এই মাত্র পাওয়া :

দুর্গম চরে স্বপ্নের বিদ্যুতে খুশির জোয়ার


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১২:৪২ : অপরাহ্ণ 524 Views

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়ন দুটিতে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানকার ৩৮টি গ্রামে একে একে পৌঁছে যাচ্ছে দুর্গম চরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বিদ্যুৎ। বর্তমান সরকারের হাতে নেয়া সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে গত ৩ জানুয়ারি রামকৃষ্ণপুরের দুর্গম চরে এই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ। ওইদিন প্রথম দফায় ২২১টি বাড়িতে সংযোগের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত আরো ২০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ লেগেছে। সরকার ঘোষিত ‘মুজিব বর্ষে’ এই প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পটির চিলমারী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার উদয়নগর থেকে চিলমারী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত ৫শ মিটার সংযোগ টানা হবে নদীর তলদেশে অত্যাধুনিক সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। জলপথে তরঙ্গ সরবরাহের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি এই সাবমেরিন ক্যাবলে কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে অটোমেটিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যাতে করে নদীগর্ভে কোনো প্রাণি বা যান চলাচলে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে এবং বিদ্যুতায়িত হওয়ারও সম্ভাবনা না থাকে। অত্যাধুনিক এই সাবমেরিন ক্যাবলে কোনো কারণে সংযোগ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে সেই সঞ্চালন নির্বিঘ্ন করতে তিনটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

দুটি নদী পারাপারের ক্ষেত্রে নদীর দুই পাড়ে আধা কিলোমিটার করে বৈদ্যুতিক সংযোগের খুঁটিতে গোড়া থেকে ৫ ফুট উঁচু পর্যন্ত ইট সিমেন্টের বিশেষ ধরনের ম্যাপলিং করা হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও খুঁটিতে দৃঢ়তা রাখতে এই ম্যাপলিং এবং প্রতিটি খুঁটির দৈর্ঘ্য স্থান ভেদে ৪৫ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত রাখা হয়েছে। আর স্থান ভেদে পোলগুলোর সাপোর্টিং পোলও রাখা হচ্ছে। এসব তথ্য জানিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ দৌলতপুর জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেখভালের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে। গ্রাহকরা যেন নির্বিঘ্নভাবে সংযোগ পান সেই বিষয়ে আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। এটি একটি উন্নত ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প।

দৌলতপুর উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় দুই ইউনিয়ন রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারীর ২৪২ কিলোমিটার এলাকা প্রকল্পটির আওতাভুক্ত রয়েছে। সেখানকার দুর্গম চরাঞ্চলেের বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বিশাল জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই বিদ্যুৎ সেবা দেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে সাড়ে ৮ হাজার পরিবার বিদ্যুতের সুবিধা পাবে। এরপর বাকিদের পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে।

প্রকল্পভুক্ত বাংলাবাজার এলাকায় দুই বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন সাব-স্টেশনটির কাজ সম্পন্ন হলে ওই এলাকার মানুষ আরো উন্নত সেবা পাবে বলে আশার কথা জানিয়ে দৌলতপুর পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মির্জা কে এম তুহিন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খুবই সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সংযোগ পেতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দেয়া রসিদ ছাড়া কোনো দালাল চক্রের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ডিজিএম। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। সেচ ও শিল্প খাতে ওই এলাকার মানুষকে বিনামূল্যে দুই খুঁটি পর্যন্ত সংযোগ এবং ৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ট্রান্সফরমার দেয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে, এই দুই ইউনিয়নে বাস্তবায়িত বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব শিগগিরই ছোট ছোট শিল্পের বিপ্লব ঘটবে।

এদিকে প্রকল্পটিকে ঘিরে দালাল সিন্ডিকেটের তৎপরতা দেখা দেয়ায় কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান বাদশাহ প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না বলে আবারো সাফ জানিয়েছেন। যারা সিন্ডিকেট করে গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলছেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেেশ দিয়েছেন সংসদ সদস্য বাদশাহ। গ্রাহকদের যেন প্রতারিত হতে না হয় সে জন্য সংসদ সদস্যের নির্দেশে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণসহ কয়েক ধাপে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। চরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে বিরামহীনভাবে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর স্বপ্নের বিদ্যুৎ হাতের নাগালে পেয়ে বেজায় খুশিতে ভাসছেন প্রকল্প এলাকার লোকজন।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2025
MTWTFSS
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
আলোচিত খবর