শিরোনাম: চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট বান্দরবানে আলেম সমাজের সংবাদ সম্মেলন বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে উদযাপিত হলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস জেলা প্রশাসক মেধাবৃত্তি,বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে সেনা জোনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বান্দরবানে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল কর্মী ও সুধী সমাবেশে দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তাঃ সুস্থ হয়ে ফিরছে ১১ বছরের জিংক থান ময় বম

দলের তথ্য পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল বিশ্বাসের হাতে জিম্মি বিএনপি


প্রকাশের সময় :১৬ মে, ২০১৭ ১১:০৮ : অপরাহ্ণ 974 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্ক:-ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সরকারবিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলন করলেও ব্যর্থ হয় দলটি।আর এ ব্যর্থতার কারণ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে দায়ী করছেন দলের একাধিক সিনিয়র নেতাসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।তিনি একদিকে যেমন দক্ষ কূটকৌশলী তেমনি ম্যানেজ মাস্টার বলে খ্যাতি রয়েছে।কম কথা বলা এ কর্মকর্তাকে তাই সকলেই সমীহ করে চলেন।অনেকে তাকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সমান্তরালে মনে করেন।তারা বিশ্বাস করেন,দলের কেউ তাদের পদ-পদবি নিশ্চিত করতে না পারলেও শিমুলের আঙ্গুলি ইশারায় তা সম্ভব।তবে এ সকল নেতাকর্মীদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত একটি ছোট অংশের নেতাকর্মীরা এমনভাবে বিশ্বাসকে জাহির করে থাকেন।তাদের এমন প্রচারণায় অনেক ক্ষেত্রে পোড় খাওয়া নেতারাও খেই হারিয়ে ফেলেন।ভিন্ন দিকে বিএনপির বড় অংশটি তাকে সন্দেহ করা ছাড়াও নেতিবাচক চরিত্রের লোক বলেই জানেন নেতাকর্মীরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,শিমুল বিশ্বাস তার রাজনৈতিক জীবনে জাসদ,ওয়ার্কার্স পার্টিসহ যতগুলো দলে ভিড়েছেন সেসব দলই ধ্বংসের দিকে গেছে।ওইসকল দলের মধ্যে নিজস্ব বলয় তৈরি করে কোন্দল আর অবিশ্বাসের মাধ্যমে নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন।শেষে কোনো রাজনৈতিক দলে ঢুকতে না পরলেও শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান।যার নেতৃত্বে তিনি এখনও রয়েছেন। তবে ২০০১ সালের এপ্রিলের দিকে একজন বিএনপি নেতার সঙ্গে সখ্য করে দলে ভিড়ে যান।নিজের কৌশলের কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান পদেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।দলের কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও ওয়ান ইলেভেন প্রেক্ষাপটে বিএনপির মহাদুর্যোগের সুযোগে অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে প্রবেশ করেন দলটির মুখপাত্র দৈনিক দিনকাল পত্রিকায়। এরপর থেকেই তার কার্যক্রম শুরু।জরুরি অবস্থার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবার পর নেতাকর্মীরা শিমুলকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ির সামনের সিটে আবিষ্কার করেন।সেই থেকে স্টিয়ারিং তার কাছে। নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। নিজ জেলা পাবনা বিএনপি শেষ করে কেন্দ্রীয় কমিটি আর প্রত্যেকটি জেলা কমিটিতে তার প্রভাব রয়েছে বলে জানান দলটির ত্যাগী নেতাকর্মীরা। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। এর মধ্যে ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতাকর্মীদের আধিক্যই বেশি। রয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাও। তার রাজনৈতিক জীবনের রহস্যময়তা নিয়ে নানা মুখরোচক গল্পও শোনা যায় দলটির অন্দরমহলে। প্রকাশ্যে কেউ বলার সাহস না পেলেও ভেতরে ক্ষুব্ধ দলটির সিংহভাগ নেতারা।দলের নেতাকর্মীরা জানান,শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের রাজনৈতিক জীবনীর অংশ নিয়ে বই রয়েছে।তিনি এক সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।ওইসব দল থেকেও তাকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল বিশ্বাস ভঙের কারণে,তথ্য পাচারের অভিযোগে।নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা তাকে অবিশ্বাস করতেন,তথ্য পাচারকারী মনে করতেন,দলের ফান্ড তসরূপকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।আর এ কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেন।তিনি যে কয়টি রাজনৈতিক দলে ভিড়েছেন সে কয়টি থেকেই বহিষ্কার হয়েছেন।নেতাকর্মীরা জানান,শিমুল বিশ্বাসের রাজনৈতিক হাতেখড়ি তার নিজ এলাকা পাবনা জেলার আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি দিয়ে।এর মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৭৮ সালে আগস্টে নকশাল নেতা শিমুল বিশ্বাসকে জাসদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।কিন্তু সেখানে ২ মাসের মাথায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, সে দলে ঢুকে চীনপন্থি পূর্ব বাঙলা কমিউনিস্ট পার্টি এবং পুলিশকে তথ্য পাচার করত। জাসদ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হবার পর তার ঘনিষ্ঠ টিপু বিশ্বাসের সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল।ওই সময়ের জাসদ নেতা আর এখন রাজধানীর একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক আবুল হোসেন খোকন তার ‘জনযুদ্ধের দিনগুলো’ বইয়ে এ সকল তথ্য তুলে ধরেন। বইয়ের ১৭৭ পৃষ্ঠায় তিনি লেখেন, নভেম্বরে শিমুল বিশ্বাস জাসদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা পাবনা জেলার দোগাছিতে একটি সশস্ত্র হামলা করার ছক তৈরি করেন। কিন্তু জাসদ বিষয়টি আগে থেকে টের পেয়ে যায়। তারাও ওইসময়ে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিকল্পনা নেন। এর অংশ হিসেবে তারা রাতেই সকলকে প্রস্তুতি নিতে বলে ছক অনুযায়ী শিমুল বিশ্বাসের বাহিনী যে এলাকা দিয়ে হামলা করার জন্য প্রবেশ করবেন সেই এলাকায় ইউ প্যাটার্নে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।মধ্যরাতে শিমুল বিশ্বাস তার ৩০-৪০ জন সশস্ত্র দলবল নিয়ে আক্রমণের জন্য এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘিরে ফেলা হয়।ওই সময়ে জাসদের নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের পিটুনিতে অস্ত্রধারীরা ধুলোয় গড়াগড়ি করতে থাকে আর শিমুল বিশ্বাসকে পাওয়া যায় রাস্তার নালার পাশে আহত অবস্থায়।এ সময়ে বন্দি শিমুলকে নিয়ে জুতার মালা গলায় পরিয়ে সকলে বিজয় মিছিল করেন। পরে বন্দি শিমুলের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য হাত-পা বেঁধে ৯ সদস্যের একটি কমিটি দীর্ঘ্য বৈঠক করে ৭ জন তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। কিন্তু কমিটির বাকি ২ জন শিমুলের অনুনয়-বিনয় করে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা ভিক্ষার কারণে আর মানবিকতায় তাকে মুক্ত করার দৃঢ় অবস্থান নেয়। পরে ওই দুই জনের রায় বহাল রাখেন বাকি নেতারা। কিন্তু তাকে যারা মুক্তি দেয়ার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের ওইদিন রাতে নিজে পুলিশ নিয়ে ধরিয়ে দেন। এ বিষয়ে লেখক তার বইয়ে উল্লেখ করেন, আমি ভাবতেও পারলাম না- যাকে প্রাণে রক্ষা করলাম সে (শিমুল) এতবড় শিক্ষার পরও এমন করছেই!তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওইদিন রাতে গোটা এলাকায় পুলিশ চিরুনি তল্লাশি করে পার্টির অন্য নেতাদের কাউকে ধরতে পারেনি। আমাকে নিয়ে দোগাছি স্কুল মাঠে নেয়া হলো। ভারি অস্ত্রে সজ্জিত ১০ ট্রাক পুলিশ এসেছিল। সঙ্গে শিমুল বিশ্বাস। সে আমাকে দেখিয়ে পুলিশকে কিছু বলছিল। আর পুলিশকেও আনন্দে উত্ফুল্ল হয়ে উঠতে দেখলাম।অন্যদিকে পাবনা জেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘নয়া রাজনীতি’তে ১৯৯১ সালে ১০ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়- পার্টি থেকে শিমুল বিশ্বাস বহিষ্কার। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ পাবনা জেলা কমিটির সদস্য শিমুল বিশ্বাসকে পার্টির রাজনীতি, মতাদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা কমিটির সম্পাদক হোসেন আলী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে-১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে নস্যাত্ করার জন্য তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে আঁতাত করেন।তিনি পার্টিতে শ্রমিক শ্রেণির লাইনকে অমান্য করে পার্টিতে যৌথ নেতৃত্বের বিপরীতে ব্যক্তি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা করেন।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে,তিনি তার নিজের কমিটিতে পার্টি তহবিলের হিসাব কোনো সময়েই প্রদান করেননি।এসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হলে তিনি পার্টির মধ্যে উপদলীয় চক্রান্ত চালিয়ে পার্টির ঐক্য বিনষ্ট করেন।পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করেন এবং তা প্রমাণিত হয়।এ কারণে ৩১ মে ১৯৯১ সালে জেলা কমিটির সভায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। আর ৩০ জুন ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক ব্যুরো এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।চরম অধঃপতিত, অনুশোচনাবিহীন,আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী,উচ্চাভিলাষী পদাঙ্ক অনুসরণকারী শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে সকল নেতাকর্মীকে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
(((এম.উমর ফারুক)))

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!