শিরোনাম: রোয়াংছড়িতে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনীঃ মেজর এম.এম ইয়াসিন বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ৩ হাজার ৪শ পিস ইয়াবা উদ্ধার কাপ্তাই লেকের ড্রেজিং হওয়া অত্যন্ত জরুরী-সুপ্রদীপ চাকমা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনিত হলেন অধ্যাপক থানজামা লুসাই পর্যটন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলো বান্দরবানের চার উপজেলায় অবৈধ পলিথিন ব্যবহার ও বাজার জাতকরণের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জানুয়ারিতে হর্নমুক্ত ঘোষণা করা হবে ঢাকার ১০টি রাস্তা- পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পুলিশ ও সাংবাদিকের কর্মপরিধি ভিন্ন তবে একই সুত্রে গাঁথাঃ নবাগত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ্ কাওছার

নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ে এখন সোনালি ধানের ঝিলিকঃ জুমিয়া পরিবারে চলছে ধান কাটার উৎসব


মো.আব্দুর রশিদ প্রকাশের সময় :১২ অক্টোবর, ২০২২ ১:১১ : অপরাহ্ণ 331 Views

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাহাড়ে পাহাড়ে এখন সোনালি ধানের ঝিলিক। বর্তমানে জুম ক্ষেতে ধান কাটছে জুমিয়ারা। মৌসুমের শেষদিকে চাষ হওয়া অনেক জুম ক্ষেতের ধান পাকেনি এখনো। কিন্তু অধিকাংশ পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। সুবাস ছড়াচ্ছে জুমের ফসল। জুমচাষিরা দল বেঁধে ধান কেটে ঘরে তুলছে জুমের ফসল। আবার সেসব ধান জুমেই মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াইকৃত ধান থুরংয়ে করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পাহাড়ে জুম চাষী জুমিয়ারা উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটা শুরু করেছেন। তাই পাহাড়ে পাহাড়িদের একমাত্র ভরসা হলো জুম চাষ। জুম চাষ তাদের একটি আদি প্রথা।এটি তাদের ঐতিহ্য।পাহাড়ে ডালে যুগ যুগ ধরে পাহাড়িরা বসবাস করে পিরামিড পদ্ধতিতে জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সেটা এখনো ধরে রেখেছেন জুমিয়ারা।

তারা মাঘ-ফাল্গুল মাসে জঙ্গল কাটে। সে জঙ্গল চৈত্র মাসে শুরু থেকে আগুনে পুড়ে আগাছা পরিষ্কার করে। বৈশাখে সাধারণ ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের সুগন্ধি যুক্ত ধান সহ নানা শাক- সবজি, ফলমূল ও মসল্লা জাতীয় শস্য বা ফসলের বীজ বপন বা রোপন করে থাকে। এবং ভাদ্র- আশ্বিন মাসে ধান পাকা শুরু হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও জুমে পাকা ধান বা ফসল তোলার মৌসুম বলে জানান জুমিয়ারা।
আলীক্ষ্যং মৌজার ফতই হেডম্যান পাড়ার জুমচাষি মেনসন মুরুং জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। পরিবেশ ঠিকঠাক থাকায় এ সাফল্য এসেছে। জুমধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, চিনাল আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির আবাদ হয়েছে। তিনি আরও জানান, জুমের উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে ৬-৯ মাস পর্যন্ত খাবারের জোগান পাওয়া যায়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূল ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এবার নাইক্ষ্যংছড়িতে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমে জুমে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হয়েছে জুম ক্ষেতে।

চাষিদের দাবি- জুম চাষের জন্য সার, বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা দরকার

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জুমখোলার জুমচাষি অংক্যজাই জানান, গতবারের তুলনায় এবারও ভালো ফলন হয়েছে জুমে। ভালো মানের উন্নত বীজ তারা পান না। সরকারের সহায়তাও নেই। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারলে ফলন আরও ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমানে উপজেলার ৫ ইউনিয়ন যথাক্রমে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, সোনাইছড়ি, বাইশারী, দোছড়ি ও ঘুমধুমের পাহাড়ে পাহাড়ে জুমক্ষেতে পাকা ধানে সয়লাব। যেগুলো সেই পুরনো পদ্ধতিতেই করা হয়েছে। আর এ কারণে একরপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ আরি ধান কম হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় অভিজ্ঞ মহলের।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, এবারে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩শ’ হেক্টর জুম চাষ করার কথা থাকলেও হয়েছে কম। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। উপজেলার ৫ ইউনিয়নের যেসব পাহাড়ে জুম চাষ হতো, অন্য বাগান হচ্ছে সেখানে। আর জুমিয়ারাও চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তিনি আরও জানান, জুমে একসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করে জুমিয়ারা। জুমের উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রির পাশাপাশি পরিবারের সারা বছরের খাবারের জোগান হয়। তার মতে, জুমে পুরনো ঐতিহ্য বীজের পাশাপাশি বিভিন্ন আধুনিক জাতের ধান ও সবজির বীজ রোপণ করলে লাভবান হওয়া সম্ভব।স্থানীয় জুম চাষিরা মনে করেন, সরকার জুম চাষিদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুবিধা দিলে আগামীতে জুম চাষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অধিকাংশ খাদ্য চাহিদা মিটবে। পাশাপাশি রপ্তানিও সম্ভব হবে

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!