অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিসের বিধিমালা সমূহ


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১ মার্চ, ২০১৯ ৩:৪৩ : অপরাহ্ণ 657 Views

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু অগ্নিকাণ্ড আমাদের অনেক অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের লেলিহান শিখা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে ৭০টি তাজা প্রাণ। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীর মিরপুরের ভাষানটেকের সিআরপির হাসপাতালের পেছনে জাহাঙ্গীর বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ইতোমধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রিত হলেও রাজধানীর মিরপুরের ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তির ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে আট হাজারের বেশি ঘর। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৮ হাজার পরিবার। আহত অবস্থায় এক নারীকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল। জানা যায়, শেষ রাতের দিকে আগুন লাগে বস্তিতে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিটের ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বস্তির সরু গলি ও পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
সাম্প্রতিক সময়ের অগ্নিকাণ্ডের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় আমাদের অসচেতনতা কিংবা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অজ্ঞতার জন্য। তাই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে এর করণীয় সম্পর্কে সোচ্চার হতে হবে সবাইকে। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের জন্য শুরুতেই নিজের বাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টিতে নিজেকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে একক বাড়ি, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট, মেস, বোর্ডিং হাউজ, ডরমিটরি ও হোস্টেল, হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট ও ক্লাব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব কিছু নীতিমালা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—
১. ভবনের উচ্চতা ও প্রধান সড়কের প্রশ্বস্থতা এবং প্লটের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংক্রান্ত: সব প্লট ও ভবনের প্রবেশের জন্য প্রবেশ পথ থাকতে হবে এবং আবাসিক বহুতল ভবনের সামনের প্রধান সড়ক কমপক্ষে নয় মিটার প্রশস্ত হতে হবে। একই প্লটে একাধিক ভবন থাকলে দমকল বাহিনীর গাড়ি প্রবেশের সুবিধার জন্য মূল প্রবেশ পথে গেটের উচ্চতা কমপক্ষে পাঁচ মিটার হতে হবে।
২. ওয়েট রাইজার স্থাপন: ভবনে ওয়েট রাইজার থাকতে হবে। প্রতি তলার ছয়শো বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ার জন্য একটি ও অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়ার জন্য আরও একটি রাইজার পয়েন্ট থাকতে হবে।

৩. স্বয়ংক্রিয় স্প্রিং কলার স্থাপন
৪. স্থায়ী অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য পানি সরবরাহ সূত্র: এজন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থাকতে হবে। রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে থাকতে হবে।
৫. ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ এবং এটি অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।
৬. স্মোক ও হিট ডিটেক্টশন সিস্টেম: সব স্মোক ও হিট ডিটেক্টর ও এয়ার ডাম্পার এর অবস্থান নকশায় চিহ্নিত করতে হবে।
৭. ইমারজেন্সী লাইট: জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে এটি থাকতে হবে। এ পথ যাতে সহজে দেখা যায়। ভবনে ৫’শ জনের জন্য দুটি, এক হাজার জন পর্যন্ত তিনটি এবং এর বেশি লোক থাকলে চারটি সিঁড়ি রাখতে হবে। এটা শুধু আপৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত হবে।
৮. বিকল্প সিঁড়ি থাকতে হবে এবং তা বেজমেন্ট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবেনা।
৯. একাধিক লিফটের একটি বা চারটির বেশি লিফটের দুটি ফায়ার লিফট হিসেবে নির্মাণ ও নকশায় থাকতে হবে।
১০. রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ এলাকা। এটিও নকশায় থাকতে হবে।
১১. রান্নাঘরের চুলার আগুন নির্বাপণের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম থাকতে হবে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো মানার পাশাপাশি সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সচেতন থাকলেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
May 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!