লগি-বৈঠা তাণ্ডবের সেই ভয়াল ২৮ অক্টোবর আজ


প্রকাশের সময় :২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ৪:০৩ : অপরাহ্ণ 1514 Views

বান্দরবান অফিসঃ-আজ রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ নির্মম হত্যাকা- ও পাশবিকতায় কেঁদেছে বাংলাদেশ, কেঁদেছে বিশ্বমানবতা। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। শুধু হত্যাই নয়, মৃত লাশের উপর নৃত্য করার দৃশ্যও প্রত্যক্ষ করে বিশ্ববাসী। এটা শুধুমাত্র নৃশংস হত্যাকা-ই নয়, এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বাভাবিক পথ চলা ব্যাহত হয়, ঘটে ব্যত্যয়। সর্বত্র বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার শ্লোগান দেখা গেলেও এই নির্মম ঘটনার বিচার হতে দেখেনি দেশবাসী।

২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক কলঙ্কজনক দিবস। ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। মূলত এ ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশব্যাপী শুরু হয় তা-ব। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অফিসসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে চালানো হয় হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় অনেক অফিস, বাড়িঘর।

চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ ছিলো। সকাল থেকেই সভার মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ করেই বেলা ১১টার দিকে লগি, বৈঠা ও অস্ত্রধারীরা জামায়াতের সমাবেশ স্থলে হামলা চালায়। তারা একযোগে বিজয়নগর, তোপখানা রোড ও মুক্তাঙ্গন থেকে পল্টন মোড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। এক পর্যায়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পল্টনের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে এবং নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটাতে থাকে। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকে নিরস্ত্র জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লগি-বৈঠা দিয়ে একের পর এক আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিনকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার লাশের উপর ওঠে নৃত্য-উল্লাস করতে থাকে।

সে দিন দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে লগি-বৈঠা বাহিনী। বিকেলে সমাবেশে মাওলানা নিজামীর বক্তব্য শুরু হওয়ার ৪/৫ মিনিট পর ৪টা ৪৩ মিনিটে পল্টন মোড়ে উত্তেজনা দেখা যায়। এ সময় নির্মাণাধীন র‌্যাংগস টাওয়ারের (বাসস ভবনের পূর্ব পাশের বিল্ডিং) ছাদ থেকে সমাবেশ লক্ষ্য করে ১০/১২টি বোমা ও প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দফায় দফায় গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশ নিজেদের নিরাপদ স্থানে হটিয়ে নেয়।

একদিকে ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষণ করতে থাকে। অপরদিকে পল্টন মোড় থেকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে তারা সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা তৈরি করে মানব ঢাল। আওয়ামী অস্ত্রধারীদের ছোঁড়া গুলি মাথায়বিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান ও জুরাইনের জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন। এ ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের ৬ জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং আহত হন সহস্রাধিক।

মাগরিবের আজানের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে যখন বিডিআর পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়। সে সময় সারাদেশে হত্যা ও নৈরাজ্য চলে। তাদের তিনদিনের ধ্বংসলীলায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ঘটনার পরদিন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের ৪০ জন নেতার নামসহ সহ¯্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করে ৪৬ জন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিট দাখিলের পর ২২ এপ্রিল ২০০৭ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। চার্জশিট গ্রহণ করেই আদালত পলাতক আসামি শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরদিন ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার নাটকীয় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবু সাঈদ পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে একটি পত্র দেয়। ১৭ আগস্ট আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করে। আইন অনুযায়ী যেকোন হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহার করার সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও মহাজোট সরকার তাই করেছে। : :

সুত্র : দৈনিক দিনকাল

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2025
MTWTFSS
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30 
আলোচিত খবর