গোপালগঞ্জে চলছে ভ্যাকসিন কারখানা স্থাপনের কাজ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ৭:৫২ : অপরাহ্ণ 223 Views

ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা গোপালগঞ্জে স্থাপনের কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে পুর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিটিউট স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।এ বছরের মধ্যে প্রকল্প পাস হলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের শুরুতে ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে জানানো হয়,ইতোমধ্যে ৫ কর্মকর্তা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভ্যাকসিন তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য পর্যায়ক্রমে অন্যরাও বিদেশে প্রশিক্ষণে যাবেন।

এসময় আরও জানানো হয়, দেশের ইতিহাসে সম্পূর্ণ নতুন এই ভ্যাকসিন তৈরি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নে আগ্রহী ৬টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে আবেদন করেছে। শিগগিরই যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হবে।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে সংসদীয় কমিটি ভ্যাকসিন তৈরি এবং গবেষণা প্ল্যান্ট দ্রুত বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করে। এছাড়া কমিটি ভ্যাকসিন তৈরি সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন কার্যক্রমও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়।

জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর কাছে প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এডিবির উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি বিষয়টি সমীক্ষার জন্য গোপালগঞ্জ পরিদর্শন করে আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা দিতে সায় দেয়।

এডিবির অর্থায়নে এনেসশিয়াল ড্রাগসের ৫ কর্মকর্তাকে ভ্যাকসিন তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণে দক্ষিণ কোরিয়া পাঠানো হয়। এডিবি প্রতিনিধি ২৪ সেপ্টেম্বর আবারও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যাবেন।

সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের কারণে সারা বিশ্বে নতুন এই রোগের ভ্যাকসিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় সংসদীয় কমিটি গত বছর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরির সুপারিশ করে।

প্রথমে বিদেশ থেকে করোনার ভ্যাকসিন এনে তা বাংলাদেশে বোতল ও মোড়কজাতকরণের চিন্তা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিটিউট স্থাপনে একটি পরিপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে কমিটি। এক্ষেত্রে কেবল করোনা নয়, সব ধরনের রোগের প্রতিশোধক টিকা উৎপাদন উপযোগী কারখানা স্থাপনের সুপারিশ করে।

কমিটি প্রাথমিকভাবে গোপালগঞ্জে অবস্থিত এসেনশিয়াল ড্রাগসের ইউনিটের সঙ্গে এটি স্থাপনের পরামর্শ দেয়। এরপরপরই ভ্যাকসিন তৈরি ও গবেষণা প্ল্যান প্রতিষ্ঠার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে। এজন্য আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তির মূল্য এবং ক্ষতিপূরণের জন্য জমির মূল্য নির্ধারণের কাজও চলমান রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এর আগে এসেনসিয়াল ড্রাগস (ইডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বৃহৎ আকারের একটি ডিপিপি প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়। গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের তৃতীয় প্রকল্পের পাশে প্রায় ৬ দশমিক ৮৫ একর জমিতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে অর্থায়নের বিষয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে একটি ডিডিপিপি পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে দুই হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এডিবি হতে পেতে প্রাক-উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপিপি) গত জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়, পরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তার মতামত প্রদান করে।

বৈঠকে জানানো হয়, নোভেল প্রোটেইন সাব-ইউনিট ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য মার্কিন কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, অর্থ বিভাগ, ইআরডি, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দেওয়া হয়। এসব মতামত সমন্বয় করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়।

কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, মুহিবুর রহমান মানিক ও মো. আমিরুল আলম মিলন অংশ নেন।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। প্রথম পর্যঅয়ে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে একনেকে প্রকল্পটি পাস হলে জানুয়ারিতে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে সব ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। এমন ব্যবস্থাই রাখা হচ্ছে। কারখানাটি স্থাপন হলে ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
October 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!