এই মাত্র পাওয়া :

শিরোনাম: বান্দরবানে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের কথন’ শীর্ষক আলোচনা সভা মেধাবী শিক্ষার্থী ছাইনুমে মারমার পাশে দাঁড়লো পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ জুলাই পুর্নজাগরণঃ রোয়াংছড়িতে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বান্দরবানে মাছরাঙা টেলিভিশনের ১৪তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত বান্দরবানে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত উক্যছাইং মার্মাকে বিমান বাহিনীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন রোয়াংছড়িতে তরুণকে পাথর ছুড়ে মেরে হত্যাঃ লাশ খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ জুলাই পুনর্জাগরণ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানঃ বান্দরবানে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

দায়িত্ব পালনে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে


মো.আলী আশরাফ মোল্লা প্রকাশের সময় :২৮ মার্চ, ২০২০ ৩:২৭ : অপরাহ্ণ 713 Views

সারা বিশ্ব এখন নোভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত। আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। আর এই করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণেই বাংলাদেশের সকল জনগনকে যার যার নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে সরকার কর্তৃক। জরুরী সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এ নির্বাহী আদেশ সবাইকে মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাহিরে বের না হয় তার জন্য সরকার কঠোরতা আরোপ করেছেন। আর এই সামগ্রিক বিষয় টি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য পুলিশের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। তাদেরকে সহযোগীতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ও মাঠে নামানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া মানুষ গুলো খুব বিপদে পড়েছে। তাদের কে খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য এই মাহামারীর সময়ে বাইরে বের হতে সরকারি আদেশ অমান্য করে। কারণ বাইরে বের না হলে যে তাদের কারো চুলায় আগুন জ্বলবে না। বিশেষ করে রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তাদের পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতেই কোন কাজের সন্ধানে এই মুহুর্তে বের হচ্ছে। আর আমরা কেউ কেউ তাদেরকে বেরধক পিঠিয়ে আহত করছি, কানে ধরে উঠ বস করিয়ে আমরা আমাদের ক্ষমতা জাহির করছি। গতকালই যশোর জেলার মনিরামপুরের এসি ল্যান্ড জনাব সাইয়েমা হাসান, যিনি ৩৪ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালীন সময়ে তিন জন বাবার বয়সী ভান চালক বৃদ্ধকে শাস্তি প্রদান করেন। কান ধরে উঠবস করিয়েই শুধু ক্রান্ত হন নি, তিনি নিজের মোবাইলে তা ধারণ করেন। আবার রাতেই বেলায় সেই ছবি সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। যা ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার এমন আচরণে আমি শুধু বিস্মিত হয়নি অবাক ও হয়েছি। মুখে মাস্ক না পড়ার অপরাধে এবং বাইরে বের হওয়ার অপরাধে তাকে জনসম্মুখে এই রকম কান্ডজ্ঞানহীন শাস্তি দেওয়া হয়। তাকে এই রকম শাস্তি প্রদান করার পূর্বে তার ঘরে খাবার আছে কি না! সেটা জানার প্রয়োজন ছিলো। ক্ষুধার জ্বালা নিবারনের জন্যই এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্যই তারা হয়তো বা বাইরে বা বাজারে বের হয়েছিল। এই রকম অমানবিক, নিষ্ঠুর, অপমানজনক শাস্তি বৃদ্ধ বয়সের ভ্যান চালকদের কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমরা যারা সরকারি দায়িত্ব পালন করি নিশ্চয়ই আমরা রাষ্ট্রের জন্যই কাজ করি। আমার কাজের জন্য রাষ্ট্র বা সরকার বেকায়দায় পড়বে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
আমাদের কিছু অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যও রয়েছে যারা রাস্তা ঘাটে এই রকম মানুষ দের উপর চড়াও হয়ে উঠেন। দয়া করে তাদের কে মারবেন না,তাদের উপর চড়াও হবেন না। তারা ও বাচঁতে চাই, করোনার করাল গ্রাস থেকে তারা ও মুক্তি চাই কিন্ত তাদের যে বের হতে হয়, তা না হলে যে তাদের ঘরে ছেলে মেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়! আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবো তবে সেটা মানবতার দিকে লক্ষ রেখে যেন হয়। আমাদের হাতে যেন কোন নিরীহ, নিরপরাধ ব্যক্তি লাঞ্চনার শিকার না হয়।
আমাদের পুলিশ বাহিনীর প্রধান মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল মহোদয় বলেছেন,
জন জীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ,নিত্যপণ্য,খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোন সহ আবশ্যক সকল জরুরী সেবার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন এবং দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগনের সাথে বিনয়ী,সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন।

আমাদের স্বাধীনতার রুপকার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন- সরকারি কর্মচারীদের বলি, মনে রেখ, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনী নয়। পাকিস্তানের কলোনী নয়। যে লোককে দেখবে, তার চেহারাটা তোমার বাবার মত, তোমার ভাইয়ের মত। ওরই পরিশ্রমের পয়সায় তুমি মাইনে পাও। ওরাই সম্মান বেশি পাবে। কারণ ওরা নিজেরাই কামাই করে খায়।
আপনি চাকরি করেন,আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমরা গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে।

আমরা যারা সরকারি চাকরি করি, তাদের সবাইকেই জাতির জনকের বক্তব্য থেকে শিক্ষা নিয়ে জনসাধারণকে মূল্যায়ন করে সেবা প্রদান করতে পারলেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব বলে মনে করি। আমাদেরকে শাসক ভাবা চলবে না। মনে রাখতে হবে, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী মাত্র।

লেখক ঃ সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পুলিশ কর্মকর্তা।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
August 2025
MTWTFSS
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!