জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করছেন বিএনপি’র সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়ার শ্বশুর মাহবুব তালুকদার


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ৫:৪৭ : অপরাহ্ণ 626 Views

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে এবং বিনা কারণে অহেতুক অজুহাত দেখিয়ে বারবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ত্যাগ করে আলোচনায় এসেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সূত্র বলছে, বিএনপির পছন্দের তালিকা থেকে মাহবুব তালুকদারকে ইসির মতো সম্মানজনক আসনে আসীন করা হয়। তবে তিনি তার পক্ষপাতমূলক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণের জন্য নিজের মর্যাদার জায়গাকে ইতোমধ্যেই কলঙ্কিত করে ফেলেছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তিনি গণমাধ্যমের সামনে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি করতে কাজ করছেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করে আবারো সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন তিনি। এর আগেও তিনি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে ইসির নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন বলে একাধিক অভিযোগ আছে।

এদিকে একজন কমিশনারের জন্য বিদ্যমান আচরণ বিধিমালা সম্পর্কে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মাহবুব তালুকদার যে ভাষায় কথা বলছেন তা একটি নির্দিষ্ট দলের ভাষ্যের দ্বিতীয় সংস্করণ মাত্র। তার মনে রাখা উচিত তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য কমিশনারের দায়িত্বে এসেছেন। কোন নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে বসেননি। নির্বাচন কমিশনারদের জন্যও আচরণ বিধিমালা রয়েছে। তাদেরকে তা মানতে হবে। অবশ্যই নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে মাহবুব তালুকদারকে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ করা উচিত বলেই মনে করি।’

মাহবুব তালুকদারের আচরণের বৈরিতার বিষয়ে বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা খালেদা জিয়ার একজন সাবেক উপদেষ্টা বলেন, আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে মাহবুব তালুকদারকে আমি খুব কাছে থেকে চিনি। দেশের প্রথম চার রাষ্ট্রপতির দফতরে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেস সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোশতাক সরকারের সাথে তার সখ্যতা প্রমাণ করেছিল তিনি একটা জাতীয় বেঈমান। মাহবুব তালুকদার মেজর জেনারেল জিয়ার কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটিয়েছেন। তার আমেরিকা প্রবাসী মেয়ে আইরিন মাহবুব দীর্ঘ সময় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। সে হিসেবে বিএনপির সাথে মাহবুব তালুকদারের সম্পর্ক অনেক গভীর।

বিএনপির সাবেক এই নেতা আরো বলেন, পার্বত্য খাগড়াছড়ির ভূমি দস্যু ও শীর্ষ মাদক পাচারকারী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড (সিএইচটিডিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ ভূঁইয়ার কাছে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল মাহবুব তালুকদার। সাবেক উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান এই ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে ভূমি দস্যুতা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে বহিষ্কার করেছিল প্রশাসন। তারপর সে সময় এই ওয়াদুদ ভূঁইয়ার বিএনপিতে যোগ দেয়া নিয়েও অনেক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে ওয়াদুদ ভূঁইয়া রাতারাতি খাগড়াছড়ির বিএনপি নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যান। অনেকে-ই মনে করেন তারেক রহমানকে খুশি করতেই মাহবুব তালুকদার পরবর্তীতে নিজের মেয়েকে আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার মতো সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। আসলে নিজের মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের সূত্র ধরেই মাহবুব তালুকদারের বিএনপির সাথে সখ্যতা বেশি। তাই রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মাহবুব তালুকদারের নাম বিএনপির তালিকায় ছিল।

বিএনপি’র সাবেক সাংসদের ঘনিষ্ট আত্মীয় হওয়ার সুবাদে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর হতেই অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন বিএনপিকে অবৈধ সুযোগ দিতেই নিরপেক্ষতার জায়গা হতে সরে গিয়ে বর্তমান নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত করতেই তিনি অনবরত নির্বাচন কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিপরীতে দৃষ্টিকটুভাবে অবস্হান গ্রহণ করছেন। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে পারলে জামাতাসহ তিনি রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন বিধায় মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনের গোপনীয়তার শর্ত ভেঙ্গে বার বার কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে কমিশনের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!