ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৯:৩৮ : অপরাহ্ণ 270 Views
করোনা মহামারিতে ঘরে বসে নারীরা নিজে যেমন উপার্জনের উপায় খুঁজে নিয়েছেন, তেমনি অনেক পুরুষও নিজের কাজের পাশাপাশি ঘরে স্ত্রী, কন্যা কিংবা বোনকে অনলাইন ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এক জন নারী শুধু চাকরি নয় বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। আর বর্তমানে নারীরা সেদিকেই হাঁটছেন। বর্তমানে পোশাক, শাড়ি-গয়না থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী, ঘর সাজানোর পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনসামগ্রীসহ এমন কিছু নেই, যা অনলাইনে কেনা-বেচা হচ্ছে না। আর ই-কমার্স নামে পরিচিত এ ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে।

অনলাইনে শুধু পণ্য নয়, যার যে দক্ষতা রয়েছে, তিনি সেটাই পুঁজি করে ব্যবসা শুরু করেছেন এবং তা চলছেও রমরমা। কেউ যদি গান পারেন, তিনি গান শেখানোর টিউটোরিয়াল দিয়ে ব্যবসা করছেন, কেউ বা নৃত্য, গিটার শেখা, আবৃত্তি, আর্ট, কেয়ার গিভার, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রোজগারে নেমেছেন। ঘরে বসে যেহেতু ব্যবসা করা যাচ্ছে, সে কারণে নারীদের জন্য সেটা সহজ হয়েছে। অনলাইনে তাই নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেজ পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্যমতে, পৃথিবীর মাত্র ২ শতাংশ নারীর কাছে তাদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে। যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুই জন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। কারণ দেশে মোট উদ্যোক্তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই নারী।

তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য দেশে প্রধান বাধা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও তার দৃষ্টিভঙ্গি। যারা নারীকে একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনে দেখতে অভ্যস্ত। যার ব্যতিক্রম হলেই নারীর যত দোষ খোঁজা শুরু হয়। অবশ্য সেই জায়গায় অনেক পরিবর্তন এনেছেন নারীরাই। কারণ সমাজে এক জনের উপার্জনে আর সংসার চলছে না। ফলে নারীদের অর্থ উপার্জন এখন ইতিবাচকভাবেই দেখা হচ্ছে। ৩০ বছর আগের দেশের অর্থনীতি আর ২০২১ সালের অর্থনীতির হিসাব ভিন্ন। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সবক্ষেত্রে নারীরা তাদের কাজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে।

অনলাইনে ব্যবসা করা নারীরা বলছেন, ঘরের বাইরে ৮/১০ ঘণ্টা সময় দিয়ে কাজ করতে হয় না বলে এই লাইনে এখন নারীর পদচারণা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের বাজার সম্ভাবনা ও অর্থায়ন বৃদ্ধি’ শীর্ষক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের বার্ষিক ঋণ চাহিদার ৬০ শতাংশই পূরণ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ করতে জামানত ছাড়াই ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

বাংলাদেশে গত কয়েকবছর ধরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুকভিত্তিক অনেক পেজ তৈরি হয়েছে, যেখানে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। এসব পণ্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেশির ভাগই নারী এবং যাদের অনেকে ছাত্রী বা গৃহিণী। নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। তাদের ব্যাবসায়িক পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি-পোশাক, রূপসজ্জা, গৃহসজ্জা, বিভিন্ন পদের তৈরি খাবার, অফিসের জন্যে দুপুরের খাবার, মিষ্টান্ন পণ্য, বেকারি পণ্য প্রভৃতি সামগ্রী।

ফেসবুকে ‘নিশিন্দা’ পেজের স্বত্বাধিকারী সুরাইয়া মিথুন বলেন, ‘কোনো দোকান লাগছে না, ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে না, কেবল ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে যদি দুনিয়া জুড়ে ব্যবসা করা যায়, তবে বাইরে চাকরির পেছনে ছুটতে যাব কেন?’

নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্ল্যাটফরম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম—‘উই’ বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরসার প্ল্যাটফরম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।

১০ বছরের চাকরির পাট চুকিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন রাজধানীর মিরপুরের মাসুমা আক্তার। ঘরে সন্তানের লেখাপড়া দেখিয়ে এবং বাইরে কাজ করার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন তার প্রতিষ্ঠান। পরিবারে প্রবীণ শ্বশুর-শাশুড়ি, সন্তানদের সময় দিয়ে, তার ব্যবসার প্রসার ভালোই ঘটেছে।

আনোয়ারা খানম একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ পাশ করেও ভালো চাকরি পাননি। শেষে সিদ্ধান্ত নেন, চাকরিই করবেন না, চাকরি দেবেন। ঘরে বসে কেক বিক্রি থেকে শুরু করে, সুগার ফ্রি-মিষ্টি এবং ছোট অনুষ্ঠানের খাবারও সরবরাহ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, দেশব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য ছড়িয়ে দিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীবান্ধব বিপণি কেন্দ্র জয়িতা প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্সের যে জয়জয়কার, তার পেছনে রয়েছে জয়িতা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আজ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন নারী উদ্যোক্তারা। ফলে আর্থিক সচ্ছলতা পেয়ে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!