এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ১০০ টাকা ঋণ দিলে ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার কথা বলা হয়। সরকার ঘোষিত এ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত বছরের এপ্রিলে একটি নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। ঋণ বিতরণের জন্য প্রথমে তিন মাসের সময় দেয়া হয়। কিন্তু টাকার সঙ্কটে বেশির ভাগ ব্যাংক ওই সময়ে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।
ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট মেটাতে পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রণোদনার ৫০ শতাংশ অর্থের জোগান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। অর্থাৎ কোনো গ্রাহককে ১০০ টাকা ঋণ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ৫০ টাকা জোগান দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক নির্ধারিত সময় শেষে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেয়ার শর্তে এ অর্থের জোগান দেয়ার কথা বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ঘোষণায় ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ বিতরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে বড় গ্রাহকদের ব্যাংক বেশি হারে ঋণ দিলেও ছোট গ্রাহকদের ঋণ বিতরণে অনীহা দেখা দেয়। ব্যাংক বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তহবিলের জন্য আবেদন করতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা যাচাই-বাছাই করে বিতরণকৃত ঋণের ৫০ ভাগ ব্যাংকগুলোকে জোগান দিতে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৃহৎ ও সেবা খাতে ঋণ বিতরণ করে পুনঃঅর্থায়নে ৮ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছাড় করেছে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ছাড় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ দিকে গত বছর এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় সমন্বয় করতে আমানতের সুদহার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে আনা হয়। এর পরেও বেশির ভাগ ব্যাংকই ঋণ বিতরণে সতর্কতা অবলম্বন করে। করোনার কারণে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন ব্যাহত হওয়া ও বিতরণকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে অনেক ব্যাংকই দেখেশুনে বিনিয়োগ করছে। আবার ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট কাটাতে গত বছর থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নগদ জমার হার (সিআরআর) কমানোসহ নানা নীতিনির্ধারণী সহায়তা দিয়ে আসছে। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই নগদ অর্থ সঙ্কট কমে গেছে। অনেক ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু এ ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ অর্থ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এর পরেও যারাই টাকার সঙ্কটের কথা বলছে তাদেরকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল জোগান দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে টাকা ছাড়লে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার চাপ থাকে। এর পরেও চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে আসবে না বলে ওই সূত্র জানায় ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর