চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে করোনার টিকা উপহার দেবে


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:০৩ : অপরাহ্ণ 319 Views

চীনা প্রতিষ্ঠান আনুই জিফেই বাংলাদেশে টিকা পরীক্ষা ও উৎপাদন করতে চায়। দু-এক দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসছেন।


বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) করতে যাচ্ছে আনুই জিফেই নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। টিকার পরীক্ষার পাশাপাশি তারা যৌথ গবেষণা ও উৎপাদনের কারখানাও স্থাপন করতে চায়। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকায় আসছেন।

দেশে টিকার পরীক্ষা করতে আসা চীনা প্রতিষ্ঠানটি হলো আনুই জিফেই লংকম বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড। বেইজিং থেকে গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, টিকা পরীক্ষা সফলভাবে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে যে টিকা উৎপাদিত হবে, তার একাংশ মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে পাবে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

আনুই জিফেইয়ের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন তাদের প্রতিনিধিদল এসে কীভাবে কাজ করবে এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ঠিক করবে।
কনক কান্তি বড়ুয়া, উপাচার্য, বিএসএমএমইউ
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর চলতি মাসের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) টিকা পরীক্ষার প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে আনুই জিফেইকে চিঠি দেয়।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে আনুই জিফেইয়ের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন তাদের প্রতিনিধিদল এসে কীভাবে কাজ করবে এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ঠিক করবে। আগামী তিন-চার দিনের গবেষণা প্রটোকল (পরীক্ষাবিধি) চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করছি।’

আনুই জিফেই এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল মেনে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে টিকার পরীক্ষা শেষ করেছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় আরভিডি-ডিমার নামের টিকাটিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বরে আনুই জিফেই নিজেদের টাকায় বিএসএমএমইউর সঙ্গে করোনার টিকা পরীক্ষার প্রস্তাব দেয়। পরীক্ষা সফল হলে তারা বাংলাদেশে টিকার গবেষণার পাশাপাশি টিকা উৎপাদনের কারখানা স্থাপনেরও কথা বলে ওই প্রস্তাবে। এর আগে চীনের টিকা উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক তাদের টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অর্থায়ন-জটিলতায় সেই উদ্যোগ এগোয়নি।

আনুই জিফেইয়ের ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক লেই সিয়াওতিং গত বুধবার সকালে বেইজিং থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকার পরীক্ষা, উৎপাদনসহ সব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আনুই জিফেইয়ের প্রেসিডেন্ট পু জিয়াং ২৩ জানুয়ারি ঢাকা সফর করবেন। বিশেষ করে চীনসহ বিভিন্ন দেশে টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা দ্রুত বাংলাদেশে পরীক্ষা শুরুর জন্য বিএসএমএমইউতে ল্যাব স্থাপনের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেব।’

আরভিডি-ডিমার নামের আনুই জিফেইয়ের করোনার টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা কোথায় শেষ হয়েছে জানতে চাইলে লেই সিয়াওতিং জানান, চীনের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইকুয়েডরে টিকা পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে আনুই জিফেইয়ের প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চীনের প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধিদের একাধিক আলোচনা হয়েছে। এরপর এ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসছেন।

বাংলাদেশে কয়েক কোটি টিকার ডোজ সরবরাহের কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। এ বিষয়গুলো আনুই জিফেইয়ের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় চূড়ান্ত হতে পারে।
চীনের কোম্পানি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আনুই জিফেই এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল মেনে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে টিকার পরীক্ষা শেষ করেছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় আরভিডি-ডিমার নামের টিকাটিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যেহেতু চার মাস আগেই দেওয়া প্রস্তাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে, তাই বাংলাদেশে টিকার পরীক্ষা শেষে দ্রুত উৎপাদনে নজর দিচ্ছে আনুই জিফেই।

ওই সূত্র আরও বলেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, টিকা উৎপাদনের জন্য নতুন কারখানা স্থাপন সময়সাপেক্ষ বলে বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে উৎপাদনে তাদের আগ্রহ আছে। এটি হলে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে টিকা বিতরণ নিশ্চিত করা যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেইজিং থেকে আনুই জিফেইয়ের এক প্রতিনিধি এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশে কয়েক কোটি টিকার ডোজ সরবরাহের কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। এ বিষয়গুলো আনুই জিফেইয়ের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় চূড়ান্ত হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদিত হবে, তাদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়টিও বিবেচনায় আছে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!