প্রদীপ যেখানেই থাকুক আলো ছড়াবেই


প্রকাশের সময় :১৫ এপ্রিল, ২০১৮ ৬:২৭ : অপরাহ্ণ 619 Views

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (লামা) বান্দরবানঃ-জীবনের সব স্মৃতি মানুষ মনে রাখেনা বা রাখার মত সুযোগও নেই। চলার পথে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা মানুষ চাইলেও ভুলতে পারেনা। সবসময় স্মৃতি গুলো মনের সমুদ্রের তীরে ধাপড়ে বেড়ায়। তেমনি একটি স্মৃতির পুনচয়ণ।দিনটা ছিল ২৬ জুলাই ২০১৭ইং।বান্দরবানের লামার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের অসহায় এক মা মনোয়ারা বেগম তার পারিবারিক একটি সমস্যা নিয়ে আসলেন প্রতিবেদকের কাছে।বিষয়টা আইনীভাবে সমাধানের প্রয়োজন ছিল বলে আমি তাকে লামা থানায় যেতে পরামর্শ দিই।কেন জানি মহিলাটি থানায় যেতে ভয় পাচ্ছিল।তার অনেক আকুতি মিনুতির কারণে শেষ পর্যন্ত আমি তার সাথে থানায় গেলাম।অসহায় মা তার সমস্যাটি লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেনকে খুলে বললেন। প্রায় ৩০/৪০ মিনিট ওসি সাহেব তার সম্পূর্ণ বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনলেন।এর ফাঁকে চা-নাস্তা খাওয়ালেন।পরে একজন এসআই কে ডাকলেন এবং তাকে এই মহিলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বললেন।ওসি সাহেবের আদেশ পেয়ে এসআই যখন মহিলাটিকে সাথে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন তখন পিছন থেকে আবার এসআইকে ডাকলেন। মহিলাকে বলা হল আপনি পাশের রুমে গিয়ে বসেন। আমি তখন ওসি সাহেবের সামনে বসা।এসআইকে উদ্দেশ্যে করে ওসি সাহেব বললেন, দেখ মহিলাটি খুব গরীব।নিজের পকেট থেকে ১শত টাকা বের করে অফিসারের হাতে দিয়ে বলেন এইটা দরখাস্ত লিখা খরচ।এছাড়া আর কোন খরচ যেন মহিলার কাছ থেকে নেয়া না হয়।আর এই বিষয়টি তোমাকে (এসআই) কেন দায়িত্ব দিলাম জান? তোমার মোটর সাইকেল আছে তাই।তুমি নিজের গাড়ি করে গিয়ে তার মামলাটি পরিচালনা করবে। যদি তেল খরচের প্রয়োজন হয় তাও আমাকে বল। দরখাস্ত লিখে অভিযোগ গ্রহণ করা হল এবং রাতের মধ্যে মহিলার সমস্যাটি সমাধান হল।টাকা ছাড়া সরকারী সেবা পাওয়া যায় আমি আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম।আমি সম্পূর্ণ ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী ছিলাম।কিছুই বলিনি,শুধু হৃদয়ের গভীরে বিন¤্র শ্রদ্ধা জন্ম হল এই মহান মানুষটির জন্য।মনে মনে বললাম নিশ্চয় কোন রতœগর্ভার পবিত্র ওরসে তার জন্ম। যে মানুষ অন্যের মাকে সম্মান দেয়,তাকে ও তার পরিবারকে অবশ্যই আল্লাহ সম্মানিত করবেন। আসলে ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রকৃত চরিত্র বুঝা যায়।সে কেমন?আরো একটি ছোট ঘটনা।২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরিক্ষায় গরীব কয়েকজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে পারছিলনা টাকার জন্য।তারা প্রতিবেদকের সহায়তা কামনা করল।কোন এক অনুষ্ঠানে ওসি সাহেবকে দেখে তাকে বিষয়টি বললাম।তিনি মেধাবী শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপের সব খরচ দিলেন। আরো প্রয়োজন আছে কিনা তাও ঊনাকে জানাতে বললেন।লামা থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন যখন লামা থানায় যোগদান করলেন তখন তার পূর্ববতী কর্মস্থলের অনেক সাংবাদিকদের সাথে কথা হল। তারা তার বিষয়ে অনেক মানবিক কথা বার্তা বলেছিল।তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও আজ তা পরিষ্কার বুঝলাম। আসলে কাউকে চিনতে হলে তার সাথে মিশতে হয়।
সাংবাদিকতা করার কারণে প্রায় সময় নানান কাজে থানায় যেতে হয়।এই রকম অসংখ্য মানবিক কাজের স্বাক্ষী আমি।লামা থানার বর্তমান ওসি আনোয়ার সাহেবের কর্মকাল প্রায় ১ বছরের অধিক।লেখালেখির কারণে অনেক সময় সেবা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আমাদের কাছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়।এই সময়ে মধ্যে কখনো কেউ এসে বলতে শুনিনি ওসি সাহেব নির্যাতিত বা অসহায়দের কাছ থেকে অর্থের দাবী করেছেন বা অন্যায়ভাবে আইনী হয়রাণী করেছেন। বিশেষ করে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম সচল থাকার কারণে অনেক সামাজিক সমস্যা আইনী ভাবে না গিয়ে দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান হচ্ছে।এতে করে মামলা ও অভিযোগের পরিমাণ কমছে।যা সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম সহায়ক।বিশ্বাস করি প্রদীপ যেখানেই থাকে আলো ছড়ায়।তেমনি আপনি (ওসি-আনোয়ার হোসেন) যেখানে থাকবেন আলো ছড়াবেন। আর নিজ কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অন্ততকাল।সুস্থ,সুন্দর,উজ্জ্বল,মঙ্গলময় ও সুখী জীবন কাম্য।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
July 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!