এই মাত্র পাওয়া :

চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ছিলেন আত্মস্বীকৃত কুখ্যাত রাজাকার


প্রকাশের সময় :২৭ মে, ২০১৭ ১:৫১ : অপরাহ্ণ 902 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-রাজা ত্রিদিব রায় ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা ও পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গামাটি সার্কেলের চাকমা রাজা এবং আত্মস্বীকৃত কুখ্যাত রাজাকার।পাকিস্তানপ্রেমিদের মধ্যে প্রথম ও অগ্রগণ্য এই রাজা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রবল বিরোধীতা করেছিলেন। শুধু তাই নয় দেশ স্বাধীন হওয়ায় তিনি রাগে, ক্ষোভে ও ভয়ে রাজ্য ও রাজত্ব ছেড়ে পালিয়ে তার প্রিয় পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তান রাষ্ট্রও তাকে অবমুল্যায়ন করেননি।আমৃত্য দপ্তরবিহীন মন্ত্রীর মর্যাদা দান করেছিলেন।এজন্য তাকে বলা হতো পাকিস্তানের উজিরে খামাখা!তিনি ছিলেন রাঙ্গামাটি সার্কেলের ৫০তম চাকমা রাজা ও সার্কেল চীফ। তার বাবা রাজা নলিনাক্ষ রায় ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর মারা গেলে ত্রিদিব রায় ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ সিংহাসনে বসেন। ১৯৭১ সালে দেশ ত্যাগ করেন এবং ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানেই মারা যান।বর্তমানে তার ছেলে ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় রাঙ্গামাটি সার্কেলের চিফ ও চাকমা রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে চলে যান।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪২ বছর ধরে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বসবাস করে আসছিলেন।
পাকিস্তানের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত রাজাকার ত্রিদিব রায়
১৯৭০ এর দশকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মন্ত্রিসভায় ত্রিদিব রায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।পরে তিনি পাকিস্তান সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত নিযুক্ত হয়ে পাকিস্তানের পক্ষে জনমত গঠনে পৃথিবীর বৌদ্ধপ্রধান রাষ্ট্রগুলো চষে বেড়ান।স্বাধীনতার পর ত্রিদিব রায় আর দেশে ফিরে আসেননি।পরে পাকিস্তান সরকার তাকে সে দেশের দফতরবিহীন ফেডারেল মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়।যা তাকে ‘উজিরে খামাখা’ হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ত্রিদিব রায় বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।আর্জেন্টিনা,শ্রীলঙ্কা,চিলি, ইকুয়েডর,পেরু ও উরুগুয়ের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করার পর তিনি চূড়ান্তভাবে পাকিস্তান ফিরে আসেন।এরপর থেকে তিনি সেদেশের এম্বেসেডর এট লার্জ‌ ছিলেন।
ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আবেদন করেছিলেন।তবে ত্রিদিব রায় তা ফিরিয়ে দেন। কারণ পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী একজন মুসলিম শুধু রাষ্ট্রপতি হতে পারেন।কিন্তু ত্রিদিব রায় ছিলেন একজন বৌদ্ধ এবং তিনি ইসলাম গ্রহণে ইচ্ছুক ছিলেন না।উল্লেখ্য,১৯৩৩ সালের ১৪ মে রাজা ত্রিদিব রায় চাকমা রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত চাকমা সার্কেল চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।পরে ১৯৭৭ সালে তার অনুপস্থিতিতেই তার ছেলে বর্তমান সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায় রাজার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।ত্রিদিব রায় ১৯৩৩ সালের ১৪ মে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে চাকমা রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি রাজা নলিনাক্ষ রায় ও তার স্ত্রী বিনিতা রায়ের ছেলে।১৯৫৩ সালের ২ মে ত্রিদিব রায় চাকমা সার্কেলের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১৯৭১ সালে তিনি দায়িত্ব ত্যাগ করেন। এরপর তার ছেলে দেবাশীষ রায় রাজা হন।১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।ত্রিদিব রায় এই কর্মসূচির সমর্থক ছিলেন না।সেসময় তিনি বিভিন্নভাবে ছয় দফার বিরোধীতা করেন।১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান তার দলের পক্ষে নির্বাচনে দাড়ানোর জন্য ত্রিদিব রায়কে আহ্বান জানান।কিন্তু ত্রিদিব রায় এই অনুরোধে সাড়া দেননি।তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। এবং পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন দেন।৯০ দিনের মধ্যে রাজা ত্রিদিব রায়ের নামে সব স্থাপনার নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2025
MTWTFSS
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
আলোচিত খবর