কৃষিপণ্যে মুনাফার সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ নভেম্বর, ২০২১ ৩:১৩ : অপরাহ্ণ 389 Views

কোন কৃষিপণ্যে সর্বোচ্চ কত লাভ করা যাবে- তা বেঁধে দিয়েছে সরকার। কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ মুনাফার হার বেঁধে দিয়ে কৃষি বিপণন আইনে দেয়া ক্ষমতাবলে ‘কৃষি বিপণন বিধিমালা, ২০২১’ জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।‘কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮’-এ কৃষি বিপণন অধিদফতরকে কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিপণন অধিদফতর কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন মুনাফার হার ধরে কৃষিপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে আসছিল। এখন মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেয়া হলো।বিধিমালায় বাজার কারবারি ও সুপার শপ পরিচালনাকারীর দায়িত্বে বলা হয়েছে, কৃষি বিপণন অধিদফতরের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ কেনাবেচা করতে হবে।অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করে। এখন বিধিমালায় মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আরও সহজ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।একই সঙ্গে কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের রফতানিকারক, আমদানিকারক, ডিলার, মিলার, সরবরাহকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং চুক্তিবদ্ধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নেয়ার ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বিধিমালায়।কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ-১) মোঃ মজিবর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কৃষিপণ্যের যৌক্তিক দাম নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করি। আমাদের লোকজন বাজার থেকে কৃষিপণ্যের পাইকারি দাম কালেকশন করেন। এরপর প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে কষ্ট কত হতে পারে, এর মধ্যে পণ্যের দাম ছাড়াও দোকান ভাড়া, বিদ্যুত খরচ, শ্রমিকের মজুরি থাকে। এর সঙ্গে মুনাফা যোগ করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করি। মুনাফার হারটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেয়া, এটা মাঝে মাঝে পরিবর্তন হয়।’ তিনি বলেন, ‘এখন কৃষি বিপণন আইনের অধীনে বিধিমালায় মুনাফার হারটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন এটাই চূড়ান্ত।’ কেউ এ নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা নিলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও জানান কৃষি বিপণন অধিদফতরের এই কর্মকর্তা।বিধিমালায় বলা হয়েছে, ধান, চাল, গম, ভুট্টা ও অন্য খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ যৌক্তিক মুনাফার হার ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ। পাট, চা, তুলা, তামাক ও অন্য অর্থকরী ফসল এবং সব ধরনের ডাল ও কলাইয়ের (খোসাসহ ও খোসা ছাড়া) ক্ষেত্রেও তিনটি পর্যায়ে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে একই।তেলবীজ রাই, সরিষা, তিল, তিসি, বাদাম, নারিকেল, রেঢ়ি, সূর্যমুখী, সয়াবিন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।আখ এবং সব ধরনের গুড়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩৫ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।সব ধরনের তাজা ও শুকনা ফলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২০ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।সব ধরনের তাজা ও শুকনা ফুল, ক্যাকটাস, অর্কিড, পাতাবাহার ও অন্য এবং আলুসহ সব প্রকার শাক-সবজির ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।সব ধরনের মাছ (তাজা, শুকনা, লবণজাত ও হিমায়িত) ও অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ।পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ (কাঁচা) ও অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রে মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২০ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ এবং ধনিয়া, কালোজিরা, মরিচ (শুকনা) ও এ জাতীয় অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফার হার হবে ২৫ শতাংশ।ডিম, দুগ্ধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্য, সুপারি, পান, সর্ব প্রকার ভুসি, ডাব, নারিকেল ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেয়া হয়েছে। এসব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ।চিড়া, মুড়ি, সুজি, সেমাই, আটা, ময়দা সব প্রকার কৃষিপণ্যের রস ও জুস, আচার, বেসন, চিপস, অন্য যে কোন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে সর্বোচ্চ মুনাফার হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ।উৎপাদক পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ ও বিপণন খরচের সঙ্গে উল্লিখিত শতকরা হারে মুনাফা ধার্য করে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের পাইকারি ক্রয়মূল্য (উৎপাদকের বিক্রয়মূল্য) ও বিপণন খরচের সঙ্গে শতকরা হারে মুনাফা ধার্য করে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কৃষিপণ্যের খুচরা কারবারিও ক্রয়মূল্য (পাইকারি বিক্রয়মূল্য) ও বিপণন খরচের সঙ্গে শতকরা হারে মুনাফা ধরে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবে।কৃষি বিপণন আইনে বলা হয়েছে, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে বা সরকারের নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শাস্তি হবে দ্বিগুণ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!