দক্ষিণ এশিয়ায় প্রযুক্তিগত কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৭ মে, ২০১৯ ৪:৫৬ : অপরাহ্ণ 647 Views

বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক ও ছয় কোটি ৭২ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ তথা ৬ কোটি ৩১ লাখ গ্রাহকই তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এটি ব্যবহার করে থাকেন। সার্বিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে নেয়া উদ্যোগগুলোর ফল ইতিমধ্যে আমরা পেতে শুরু করেছি, যা ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে। আশা করা হচ্ছে, দেশে ২০২০ সাল শেষে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ৪৯ শতাংশে উন্নীত হবে। এই হার ২০১৬ সালের শেষে ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। এর পাশাপাশি আউটসোর্সিংমূলক কাজে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে।
আন্তর্জাতিক এক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, আইটি আউটসোর্সিং, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২১ তম। আর ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে এসে ব্র্যান্ড প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)-তে যোগ দিয়ে সফটওয়্যার রপ্তানি শুরু করে বাংলাদেশের আইটি ফার্মগুলো। সেই শুরু, তারপর অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার রপ্তানি করে আসছে। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি আলমাস কবির।
১৯৯৭ সালে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করে বেসিস। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ১১৭০টিরও বেশি। এদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বব্যাপী তাদের গ্রাহকদের সফটওয়্যার সরবরাহ করে আসছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডাটা সফটের কথা। ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহবুব জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “১৯৯৬ সালে বিশ্বজুড়ে কম্পিউটারে ‘Y2K’ সিস্টেম বাগ ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা। তখন ভারতীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো এই সমস্যার সমাধান তাদের কাছে আছে বলে ঘোষণা দেয়। তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি তারা এত বড় কাজ করতে পারে, আমরা কেন পারব না?”
২০০০ সালের শুরুর দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে ভারতের আইটি রাজধানী খ্যাত ব্যাঙ্গালোরে যান জামান। দেশটির বিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইনফোসিস’-এর অফিস ঘুরে দেখেন। দেশে ফিরে জামান প্রতিষ্ঠা করেন ডাটা সফট। স্লোগান ছিল- “আমরা সফটওয়্যার বানাই, আমরা কম্পিউটারকে অর্থবহ করে তুলি ।”
জামান বলেন, “তখন দেশে শুধুমাত্র বুয়েটেই কম্পিউটার সায়েন্স পড়ানো হতো। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে পাড়ি জমাতেন।” তাই বুয়েট পাশ করা কাউকে জামান তার প্রতিষ্ঠানের জন্য পাননি। তাই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করা শিক্ষার্থীদেরকে নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।
বহির্বিশ্বে আইটি সেবা—
বর্তমানে নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে আইটি সেবা দিয়ে থাকে ডাটা সফট। বছর তিনেক আগে আফ্রিকার কঙ্গোতে আইওটি (IoT) সেবা কার্যক্রম শুরু করে। সম্প্রতি জাপানের অন্যতম বৃহৎ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান হিটাচি’র সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে ডাটা সফট। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেস রিকগনিশন সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। সৌদি আরবের মক্কা শহরের কেন্দ্রীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পাশাপাশি, ২০১৬ সালের শেষদিকে তাদের নির্মিত প্রথম অ্যান্টিভাইরাস উন্মুক্ত করে আরেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস। ২০১৭ সালে দেশের বাজারে ছাড়ার পর গ্রাহকদের কাছ থেকে সন্তোষজনক মতামত পাওয়ার পরে ভারত এবং নেপালে রপ্তানি শুরু করে রিভ। বর্তমানে অনলাইনে ৫০টিরও বেশি দেশে গ্রাহক রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
এ ধরনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম টাইগার আইটি। নেপালের ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম তাদের তৈরি করা।
পাঁচ বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন—
আন্তর্জাতিক এক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, আইটি আউটসোর্সিং, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২১ তম। আর ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং এর তথ্যমতে, এই খাতে কাজ করেন ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বছরে তাদের সম্মিলিত আয় আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি।বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবিরের মতে, বর্তমানে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ব্লকচেইনের মতো নিত্যনতুন প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করছে। ভবিষ্যতে এই খাতের পরিধি আরও বাড়বে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন দিনের চাহিদানুযায়ী তাদের বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন এই তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা।
বেসিস জানায়, গত বছর সব মিলিয়ে আইটি খাতে বাংলাদেশের আয় প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের মধ্যে এই আয়ের পরিমাণকে বছরে পাঁচগুণ করতে আগ্রহী সরকার। আলমাস কবির মনে করেন, সরকার ফাইবার অপটিক ক্যাবলের কাজ শেষ করলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেট সহজলভ্য হবে।
এখন বেসিসের লক্ষ্য তাদের বাজারের পরিধি বাড়ানো। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ডেনমার্ক এবং আফ্রিকার দেশগুলোকে সম্ভাব্য লক্ষ্য ধরেই এগোচ্ছে তারা। এ বিষয়ে কবির বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। আমরা জাপানে একটি বাংলাদেশ ডেস্ক তৈরি করতে চাই। এর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রসারণে কাজ করব।”

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
October 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!