![](https://www.chttimes.com/wp-content/uploads/2018/06/PicsArt_06-04-04.21.08.jpg)
![](https://www.chttimes.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
আজিজ পাশাঃ-একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে জোর প্রস্তুতি। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নির্বাচনী গন্ধ। রাজনীতির ময়দানে কেবল নির্বাচনী ডামাডোল। সাধারণ মানুষও নির্বাচনের হিসাব কষতে শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বর্তমান মাঠের বিরোধী দল বিএনপির অতীত এবং বর্তমান কর্মকাণ্ডের নানা দিক উঠে আসছে মানুষের কথোপকথনে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি—দুই দলই মনে করছে, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোর প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় নির্বাচনে। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হিসাব মাথায় রেখে সিটি নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে প্রধান দুই দল। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বড় শহরগুলোর এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ দেখাতে চায়, উন্নয়নের পক্ষে মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। এ ক্ষেত্রে খুলনার নির্বাচনের কৌশল কাজে লাগাতে চায় দলটি। অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, তাদের সামনে জনপ্রিয়তা প্রমাণের সুযোগ যেমন আছে, তেমনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মুখোশ উন্মোচনেরও সুযোগ আছে।
টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ খুব সহজ হবে না বলে ভোটের দুই বছর আগে থেকেই সেই বাধা পেরোতে কৌশল নিয়ে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় কোন্দল নিরসন, প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একাধিক জরিপ, তৃণমূলের মতামত গ্রহণ এবং সমালোচিত সংসদ সদস্যদের শুদ্ধ হতে সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। প্রয়োজনে জোট সম্প্রসারণের আভাস দিয়ে তিনি বলছেন, নির্বাচনে জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের কৌশলগত পরিবর্তন হতে পারে। তবে ‘শেকড়’ থেকে তারা কখনও সরবেন না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিসাব-নিকাশ পাকাপোক্ত করে মনোনয়ন দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কারণ বিএনপি অংশ নিলে একাদশ সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। ফলে গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন এমন অনেকেই পরবর্তী নির্বাচনে নৌকার টিকিট পাবেন না। এসব আসনে নতুনদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য সব নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সাংসদ এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ চালাচ্ছে দলটি। আর প্রতিমাসে দুবার করে জরিপের ফলাফল যাছাই করছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। ফলে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই জরিপনির্ভর হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা মনে করেন, সামনে তাদের দুটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এক. গত ৯ বছরের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ প্রচার করে মানুষের সমর্থন কুড়ানো।
দুই. বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী জোটের আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা দমন করে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা।
এই দুটি চ্যালেঞ্জ ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা। আর এজন্য সংবিধান সমুন্নত রেখে নির্বাচন করতে চাইছেন তারা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশলে বিএনপিকে ভোটে আনার পরিকল্পনা আছে কি না প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচনে কৌশল থাকবে জয়ের জন্য, আমরা চাই বিএনপি আসুক, ফাঁকা মাঠে আমরা গোল দিতে চাই না।”
আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই তিন নির্বাচনের আগে ২৬ জুন হবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন। এসব নির্বাচন শেষ হলেই আগস্ট থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামবে ইসি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রশ্নে দলটির অবস্থান হচ্ছে, সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। দলটি মনে করে, নির্বাচনের ফল যা-ই হোক, বিএনপি লাভবান হবে। কিন্তু, প্রতিটি নির্বাচন শেষে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস – বিএনপির এমন নীতি গণতন্ত্রের জন্য ভাল বার্তা দিচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খুলনা সিটি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। তারা মনে করছে, ভালো প্রার্থী দিয়ে, নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকলে এবং বিএনপিকে কিছুটা চাপে রাখা গেলে জয়ী হওয়া সম্ভব। একাধিক নেতা বলেন, সরকার টানা দুই মেয়াদে অনেক উন্নয়নকাজ করেছে। তারা দেশে-বিদেশে দেখাতে চায়, উন্নয়নের পক্ষে মানুষ তাদের সঙ্গে আছে।’ তবে তৃণমূলের এমন আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি দলীয় হয় কমান্ডের ইতিবাচক ভূমিকার মিশেল ঘটানোই লক্ষ্য এখন আওয়ামী লীগের।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হতে নানা চেষ্টা করবে। কিন্তু ইসির দায়িত্ব হলো কেউ যেন কারচুপি বা অন্যায় করতে না পারে এবং সবাই সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করা। ইসির সাম্প্রতিক কার্যক্রম জনগণ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আর তাই আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ইসি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন দলই চাইছে না ছেড়ে কথা বলতে। আর তাই বড় থেকে ছোট সব দল, সব জোটই নির্বাচনী সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত। নির্বাচনের বেশ কিছু দিন বাকি থাকলেও, শহর বন্দর সর্বত্রই তাই জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ।
(সাংবাদিক ও কলামিস্ট)